"মুক্তিযুদ্ধের গল্প" বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে গৌরবােজ্জ্বল ঘটনা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ। বাঙালি কখনাে স্বাধীন ছিল না। পরদেশি শাসক অথবা স্বদেশি রাজা বা নবাব কর্তৃক শাসিত হয়েছে। তারপর ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন চেপে বসে প্রায় দু’শ বছর। ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে ভারতবর্ষ স্বাধীনতা অর্জনের প্রাক্কালে ভারতের পূর্বাঞ্চলে বাঙালিরা আলাদা একটা রাষ্ট্রগঠনের চেষ্টা করেছিল। কিন্তু মুসলিম লীগ ও কংগ্রেস নেতাদের অসহযােগিতা ও বাঙালি নেতাদের অদূরদর্শিতার কারণে বাঙালির আলাদা রাষ্ট্রগঠনের স্বপ্ন অধরা থেকে যায়। বিশাল বাংলাকে খণ্ডিত করে পশ্চিম বাংলা ভারতের এবং পূর্ব বাংলা পাকিস্তানের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়। পূর্ব বাংলা নব্য স্বাধীনতার ফাঁদে আটকা পড়ে ২৩ বছর পাকিস্তানের উপনিবেশ হয়ে সাংস্কৃতিক নিপীড়ন ও অর্থনৈতিক শােষণের জাঁতাকলে পিষ্ট হতে থাকে। কিন্তু পূর্ব বাংলার মানুষ চুপ করে বসে থাকে না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ভাষার জন্য সংগ্রাম, স্বাধিকার আন্দোলন এবং সবশেষে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র লড়াই করে বাঙালি পৃথিবীর মানচিত্রে নিজেদের স্বদেশভূমি বাংলাদেশ' প্রতিষ্ঠা করে। গৌরবদীপ্ত মুক্তিযুদ্ধ আমাদের অহংকার। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখা হয়েছে অসংখ্য গান-কবিতা-ছড়া-প্রবন্ধ-ছােটগল্প। মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নানা ঘটনা এবং যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে অবক্ষয়িত মুক্তিযুদ্ধের চেতনা- এই দুই বিষয় জাগ্রত রেখে সিরাজুল ইসলাম মুনির তার অন্যান্য সাহিত্যকর্মের পাশাপাশি রচনা করেছেন অনেক মুক্তিযুদ্ধের গল্প। স্মার্ট গদ্যভাষায় লেখা সেসব গল্প থেকে ১৯টি ছােটগল্প নিয়ে প্রকাশ করা হলাে মুক্তিযুদ্ধের গল্প ।
১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জুলাই উপকূলীয় উপজেলা সুবর্ণচরের সম্রান্ত পরিবার ভূঁইয়া বাড়িতে জন্ম। শৈশব-কৈশাের কেটেছে। ফেঞ্চুগঞ্জ ও সিলেট শহরে । শিক্ষাজীবন কেটেছে ফেঞ্চুগঞ্জ এনজিএফএফ স্কুল, সিলেট সরকারি এমসি কলেজ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। সিলেট ও চট্টগ্রাম রেডিওতে সংবাদপাঠ ও উপস্থাপনা করেছেন আট বছর। বাংলাদেশ টেলিভিশনে গ্রন্থ ও প্রকাশনা বিষয়ক অনুষ্ঠান ‘বইপত্র উপস্থাপনা করেছেন এক যুগ। কর্মজীবন শুরু করেন দৈনিক গণকণ্ঠে সহসম্পাদক হিসেবে। তারপর সরকারি চাকরি কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগে। সম্প্রতি চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন। কিন্তু সচল হয়ে উঠেছেন নেশার জগৎ লেখালেখি নিয়ে। উপন্যাস, ছােটগল্প, শিশুতােষ ও কিশাের রচনা- সব মিলিয়ে প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা ৩০। প্রকাশিত হয়েছে উপন্যাসসমগ্র ২০১৫, গল্পসমগ্র ২০১৭ | ২০১৮ ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত হলাে বাংলাসাহিত্যে এযাবৎ প্রকাশিত বৃহৎ কলেবরের মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক উপন্যাস ‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে এবং মহান চীনের গৌরবােজ্জ্বল অতীত এবং চীনা জনগণের সংগ্রামের প্রেক্ষাপটে লেখা ভ্রমণ উপন্যাস ‘মহাচীনের মহাজাগরণ’ । সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতি হিসেবে অর্জন করেছেন কিউট সাহিত্য পুরস্কার, রাজশাহী সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার, পালক অ্যাওয়ার্ড, আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ সাহিত্য পুরস্কার ও বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক পরিষদ (বাসপ) পদক। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে শিক্ষায় অনগ্রসর মানুষকে শিক্ষার আলােয় আলােকিত করতে সুবর্ণচরে প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘জুবিলি হাবিবউল্যা মিয়ারহাট উচ্চ বিদ্যালয় এবং বিপুল গ্রন্থসমৃদ্ধ লাইব্রেরি বজলের রহমান ভূঁইয়া স্মৃতি পাঠাগার'। ভ্রমণের নেশা আছে। বাংলাদেশের গ্রাম, নদী, পাহাড়, সমুদ্র তার প্রিয়। ভ্রমণ করেছেন কানাডা, যুক্তরাজ্য, গণপ্রজাতন্ত্রী চীন, থাইল্যান্ড ও মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ। পিতা-নুরুল আলম ভূঁইয়া, মা-আনােয়ারা বেগম, স্ত্রীজোহরা সুলতানা। দুই পুত্র : শাহরিয়ার রাইসুল ইসলাম, শাহমান রাউফুল ইসলাম । স্বপ্ন : উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ ।