”কিতাবুল ফিতান” বইটির সম্পর্কে কিছু কথাঃ সকল প্রশংসা তাে কেবল আল্লাহ -র জন্যই, যিনি অযােগ্যকে ব্যবহার করেও কাজ নেন। সালাত ও সালাম বর্ষিত হােক আমাদের নবি মুহাম্মাদ ও তাঁর পরিবার ও সাহাবিগণের ওপর। “কিতাবুল ফিতান” গ্রন্থটিকে ফিতনা বিষয়ক এনসাইক্লোপিডিয়া বলা যায়। কালজয়ী অমর গ্রন্থটি সংকলন করেন ইমাম নুআইম ইবনু হাম্মাদ ই। তিনি ছিলেন দ্বিতীয় হিজরি শতকের শেষের দিককার আহলুস সুন্নাহ্র একজন সংগ্রামী ইমাম। ফিতনায়ে মুতাযিলা, জাহমিয়া ও মুরজিয়ার সময় যিনি ছিলেন সুন্নাহর উপর পাহাড়ের মতাে অবিচল। জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত অবিচল থাকেন ফিতনার মােকাবিলায় এবং ফিতনার মােকাবিলায় বন্দি অবস্থায়-ই শাহাদাতের অমীয় সুধা পান করেন। “কিতাবুল ফিতান” বইটি মূলত ফিতনা সংক্রান্ত হাদিসের রেফারেন্স বুক। যাতে লেখক তাঁর থেকে রাসুল se ও তাবিয়ি, তাবি-তাবিয়ি পর্যন্ত সনদ উল্লেখ করেছে। ফিতনা বিষয়ক রাসুল -এর জবাননিসৃত বাণী ও সাহাবি, তাবিয়ি, তাবি-তাবিয়িদের কওল-আমল এখানে সন্নিবেশিত করা হয়েছে। হাদিসের পরিভাষা অনুযায়ী সাহাবিদের কওল-আমলকে বলা হয় মাওকুফ হাদিস। আর তাবিয়িদের (কওল-আমল) হাদিসকে বলা হয় মাকতু। আর যে হাদিস বর্ণনা পরম্পরায় রাসুল এ পর্যন্ত পৌঁছেছে, তাকে বলা হয় মারফু হাদিস। হাদিসের বর্ণনাধারাকে সনদ বলে। আর এই সনদ দ্বীনের অংশ। আমাদের ও পূর্ববর্তীদের মাঝে সনদের এই সিঁড়ি মূলত হাদিসের শুদ্ধতা যাচাইয়ের জন্য। রাসুল ) থেকে যাঁরা আমাদের পর্যন্ত হাদিসটি বর্ণনা করেছেন তাদেরকে রাবি বা বর্ণনাকারী বলা হয়। আর এই রাবি বিবেচনায় হাদিস সহিহ ও যয়িফ হয়ে থাকে। আমরা বারবার বিষয়টি প্রত্যক্ষ করেছি, “কিতাবুল ফিতান” গ্রন্থের হাদিস তাহকিকের পর অধিকাংশ হাদিস-ই যয়িফ বা দুর্বল প্রমাণিত হয়। আবার কোন কোন হাদিস জাল বা মাতরুক প্রমাণিত হয়। এ থেকে অনেকেই একটি চিন্তা বিভ্রাটে আটকা পড়ে যায় যে—আরে সব হাদিস-ই দেখছি যয়িফ! এগুলাে কিভাবে আমলযােগ্য হবে? এগুলাে কি গ্রহণযােগ্য? এগুলাে কি দলিলযােগ্য? আসলে বিষয়টি নিয়ে অনেক পাঠককেই নাজেহাল অবস্থায় পড়তে দেখে আমরা বিষয়টি বিস্তারিত আকারে কয়েকটি মুলনীতির আলােকে আলােচনা করার চেষ্টা করবাে। বি-ইজনিল্লাহ।
ইমাম নুআইম ইবনু হাম্মাদ ছিলেন দ্বিতীয় হিজরি শতকের শেষের দিককার আহলুস সুন্নাহর একজন সংগ্রামী ইমাম। তিনি ছিলেন ইমাম বুখারি রহ.-এর উস্তাদ। হাদিসের তলবে তিনি ইরাক, হিজায প্রভৃতি অঞ্চল ভ্রমণ করেন। অবশেষে মিসরে গিয়ে স্থায়ী হন। হাদিসশাস্ত্রে ব্যাপক খেদমত আঞ্জাম দেন। মুতাযিলা, জাহমিয়া ও মুরজিয়াদের ফিতনার সময় সুন্নাহ্র উপর তিনি ছিলেন পাহাড়ের মতো অবিচল। খলিফা মুতাসিম তাকে মুতাযিলা মতবাদ গ্রহণের আহ্বান জানান। তিনি অস্বীকার করেন। ফলে তাকে কারাবন্দি করা হয়। আর বন্দি অবস্থায়ই তিনি ২২৮ হিজরিতে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর পর যালিমরা তার লাশ কাফন-দাফন, জানাযা পর্যন্ত করার সুযোগ দেয়নি। বরং একটা অন্ধকার গর্তে তার লাশ নিক্ষেপ করা হয়। মৃত্যুর পূর্বে তার শেষকথা ছিল, ‘অবশ্যই আমি আল্লাহর সামনেও এদের বিরুদ্ধে বিবাদ করবো।’ [তারিখু বাগদাদ : ১৩/৩১৩]