আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধকালে, নওগাঁ জেলার উত্তর সীমান্তের ৩ মাইল ওপারে 'মধুপুর মুক্তিযোদ্ধা রিসেপশন ক্যাম্পে (সেক্টর-৭)-এ আগস্ট-ডিসেম্বর পর্যন্ত অবস্থান ও প্রশিক্ষণ গ্রহণকারি ১০-১২ বছর বয়সী চার জন কিশোরের অন্যতম ছিলেন সাজিদ হোসেন (রুশো)। ক্যাম্পের কিশোরদের (সোহেল, গুটিল, শরীফ ও সাজিদ) প্রাথমিক অবস্থান ছিল 'বার্তাবাহক'। এছাড়া তারা গেরিলা মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে বসে তাদের অস্ত্রশস্ত্রের যত্ন নেয়া, ম্যাগাজিনে গুলি ভরা ও প্রস্তুতি এবং ক্যাম্পের হাসপাতালে ছোটখাট সাহায্যের কাজেও নিয়োজিত ছিল। বিশেষত, গেরিলা অপারেশনে গমনের পূর্বে গেরিলা দলের ব্রিফিং সেশনে তাদের উৎসাহভরে অংশ নেয়ার বিষয়টি ছিল লক্ষণীয়। এই সুযোগে গেরিলা যুদ্ধকৌশল, নিরাপত্তা এবং গ্রেনেড, রাইফেল, এসএমজি, এলএমজি ইত্যাদি অস্ত্রশস্ত্র চালনার কলাকৌশলও রপ্ত করেছিল, সাজিদ হোসেনসহ, এই চারজন কিশোর মুক্তিযোদ্ধা। ক্যাম্পের দিনগুলো নিয়ে সাজিদ হোসেন রচিত 'একাত্তরের প্রমিথিউস' প্রকাশিত হয় ২০০০ সনে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, ২০০৩ সনে এই বইটির জন্য সাজিদ হোসেনের বিরুদ্ধে বরখাস্তাদেশ (তৎকালীন প্রধান প্রকৌশলী, বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি) জারি করা হয়! এ সম্পর্কে এই বইয়ে 'প্রমিথিউসের প্রত্যাবর্তন' পর্বে বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে। সমৃদ্ধ কলেবরে এবং নতুন নামে 'একাত্তরের প্রমিথিউস'-এর দ্বিতীয় সংস্করণ 'ক্যাম্পের কিশোর (২০১৯)' এবং তৃতীয় সংস্করণ 'ক্যাম্পের কিশোর (২০২৪)' মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গ্রন্থপ্রেমীদের জন্য স্বতস্ফূর্তভাবেই অবশ্যপাঠ্য। স্মরণ রাখা প্রয়োজন যে, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে এইসব নবীন প্রজন্মই সক্রিয়ভাবে এগিয়ে আসতো সম্মুখসমরে। সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে রিক্রুট করার জন্য ক্যাম্প কর্তৃপক্ষের আগ্রহ থাকলেও, শুধুমাত্র কমবয়সী হওয়ার কারণে সে পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। বয়সের প্রেক্ষিতে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে এসব কিশোরদের অংশগ্রহণ ও অবদান স্বীকৃতির দাবি রাখে। অতএব, সাজিদ হোসেন-সহ এই চারজন কিশোরের 'কিশোর মুক্তিযোদ্ধা' হিসেবে বিবেচিত হওয়ার দাবি স্বতস্ফূর্ত। *প্রয়াত মো: আবদুল জলিল, মুক্তিযুদ্ধ সংগঠক, সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ- এর নেতৃত্বে স্থাপিত ও পরিচালিত। ।। নৌপ্রকৌ. ড. সাজিদ হোসেন আইএমও (ইউএন) মেরিটাইম অ্যামব্যাসেডর কিশোর মুক্তিযোদ্ধা, সেক্টর-৭ সাজিদ হোসেন একজন সৌখিন লেখক; বিষয়: মুক্তিযুদ্ধ, সমুদ্র, জাহাজ চলাচল, কল্প-বিজ্ঞান এবং তথ্য-প্রযুক্তি। প্রকাশনা ২৬টি গ্রন্থ, ৪০টি গবেষণাপত্র এবং প্রায় ২৫০টি নিবন্ধ। পেশাগতভাবে, যুক্তরাজ্য ইঞ্জিনিয়ারিং কাউন্সিলের স্বীকৃতিতে 'চার্টার্ড ইঞ্জিনিয়ার', ইনস্টিটিউট অব মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং, সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (লন্ডন) স্বীকৃতিতে 'চার্টার্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ার' ও 'কাউন্সিল মেম্বার', জাতিসংঘের অঙ্গসংস্থা ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশনের (লন্ডন) একজন 'আইএমও মেরিটাইম অ্যামব্যাসেডর', জাতিসংঘের আইএমও পরিচালিত ওয়ার্ল্ড মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির (সুইডেন) বোর্ড অব গভর্নসের একজন 'গভর্নর', আন্তর্জাতিক সমুদ্রগামী জাহাজের প্রধান প্রকৌশলী, বাংলাদেশ মেরিন একাডেমির কমান্ড্যান্ট (২০০৯-২০২৩) এবং মহান মুক্তিযুদ্ধকালে ৭ নম্বর সেক্টরে 'মধুপুর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পের' একজন 'কিশোর মুক্তিযোদ্ধা' (বয়স ১১/১২) সমুদ্রজীবনে [১৯৮০-১৯৯৩] ভ্রমণ করেছেন প্রায় ৬০টি দেশ। ১৯৯৩ থেকে কর্ণফুলীর মোহনায় অবস্থিত বাংলাদেশ মেরিন একাডেমির প্রশিক্ষণে নিয়োজিত এবং একাডেমির কমান্ড্যান্ট (২০০৯-২০২৩)। অধ্যয়ন করেছেন সেলিম-নাজির হাইস্কুল (পাবনা), রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ, বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি (চট্টগ্রাম), সাউথ টাইনসাইড কলেজ (যুক্তরাজ্য) এবং ওয়ার্ল্ড মেরিটাইম ইউনির্ভাসিটিতে (সুইডেন); পেশাগত সম্মানসূচক স্বীকৃতি হিসাবে অর্জন করেছেন ডিএসসি ইন মেরিটাইম এডুকেশন।