ঘোড়ার ডিম একটি অবাস্তব জিনিস। কিন্তু শিশু-কিশোর মনে ঘোড়ার ডিম বাস্তব! আসলে ঘোড়ার ডিম কথাটা আমাদের দেশে খুব প্রচলিত একটি প্রবাদ। কাউকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য কিংবা যা সম্ভব না জাতীয় কাজ বোঝাতে ঘোড়ার ডিম বলা হয়ে থাকে। ঘোড়া মূলত বাচ্চা প্রসব করে। ঘোড়া খুবই একটি উপকারী প্রাণী। ঘোড়া অনেক দ্রুত দৌড়াতে পারে। যখন গাড়ি ছিল না তখন ঘোড়াই ছিল মানুষের প্রধান বাহন। ‘পাড়লো ঘোড়া ডিম’ নিশাত সুলতানার লেখা একটি অসাধারণ গল্প। আসলে শিশু-কিশোরদের বোঝাতে গেলে বা তাদের জন্য লিখতে গেলে নিজেকেও ওদের মতো করে ভাবতে হয়। সেই সৃজন কল্পনার জায়গায় নিশাত সুলতানা একজন সফল লেখক বলা যায়। কেউ যা কখনো ভাবেনি সেই ভাবনাকে যখন গল্পে রূপ দেওয়া হয় তখন তা প্রসংশা পাওয়ার যোগ্য অবশ্যই। এই গল্পে একটা ঘোড়া হঠাৎ করেই একটা ডিম পাড়ল। সেই ডিম দেখে তো সে নিজেই অবাক! কী করবে এই ডিম নিয়ে ভাবতে লাগল সে। ভেবে ভেবে কোনো উপায় না পেয়ে সে শেয়াল রাজার কাছে ডিম নিয়ে গেল। শেয়াল রাজা ঘোড়ার ডিম দেখে বলল, ‘বেশ করেছো ডিম পেড়েছো’। এরপর সেই ডিম দেখতে হাঁস,-মুরগিসহ অনেক পশুপাখি ছুটে এলো। অবশেষে ঠিক হলো এই ডিমে তা দেবে অনেকগুলো হাঁস আর মুরগি মিলে। যেই কথা সেই কাজ। ঘোড়ার ডিম নিয়ে হাঁস-মুরগি মিলেমিশে তা দিতে লাগল। কিছুদিন বাদে সেই ঘোড়ার ডিম ফেটে একটি বাচ্চা জন্ম নিল। সবার আনন্দের আর সীমা রইল না। ঘোড়াও ছুটে এলো তার বাচ্চাকে দেখতে। যখন ঘোড়া তার বাচ্চাকে তার কাছে নিয়ে যাবে তখন মুরগি আর হাঁসের খুব মন খারাপ হলো। প্রথমে ঘোড়ার বাচ্চা ঘোড়ার মতো ডেকে উঠল। পরে হাঁস আর মুরগির মতো ডেকে উঠল। এতে হাঁস-মুরগি খুব খুশি হলো যে ঘোড়া-বাচ্চা তাদের ভুলে যাবে না। এমন মজার গল্প খুব একটা পাওয়া যায় না। ‘আগডুম-বাগডুম ঘোড়াডুম সাজে’ ছড়ার মধ্যে যে আবেদন আর আনন্দ এর অর্থ ঠিকমতো না বুঝলেও পাওয়া যায়। শিশু-কিশোর যদি পড়ার মধ্যে আনন্দ না পায় তবে তাদের পড়ানো খুবই কষ্টদায়ক হয়ে যায়। এ বইটি পড়ে শিশু-কিশোররা খুবই পুলকিত হবে ও মজা পাবে।
নিশাত সুলতানা একজন বাংলাদেশী কলামিষ্ট, শিশুসাহিত্যিক ও মানবাধিকার কর্মী। কর্মজীবনে ’নিশাত সুলতানা’ নামে পরিচিত হলেও বাবা-মা, নিকটজন ও বন্ধুবান্ধবরা ’পূরবী’ নামেই ডাকেন। জন্ম উত্তরবঙ্গের নওগাঁ জেলায়। শৈশব ও কৈশোর কেটেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নওগাঁ জেলা শহরে। পড়েছেন নওগাঁ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, নওগাঁ সরকারি কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে। বাবা এ,কে,এম, নূরুজ্জামান এবং মা সেলিমা বানুর দ্বিতীয় সন্তান তিনি। যদিও কর্মজীবনের শুরু ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক হিসেবে, পরবর্তীতে যুক্ত হন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার সাথে। তিনি কাজ করেছেন কনসার্ন ইউনিভার্সেল, সেভ দ্য চিলড্রেনের মত আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ পদে। বর্তমানে কর্মরত আছেন পৃথিবীর সর্ববৃহৎ উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকে। সাতাশতম বিসিএসে যোগদান করে তিনি সহকারি কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কিছুদিন দায়িত্বও পালন করেন। শিশুদের জন্য অদ্ভূত সুন্দর একটা পৃথিবী নির্মাণ করতে চান তিনি। তাঁর রচিত শিশুতোষ বইগুলির মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে ’নিপুর রঙিন একদিন’ ,’পুটুর বদলে যাওয়া’ ও ’কাক ও বকের একদিন’। পাঠক নন্দিত লেখিকা নিশাত সুলতানা বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সাথে জড়িত।