বর্তমান গ্রন্থ জনাব মোস্তফা জাহাঙ্গীর আলমের লিখিত ‘নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার কথিত দুই বংশধারা’। গ্রন্থটি প্রকাশের আগেই পাণ্ডুলিপিটি আমার হাতে এসেছিল। লেখকের লেখায় উঠে এসেছে দুইজন লেখকের দুটি তথাকথিত ধারার বক্তব্য। একটি ধারা হলো জনৈক ইঞ্জিনিয়ার পুত্রের তার নামের পূর্বে নবাবজাদা যুক্ত করে লিখেছেন তিনি একখানি গ্রন্থ। এই গ্রন্থে তিনি দাবি করেছেন, তিনি নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার বংশধর। এবং বাংলার পিতা নবাব আলিবর্দী খান। আমরা জানি, বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। অন্য গ্রন্থের রচয়িতা ভারতের জনৈক বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক ও ঐতিহাসিক। এই অধ্যাপক মশাইয়ের দাবি ময়মনসিংহের গৌরীপুরের জমিদার যুগল কিশোর রায়চৌধুরী ছিলেন নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার বিবাহপূর্ব সন্তান। সহজ কথায়, যুগল কিশোর হলো নবাব সিরাজের জারজ সন্তান। তার মায়ের নাম হিরা পরবর্তীকালে নাম হয়েছে আলেয়া কিংবা মাধবী। লেখক মোস্তফা জাহাঙ্গীর আলম বিভিন্ন যুক্তি ও ঐতিহাসিক প্রমাণ দিয়ে বুঝিয়েছেন প্রথমোক্ত লেখক সিরাজের বংশের যে দাবিদার তা ঠিক নয়। তিনি দেখিয়েছেন, ঐ নবাবজাদা আসলে সৈয়দ মোহাম্মদ রেজা খানের বংশধর। সৈয়দ মোহাম্মদ রেজা খান ইংরেজ কোম্পানির দালালি করে বাংলার নায়েবে দেওয়ানের চাকরি গ্রহণ করেন। আর তার ডেপুটি নায়েবে দেওয়ান ছিলেন জমিদার দেবীসিংহ। এদের অত্যাচার ও শোষণ শাসনে বাঙ্লায় নেমে আসে ছিয়াত্তরের মন্বন্তর। ইতিহাসের স্বচ্ছ আলোয় আমরা দেখতে পারি, ঐ সময়ে কৃষকের পক্ষ নিয়ে মজনু শাহ ও ভবানী পাঠকের প্রতিরোধ। ঐ সময় রেজা খাঁ ও দেবীসিংহের অত্যাচারে সারা বাংলায় নেমে আসে দুর্নিবার মন্বন্তর। বাঙ্লার লোকসংখ্যা ছিল ৩ কোটি, এর মধ্যে ১ কোটি লোকই মারা যায়। মানুষ গাছের লতাপাতা খেয়ে জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করে। বিশ্বের ইতিহাসে এটা ‘গ্রেট ফেমিন’ নামে পরিচিত। এই কলঙ্কজনক অধ্যায়ের নায়ক ছিলেন সৈয়দ মোহাম্মদ রেজা খান। ইংরেজ কোম্পানি খুশি হয়ে রেজা খাঁর বাৎসরিক ভাতা দিয়েছিল ৯ লাখ টাকা। সৈয়দ মোহাম্মদ রেজা খাঁর পুত্র সৈয়দ আলি রেজা খান থেকে নবাব সিরাজের বংশধারা হিসেব করে ঢাকা পর্যন্ত ধাবিত হয়েছে নবাব সিরাজের কথিত বংশধর। লেখক মোস্তফা জাহাঙ্গীর আলম তাঁর গ্রন্থে দেখিয়েছেন, কি ভাবে সিরাজের বংশধারা দাবি করেছে প্রাগুক্ত লেখক। আর তা কতখানি সঙ্গত। আর অন্য দিকে গৌরীপুরের জমিদার যে নবাব সিরাজের ভূয়া বংশধর সেটাও খ-ন করেছেন লেখক মোস্তফা জাহাঙ্গীর আলম। লেখকের দালিলিক প্রমাণ ও শক্ত যুক্তির প্রয়োগে যুগল কিশোরকে যে সিরাজের জারজপুত্র বলে বর্ণনা করা হয়েছে তাও খণ্ডিত হয়েছে। -মহসিন হোসাইন