আমরা সবাই সংসার নামক এক মায়াবী খাঁচায় বন্দী । এই বন্দিত্ব কাঙ্ক্ষিত , কার্যত সুখের, যদি কার্যকর থাকে এর অন্তঃস্থ আবেগ অনুভূতি ও মর্যাদার উপাদান সমূহ এবং পারস্পরিক নির্ভরতা ভারসাম্যপূর্ণ আচরণ দ্বারা হয় সংস্থিত । এতই সূক্ষাতিসূক্ষ সংবেদনশীল সূতায় নির্মিত এই খাঁচা যে, উপলব্ধিতে ও জীবনাচরণে যখনই এর ব্যত্যয় ঘটে, অনাকাঙ্ক্ষিত হৃদয়স্পর্শী দুঃখজনক কিছু ঘটে যেতে বাধ্য । তখন আর করার কিছুই থাকে না, নিয়তি তাকে নিয়ন্ত্রন করে। সমাজান্তৰ্গত মানুষের এইসব জীবন সংলগ্ন আলেখ্য নিয়েই উপন্যাস “খাঁচা” । নারী চরিত্র প্রধান এই উপন্যাসে আমাদের চিরন্তন সমাজ ব্যবস্থার কারণে বিয়ে নামক বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে একজন নারীর বদলে যাওয়া জীবনচিত্রের পায়ে শিকল পরিয়ে দেয় সংসার নামক খাঁচা। একদিকে নারীর নিজের মনে ডানা মেলে উড়ার স্বপ্ন আর অন্যদিকে সংসার নামক বেড়াজালে আটকে পড়ে স্বামী সংসার সবকিছু আগলে রাখার প্রাণপন চেষ্টার দুই বিপরীত মুখী অবস্থান নারীর জীবনের মানসপটে কি প্রভাব ফেলে তার প্রতিচ্ছবি এই উপন্যাসে প্রতীয়মান। নারীর মুক্ত চিন্তার প্রতি ক্রমবর্ধমান বাঁধা বিপত্তি, সংসারে নারীর মনুষ্য পরিচিতির অনুপস্থিতি একজন নারীকে প্রতিনিয়ত তার সংসার নামক খাঁচার শিকলে বন্দি করে চলেছে যার ফলশ্রুতিতে সন্তানদের মনোজগতে এর কিরূপ প্রভাব পড়ে তার সম্পর্কে কিছু স্পষ্ট বক্তব্য যেমন এই উপন্যাসে প্রতীয়মান তেমনি সংসার নামক খাঁচার বন্দিত্ব ভেঙে মৃত্তিকা নামক অভিমানী এই নারী চরিত্রের হারিয়ে যাওয়া এবং অপরদিকে ফারজানা নামক চরিত্রের নিজেকে খুঁজে পাওয়ার নিরীক্ষে তার স্বপ্ন স্থান পাহাড়ের বুকে সাগরের তীরে ডানা মেলে উড়ে বেড়ানোর মত মুক্তির সুখ কি? তার সম্পর্কেও সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে এই উপন্যাসে। এছাড়া একজন পুরুষের মনোজগতে কি চলতে থাকে, কিসের পিছনে সে ছুটতে থাকে অলীক সুখের আশায়। সেই অলীক সুখ প্রাপ্য হলেও কি মানসিক শান্তি খুঁজে পাওয়া যায়? অদৃশ্য সুখের পিছনে ছুটতে থাকা হিমাদ্রি একসময় হারিয়ে ফেলে স্ত্রী মৃত্তিকা, দুই সন্তান কাব্য ও ফড়িং এর ভালোবাসা। হারিয়েই কি, তাদের মূল্য বুঝতে পারে হিমাদ্রি। অভিমানে দূরে সরে যাওয়া স্ত্রীকে খুঁজে পাওয়ার জন্য হিমাদ্রির প্রাণান্তকর চেষ্টা আদৌ কি সফল হবে? সবশেষে নিজ পরিচয়ের সন্ধানে ছুটে চলা ফারজানার আসল পরিচয় কি? হিমাদ্রি কি খুঁজে পাবে তার হারিয়ে যাওয়া মৃত্তিকাকে? উপলব্ধি কি করতে পারবে তার অভিমানের কারণ? হিমাদ্রি, মৃত্তিকা, ফারজানা, কবির, কাব্য, ফড়িং, , - তাঁদের মনোজগৎ ও পারিবারিক জীবন জগতের অনুকূল এবং প্রতিকূল পারিপার্শ্বিকতা , আবেগ- অনুভূতির সমন্বয়হীনতা, আপাত সুখের একটি সংসার কীভাবে উদ্দিষ্টের বাইরে নিয়ন্ত্রনহীনতায় চলে যায় তাঁর আবেগঘন অথচ নির্মোহ আলেখ্য এই উপন্যাস। বস্তুত, এই পুরুষশাসিত সমাজে দাম্পত্য জীবনের অনুচ্চারিত কিছু প্রশ্নের নির্লিপ্ত উত্তর খুঁজে পাওয়ার নিরন্তর প্রচেষ্টা “খাঁচা”।
নিজেকে গল্প বলার মানুষ হিসেবে পরিচয় দিতে বেশি ভালবাসি। গল্প বলার জন্য মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছি ছোট গল্প, কবিতা আর উপন্যাস। মানুষের জীবনে প্রতিনিয়ত ঘটে যাওয়া গল্প গুলোকে তুলে ধরার চেষ্টা করি অনবরত। নতুন কিছু সৃষ্টির প্রচেষ্টায় বাঙালি পরিবারের সম্পর্কের বিভিন্ন দিক গুলো নিয়ে বৃহৎ আকারে ২০১৯ সালে রচনা করি প্রথম উপন্যাস “বিনি সুতার টানে”। যা ২০২০ সালের একুশে বই মেলাই অনন্যা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়। ‘খাঁচা’ আমার দ্বিতীয় উপন্যাস। জন্ম থেকে বেড়ে উঠা চট্টগ্রাম শহরে। ম্যানেজমেন্ট নিয়ে পড়াশোনা শেষ করে জড়িয়ে পরি লেখা লেখির এই জগৎটাতে। গল্প সেতো গল্প নয় জীবনেরও কথা কয় এই নশ্বর জীবনে গল্পরাই কেবল হয়ে থাকে অবিনশ্বর।