বর্তমান বিশ্বে মুসলিমদের অবস্থা দেখে মনে হয় তারা ধনে-মানে, জ্ঞানে-বিজ্ঞানে, গুণে, শক্তি-সামর্থ্যে সকল দিকেই দরিদ্র-দুর্বল ও অসহায়। শুধু তাই নয়, অন্যান্য জাতি দ্বারা তারা চরমভাবে নির্যাতিত। পৃথিবীতে তাদের সম্মানের কোনো আসনই নেই। কোনোদিকেই তাদের অগ্রগতি ও উন্নতি নেই। মুসলিম নামক একটা জাতি বিশ্বের মৃতের মতো পড়ে আছে নির্জীব নিষ্প্রাণ।
মুসলিমদের এমন দুর্বল ও হীন অবস্থায় পড়ে থাকার তো কথা নয়। যে জাতি সৃষ্টির উদ্দেশ্য ছিল সারা দুনিয়াতে তারা জ্ঞান-বিজ্ঞানের মহিমা ও সভ্যতার প্রচার করবে, পৃথিবীকে তারা শাসন করবে, আল্লাহর অসামান্য ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করবে। আজ কেন তারা এতো অসহায় ও দুর্বল! কেন তারা আজ এতো বেশি অত্যাচারিত ও নিগৃহীত? পূর্বেও কি তাদের অবস্থা এমনই ছিল?
না। কখনোই না। আর এর জ্বলন্ত সাক্ষী মুসলিমদের গৌরবময় অতীত। আরবের নিরক্ষর মরুচারীরা আল্লাহর কালাম ধারণ করে পৃথিবীর শাসক হয়েছিলেন। পৃথিবীর মানুষকে তারা শিক্ষা সভ্যতা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের পাঠদান করেছিলেন। আল্লাহর অসামান্য মহিমা ও কর্তৃত্ব এবং ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন দুনিয়ায়। প্রকৃতপক্ষে আধুনিক বিশ্বের শিক্ষা সভ্যতা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের সকল বিভাগেই তারা রেখে গেছেন অপরিসীম অবদান।
‘বিশ্বসভ্যতায় মুসলিমদের অবদান’ মিসরের প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ ড. রাগিব সারজানি রচিত এমনই একটি অনবদ্য গ্রন্থ যেখানে খুবই প্রামাণ্য ও সাবলিলভাবে উঠে এসেছে মুসলিমদের অবদানগুলো। আজকের এই আধুনিক বিশ্বায়নের কী কী অবদান রেখে গেছেন মুসলিম মনীষীরা।
Dr. Rageb Sarjani জন্ম: ১৯৬৪ঈ. আল মুহাল্লা কুবরা, মিশর। ড. রাগেব সারজানী মিশরের বিশিষ্ট ইসলামপ্রচারক, ইতিহাসবিদ ও একজন আধুনিক আরবলেখক। পেশায় মূলত তিনি একজন ডাক্তার। তবে ডাক্তারি পেশার পাশাপাশি ইসলামী ইতিহাসের গভীর গবেষণা বর্তমান পৃথিবীতে তাকে একজন বিশিষ্ট ইসলামী ইতিহাসবিদ হিসেবে পরিচিত করেছে। ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করার পর পবিত্র কুরআনুল করীম হিফজ করেন। ইসলামের প্রতি আস্থা ও ভালোবাসা, ইসলামের ইতিহাসের প্রতি দরদ ও শ্রদ্ধা-তার চোখের তারায় যে আগামীর স্বপ্ন আঁকে-সেই স্বপ্ন বিশ্বময় ছড়িয়ে দিতেই তার লেখালেখি। এই স্বপ্ন ছবি হয়ে উড়ে বেড়ায় তার রচনার ছত্ৰে ছত্ৰে | শিক্ষা তিনি ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদ থেকে ইউরোসার্জারি বিষয়ে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে পবিত্র কুরআনুল করীম হিফজ করেন। কর্মক্ষেত্র অধ্যাপক : মেডিসিন অনুষদ, কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়,সদস্য : ইন্টারন্যাশনাল মুসলিম উলামা পরিষদ,সদস্য : মানবাধিকার শরীয়া বোর্ড, মিশর,সদস্য : আমেরিকান ট্রাস্ট সোসাইটি ,প্রধান : ইতিহাস বিভাগ, ইদারাতুল মারকাযিল হাজারা, মিশর রচনাবলি ইতিহাস ও ইসলামী গবেষণা বিষয়ে এ পর্যন্ত তার ৫৬টি মূল্যবান গ্ৰন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য— কিসসাতুত তাতার (তাতারীদের ইতিহাস),কিসসাতু উন্দুলুস (স্পেনের ইতিহাস),কিসসাতু তিউনুস (তিউনেসিয়ার ইতিহাস) আর রহমা ফি হায়াতির রসূল মা'আন নাবনী খায়রা উন্মাতিন প্রভৃতি।