বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু একসূত্রে গাঁথা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি। মহান মুক্তিযুদ্ধের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে রুধিরত বাংলাদেশের জন্ম হয়। বাংলাদেশের জন্মের সঙ্গে জড়িয়ে আছে কোটি কোটি মানুষের ত্যাগের কাহিনি ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অতুলনীয় সংগ্রামের স্মৃতি। স্বাধীন স্বদেশে জনকের পদধ্বনি’ কবিতাগ্রন্থে মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু-গবেষক বীর মুক্তিযোদ্ধা মোনায়েম সরকারের ছাব্বিশটি কবিতা মুদ্রিত হলো। এই কোমল-কঠিন কবিতাগুলোয় মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ও বৈশ্বিক বিষয়াবলি স্থান পেয়েছে। প্রতিটি কবিতাই বিষয় ও উপস্থাপনায় ভিন্নতার। দাবিদার। দুর্বোধ্য আধুনিক কবিতার কলঙ্ক এতে নেই। সহজেই এই কবিতাগুলো পাঠকের আবেগের সঙ্গে সাড়া দিয়ে উঠবে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষে এমন একটি গ্রন্থ প্রকাশ কবিতাপ্রেমীদের জন্য সুসংবাদ বলেই মনে করি। স্বাধীন স্বদেশে জনকের পদধ্বনি, মোনায়েম সরকারের প্রথম কবিতাগ্রন্থ হলেও পাঠক এই গ্রন্থ পাঠ করে ভালো কবিতা পড়ার নির্মল আনন্দ পাবেন।
রাজনীতিক, কলাম লেখক ও গবেষক মোনায়েম সরকার শতাধিক গ্রন্থের প্রণেতা ও সম্পাদক। তিনি শুধু গ্রন্থ প্রণয়ন ও সম্পাদনাই নয়, বাংলাদেশের। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ছয়টি থিমেটিক ম্যাপ ও বাইশ পর্বে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেন। মোনায়েম সরকার গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ফর ডেভেলপমেন্ট রিসার্চের (বিএফডিআর)। মহাপরিচালক বাংলা একাডেমি কর্তৃক দুই খণ্ডে প্রকাশিত বঙ্গবন্ধুর জীবনীগ্রন্থ সম্পাদনা করে অনন্য ভূমিকা রেখেছেন। মুক্তিযুদ্ধসহ এদেশের বিভিন্ন গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল আন্দোলনে তার রয়েছে। উল্লেখযোগ্য ভূমিকা বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তিকে পুনর্গঠন করার ক্ষেত্রে দেশে-বিদেশে অবস্থান করে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক জগতে এ ভূমিকার স্বীকৃতিস্বরূপ বিভিন্ন পদকে ভূষিত হয়েছেন তিনি। ২০১৩ সালে বাংলা একাডেমি তাঁকে ফেলোশিপ দিয়ে সম্মানিত করেছেন। জীবনের দীর্ঘ সময় তিনি রাজনীতির সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। বর্তমানে তিনি লেখালেখি ও গবেষণার কাজে নিয়োজিত । মোনায়েম সরকার ১৯৪৫ সালের ৩০ মার্চ কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার থানার ফতেহাবাদ গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
মােনায়েম সারকার ১৯৪৫ সালের ৩০ শে মার্চ কুমিল্লা জেলার দেবীদ্বার থানার ফতেহাবাদ গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর রাজনীতিতে হাতে খড়ি স্কুল জীবন থেকে । স্কুল ক্যাপটেন হিসাবে তিনি তখন কার ছাত্র আন্দোলনে জড়িত হয়ে পড়েন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফলিত পদার্থবিদ্যায় ১৯৬৭ সালে কৃতিত্বের সাথে এম.এস.সি, ডিগ্রি লাভ করার পরও বাম রাজনীতির টানেই তিনি সার্বক্ষণিক রাজনৈতিক কর্মরি জীবন বেছে নেন। তিনি ছাত্র ইউনিয়ন, কমিউনিস্ট পার্টি, ন্যাপ ও বাকশালের রাজনীতিতে উল্লেখযােগ্য অবদান রাখেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যােগদান করেন । বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিতান ও প্রযুক্ত বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ছাড়াও সংস্কৃতি ও সাহিত্যক্ষেত্রেও তার পদচারণা অবারিত। তিনি উদীচীর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত লিখে থাকেন। তার লেখায় সমসাময়িক চলমান রাজনীতির বিষয়াদি প্রাধান্য পায় । তাঁর রচিত উল্লেখযােগ্য গ্রন্থগুলি হলাে : বাংলাদেশে বিপ্লবী গণতন্ত্রীদের উত্থান অনিবার্য (১৯৮৭), বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও গণতন্ত্র বিকাশে ঐক্য অপরিহার্য (১৯৯১), ইতিহাসের আলােকে বাঙালি জাতীয়তার বিকাশ ও বঙ্গবন্ধু (১৯৯২), জাতীয় বিকাশের মূলস্রোত বনাম তৃতীয় ধারা (১৯৯২), গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠান বামপন্থীদের করণীয় (১৯৯২), বামপন্থীদের সঙ্কট ও বাংলাদেশের রাজনীতি (১৯৯৩), বাংলাদেশের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস (১৯৯৬), বহতা নদীর মত আওয়ামী লীগ (২০০০), ও এক রাজনৈতিক কর্মীর প্রতিচ্ছবি (২০০৩), যুক্তফ্রন্ট থেকে মহাজোট (২০০৭), জাগাে বাঙালি কানঠে সবায় (২০০৭), রাজনীতির চালচিত্র (২০০৮) তার সম্পাদিত উল্লেখযােগ্য গ্রন্থগুলাে হলাে : রক্তমাখা বুক জুড়ে স্বদেশের ছবি (১৯৮২), ভাষা আন্দোলন ও বঙ্গবন্ধু (১৯৯৪), মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব (১৯৯৫), জাতীয় চার নেতা স্মারকগ্রন্থ (১৯৯৬), বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাস (যৌথভাবে) (১৯৯৭), স্বাধীনতার রজত জয়ন্তী স্মারকগ্রন্থ (১৯৯৭), শেখ মুজিব একটি লাল গােলাপ (১৯৯৮), বাঙালি বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু (২০০০), বাঙালির কণ্ঠ (২০০১), স্বাধীনতা বিরােধী চক্রের বিরুদ্ধে যুক্তফ্রন্ট ।। চুয়ান্নর অভিজ্ঞতা (৫৪-র নির্বাচনের অপ্রকাশিত দলিল), জেগে ওঠার সময়। এখনই (২০০৭), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান : জীবন ও রাজনীতি (২০০৮),। মােনায়েম সরকারের নির্বাচিত রাজনৈতিক রচনা (২০০৯) ইত্যাদি। বর্তমানে তিনি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ফর ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ-এর প্রতিষ্ঠাতা মহাপরিচালক।