জন্মসূত্রেই মানুষ পেয়ে থাকে কিছু কিছু বিরল গুণ, যা সামান্য পরিচর্যায় দীপ্তি পায়, অসাধারণ হয়ে ওঠে। এসব গুণাবলীকে আমরা সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত প্রতিভা বলে থাকি। কবি-শিশুসাহিত্যিক সনজিত দে তেমনি একজন দীপ্তিমান মানুষ যিনি আজন্ম ধীমান, মেধা ও মননে অগ্রসর বহুমাত্রিক লেখক। কিশোরকবিতায় যেমন তিনি বিচিত্র অনুসঙ্গের কুশলী, ছড়ায় যেমন রিনিঝিনি তালের অনুপম রূপকার, গল্পেও তেমনি অসাধারণ বিষয়-বৈচিত্র, ভাষাশৈলী ও কথনে। আকাশপরির গল্প সনজিত দে’র পঞ্চম গল্পগ্রন্থ। গ্রন্থভুক্ত প্রথম গল্প ‘চারা গাছ বড়ো হয়’। গল্পটিতে গাছ যে বর্তমান ও ভবিষ্যতের জন্য কত বড় বিনিয়োগ তা তুলে ধরার পাশাপাশি একটি পরিবার কীভাবে নিজেরাই সবজির যোগান ও অর্থের সাশ্রয় করতে পারে তা ধরা হয়েছে সাবলীলভাবে। ‘যুদ্ধদিনের গল্প’ নামের গল্পটিতে গল্পকার খুব সহজভাবে রিফাত নামের এক কিশোরকে শুনিয়েছেন আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের কথা। এই রিফাতরাই আগামীর বাংলাদেশের রক্ষাকবচ, গল্পটিতে রিফাতের মাধ্যমে লক্ষ কিশোরের কাছে রক্তার্জিত স্বাধীনতা রক্ষার আশাবাদ তুলে ধরা হয়েছে। গ্রাম বাংলার এক সময়ের বহুল পরিচিত সিঁধেল চুরির ঘটনা নিয়ে সনজিত দে বানিয়েছেন তাঁর তৃতীয় গল্প ‘তিনজনে চোর ধরা’। গল্পটিতে যেমন হিউমার আছে তেমনি আছে মানবিকতা। অপরাধীকে সংশোধনের সুযোগ দেওয়ার মাধ্যমেই সম্ভব মানবিক সমাজ বিনির্মাণ। গল্পকার এই গল্পে অত্যন্ত সুন্দরভাবে সত্যটি চিত্রিত করার প্রয়াস পেয়েছেন। ‘আকাশপরির গল্প’ গ্রন্থে গ্রন্থিত হয়েছে মোট আটটি গল্প। অন্য গল্পগুলো হলো ছেলে ধরার উচিত সাজা, আকাশপরির গল্প, শেয়ালের পালিয়ে বাঁচা, তালতলায় ভ‚ত, বিড়ালের শিক্ষা। এ গল্পগুলো নামেই শুধু অনন্যতার দাবি রাখে না, নানা মজার ভাবনা ও গল্পকারের টইটম্বুর রসবোধের কারণে কিশোর মনে বইয়ে দেবে আনন্দ সাম্পান। আমাদের নিশ্চিত বিশ্বাস সনজিত দে’র অন্য বইগুলোর মতো এই গল্পের বইটিও সবার ভালো লাগবে।