সৎ ও দূরদর্শী রাজনীতিক, সত্যসন্ধ লেখক এবং পরোপকারী মানুষ হিসেবে মোনায়েম সরকারকে বাংলাদেশে এবং বাংলাদেশের বাইরে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেয়ার কিছু নেই। কিছু কিছু মানুষ থাকেন যারা নিজস্ব প্রতিভায় ও প্রচেষ্টায় দেশ-জাতি-পৃথিবীকে আপাদমস্তক ঋণী করে রাখেন। মোনায়েম সরকারও আপন মেধা ও কর্ম। দ্বারা সৃষ্টি করেছেন কিংবদন্তিতুল্য জীবনালেখ্য। আমার রাজনৈতিক জীবনে মুক্তিসংগ্রাম ও বঙ্গবন্ধু নামক আত্মজীবনী গ্রন্থে অকপট মোনায়েম সরকারকে আরো নিবিড় ও নিরাভরণভাবে আবিষ্কার করা যাবে । জানা যাবে বাংলাদেশের জন্ম ও বেড়ে ওঠার অনেক গোপন কথা । মহাকাব্যের কাহিনী যেমন স্বর্গ-মর্ত্য ও পাতালভেদী হয় অর্থাৎ সুবিস্তৃত আখ্যান থাকে, তদ্রুপ মহাকাব্যিক জীবনের অধিকারী মোনায়েম সরকারও তার জীবনকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখেছেন | দেশ-বিদেশের নানান জায়গায় ও নানান ঘটনার। সঙ্গে। শুধু গল্প বা একজন ঋদ্ধিমানের জীবন কাহিনী বলাই এ গ্রন্থের উদ্দেশ্য নয়- এ গ্রন্থটি একই সঙ্গে আত্মজীবনী ও নির্ভুল তথ্য সমৃদ্ধ। ধারাবাহিক ইতিহাস। একই সঙ্গে জীবন-কর্ম ও ইতিহাসকে আশ্রয় করলে সেই গ্রন্থ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পাঠকের মনোযোগ ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়, কিন্তু মোনায়েম সরকারের পাঠক ও অনুরাগীগণ জানেন- তার লেখার জাদু এতটাই আবেগ-সঞ্চারী যে ব্যর্থতাও সাফল্যে রূপান্তরিত হয়। মোনায়েম সরকারের আত্মজীবনী একটি অসামান্য ‘আকরগ্রন্থ’ বলেই পাঠকের কাছে প্রতীয়মান হবে । পাঠকগণ এ গ্রন্থে শ্রমপ্রিয়, রুচিশীল, নির্লোভ, । সাহসী, আপসহীন, সুকথক মোনায়েম সরকারের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের পাশাপাশি বাংলাদেশের অলেখা ইতিহাস আবিষ্কার করতে পারবেন, পরিচয় পাবেন দেশ-বিদেশের আরো অনেক খ্যাতিমান ব্যক্তিত্বের ।
মােনায়েম সারকার ১৯৪৫ সালের ৩০ শে মার্চ কুমিল্লা জেলার দেবীদ্বার থানার ফতেহাবাদ গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর রাজনীতিতে হাতে খড়ি স্কুল জীবন থেকে । স্কুল ক্যাপটেন হিসাবে তিনি তখন কার ছাত্র আন্দোলনে জড়িত হয়ে পড়েন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফলিত পদার্থবিদ্যায় ১৯৬৭ সালে কৃতিত্বের সাথে এম.এস.সি, ডিগ্রি লাভ করার পরও বাম রাজনীতির টানেই তিনি সার্বক্ষণিক রাজনৈতিক কর্মরি জীবন বেছে নেন। তিনি ছাত্র ইউনিয়ন, কমিউনিস্ট পার্টি, ন্যাপ ও বাকশালের রাজনীতিতে উল্লেখযােগ্য অবদান রাখেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যােগদান করেন । বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিতান ও প্রযুক্ত বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ছাড়াও সংস্কৃতি ও সাহিত্যক্ষেত্রেও তার পদচারণা অবারিত। তিনি উদীচীর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত লিখে থাকেন। তার লেখায় সমসাময়িক চলমান রাজনীতির বিষয়াদি প্রাধান্য পায় । তাঁর রচিত উল্লেখযােগ্য গ্রন্থগুলি হলাে : বাংলাদেশে বিপ্লবী গণতন্ত্রীদের উত্থান অনিবার্য (১৯৮৭), বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও গণতন্ত্র বিকাশে ঐক্য অপরিহার্য (১৯৯১), ইতিহাসের আলােকে বাঙালি জাতীয়তার বিকাশ ও বঙ্গবন্ধু (১৯৯২), জাতীয় বিকাশের মূলস্রোত বনাম তৃতীয় ধারা (১৯৯২), গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠান বামপন্থীদের করণীয় (১৯৯২), বামপন্থীদের সঙ্কট ও বাংলাদেশের রাজনীতি (১৯৯৩), বাংলাদেশের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস (১৯৯৬), বহতা নদীর মত আওয়ামী লীগ (২০০০), ও এক রাজনৈতিক কর্মীর প্রতিচ্ছবি (২০০৩), যুক্তফ্রন্ট থেকে মহাজোট (২০০৭), জাগাে বাঙালি কানঠে সবায় (২০০৭), রাজনীতির চালচিত্র (২০০৮) তার সম্পাদিত উল্লেখযােগ্য গ্রন্থগুলাে হলাে : রক্তমাখা বুক জুড়ে স্বদেশের ছবি (১৯৮২), ভাষা আন্দোলন ও বঙ্গবন্ধু (১৯৯৪), মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব (১৯৯৫), জাতীয় চার নেতা স্মারকগ্রন্থ (১৯৯৬), বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাস (যৌথভাবে) (১৯৯৭), স্বাধীনতার রজত জয়ন্তী স্মারকগ্রন্থ (১৯৯৭), শেখ মুজিব একটি লাল গােলাপ (১৯৯৮), বাঙালি বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু (২০০০), বাঙালির কণ্ঠ (২০০১), স্বাধীনতা বিরােধী চক্রের বিরুদ্ধে যুক্তফ্রন্ট ।। চুয়ান্নর অভিজ্ঞতা (৫৪-র নির্বাচনের অপ্রকাশিত দলিল), জেগে ওঠার সময়। এখনই (২০০৭), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান : জীবন ও রাজনীতি (২০০৮),। মােনায়েম সরকারের নির্বাচিত রাজনৈতিক রচনা (২০০৯) ইত্যাদি। বর্তমানে তিনি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ফর ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ-এর প্রতিষ্ঠাতা মহাপরিচালক।