বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পক্ষে লর্ড ক্লাইভ ও মির জাফর, উমি চাঁদ, জগৎশেঠ গংয়ের সম্মিলিত ষড়যন্ত্রের কাছে পলাশি যুদ্ধে (আসলে কোনো যুদ্ধই হয়নি) পরাজয় বরণ করেছিলেন। নবাবের কয়েক হাজার সৈন্য অথচ সেনাপতির বিশ্বাসঘাতকতায় যুদ্ধক্ষেত্রে পুতুলের মতো দাঁড়িয়ে থাকল। দেশপ্রেমিক সেনাপতি মির মদন, মোহনলাল এবং ফরাসি বীর সিনফ্রে জীবন দিয়ে যুদ্ধ করেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। সিরাজ মুর্শিদাবাদ থেকে পাটনা যাবার পথে ধরা পড়েন। মাত্র ১০ দিনের মাথায় ৩ জুলাই মির জাফর পুত্র মিরনের আদেশে মোহাম্মদি বেগ কর্তৃক বন্দী অবস্থায় শেষ রাতে নবাবকে হত্যা করা হয়। নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে বাঙালি তথা ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষের স্বাধীনতা অস্তমিত হয়। সমগ্র ভারতবর্ষ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ষড়যন্ত্র ও নিষ্ঠুরতার মধ্যে নিপতিত হয়। সেদিন থেকে এই ভূখণ্ডে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের সূচনা। বিশ্বাসঘাতকতার খেসারত দিতে হয় প্রায় ২০০ বছর গোলামির জালে। ইতিহাসে হতভাগ্য নবাব সিরাজ-উদ-দৌলাকে বিভিন্নভাবে চিিহ্নত করা হয়েছে। সমকালীন ইংরেজরা বিশেষ করে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মকর্তারা নিজেদের কুকীর্তিকে গোপন করার উদ্দেশ্যে নবাবকে নরপশু হিসেবে বর্ণনা করতেও দ্বিধা করেনি। সে সময় ইংরেজদের পৃষ্ঠপোষকতায় নবাবের বিরুদ্ধে দেশ ও বিদেশি চক্রান্তকারীরা নানা বিকৃত ও মিথ্যা তথ্য ঢুকিয়ে দেয়। নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার আত্মদান বৃথা যায়নি। যুগে যুগে ভারতের স্বাধীনতাকামী জনগণ একের পর এক আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তোলে। হাজারো বিপ্লবী-যোদ্ধা জীবন উৎসর্গ করেন। শেষ পর্যন্ত ইংরেজকে ভারতবর্ষ ত্যাগ করতে হয়েছে। নবাব ছিলেন স্বাধীনতা ও জাতীয় ঐক্যের প্রতীক। আন্দোলনে-সংগ্রামে-বিদ্রোহে-বিপ্লবে তিনি আমাদের আগামী প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন চিরকাল।