"কিতাবুল ফিতানের লেখা- ১" বইয়ের কিছু কথাঃ বর্তমান যুগটি ফিতনার। যেন অন্ধকার রাতের মত একেকটা ফিতনা আমাদের গ্রাস করে নিচ্ছে। আমাদের ব্যক্তিগত জীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন, রাষ্ট্রীয় জীবন ও আন্তর্জাতিক জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে রয়েছে ফিতনার আনাগোনা। কেউ যদি ফিতনা সম্পর্কেই না জানে, তবে সে কীভাবে নিজেকে বাঁচাবে ফিতনা থেকে? কীভাবে বাঁচাবে পরিবার-পরিজন ও সমাজকে? আর শেষ যামানার ফিতনাগুলো এতোই ভয়াবহ যে– একজন লোক দিনের প্রারম্ভে মুসলিম থাকবে, কিন্তু দিন শেষে সে পরিণত হবে কাফিরে। হায় আফসোস! আমাদের আশপাশে এতোই ঈমান বিধ্বংসী আসবাবের ছড়াছড়ি, কিন্তু আমাদের মধ্যে কোন সচেতনতা নেই। আমাদের মধ্যে ভর করে আছে গাফলত, অলসতা ও উদাসীনতা। প্রিয় ভাই ও বোনেরা! ফিতনা সম্পর্কে জানুন ও সতর্ক হোন। তাকিয়ে দেখুন, বিশ্বের কুফরিশক্তি কীভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে আসন্ন সংকটকে সামনে রেখে। কীভাবে তারা তৈরি হচ্ছে মুহাম্মাদে আরাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শরীয়ত ও তাঁর আশিকদের মিশনের সাথে মোকাবেলা করতে! আমাদেরকে রাসূলে কারীম (সাঃ) ১৪শ বছর আগে ফিতনা সম্পর্কে সচেতন করেছেন; আর আমরা এখনো ঘুমিয়ে আছি গাফলতের চাদর মুড়িয়ে। আমরা এখনো স্বপ্ন দেখছি দুনিয়ার ভোগ-বিলাস ও সুখ-সমৃদ্ধি নিয়ে! অথচ ফিতনা আমাদের দরজায় কড়া নাড়ছে। অনূদিত_বইটির_বিশেষ_বৈশিষ্ট্যঃ ১। বইয়ের শুরুতে হাদীস শাস্ত্র নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু আলোচনা আছে। যা একজন প্রাথমিক সত্যানুসন্ধানী পাঠকের আত্মার খোরাক হবে। ২। হাদীস শাস্ত্রের উৎপত্তি, ক্রমবিকাশ, হাদীস শাস্ত্রের পরিভাষার ব্যাখ্যা প্রভৃতি বিষয়গুলোর সাবলীল খোলাসা উল্লেখ করা হয়েছে। ৩। নুআইম বিন হাম্মাদের উপর আরোপিত অভিযোগের বাস্তবতা ও তার জবাব চমৎকারভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। ৪। প্রতিটি হাদীসের মান, ক্ষেত্র বিশেষে রাবীদের পর্যালোচনা উল্লেখ করা হয়েছে। ৫। অস্পষ্ট অর্থ ও ইঙ্গিতবহ বর্ণনার সাথে যথাযথ ব্যাখ্যা উপস্থাপন করা হয়েছে।
ইমাম নুআইম ইবনু হাম্মাদ ছিলেন দ্বিতীয় হিজরি শতকের শেষের দিককার আহলুস সুন্নাহর একজন সংগ্রামী ইমাম। তিনি ছিলেন ইমাম বুখারি রহ.-এর উস্তাদ। হাদিসের তলবে তিনি ইরাক, হিজায প্রভৃতি অঞ্চল ভ্রমণ করেন। অবশেষে মিসরে গিয়ে স্থায়ী হন। হাদিসশাস্ত্রে ব্যাপক খেদমত আঞ্জাম দেন। মুতাযিলা, জাহমিয়া ও মুরজিয়াদের ফিতনার সময় সুন্নাহ্র উপর তিনি ছিলেন পাহাড়ের মতো অবিচল। খলিফা মুতাসিম তাকে মুতাযিলা মতবাদ গ্রহণের আহ্বান জানান। তিনি অস্বীকার করেন। ফলে তাকে কারাবন্দি করা হয়। আর বন্দি অবস্থায়ই তিনি ২২৮ হিজরিতে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর পর যালিমরা তার লাশ কাফন-দাফন, জানাযা পর্যন্ত করার সুযোগ দেয়নি। বরং একটা অন্ধকার গর্তে তার লাশ নিক্ষেপ করা হয়। মৃত্যুর পূর্বে তার শেষকথা ছিল, ‘অবশ্যই আমি আল্লাহর সামনেও এদের বিরুদ্ধে বিবাদ করবো।’ [তারিখু বাগদাদ : ১৩/৩১৩]