দেশভাগের পরে ভারতে রোকেয়ার চেতনা হারিয়ে যায়। ১৯৬৪ সালে দাঙ্গায় তাঁর পুত্রসম আমীর হোসেন চৌধুরী ঢাকায় বিপন্নদের রক্ষা করতে গিয়ে গুণ্ডার দ্বারা নিহত হন। সেই থেকে রোকেয়াচর্চা ভারতে সীমিত আকারে শুরু। ভারতে প্রকাশিত ‘সুলতানার স্বপ্ন’, ‘অবরোধ-বাসিনী’ পাঠে বিস্ময় জাগে। বিশ্বে রোকেয়া সম্পর্কে প্রথম পি. এইচ. ডি. গবেষক মহীশূর অধ্যাপিকা মীনা বেলিয়াপ্পা। ‘মুক্তিযুদ্ধ’ কালে এম আব্দুর রহমান রচিত রোকেয়া জীবনী ‘জ্যোতির্ময়ী রোকেয়া’ তাঁর সম্বন্ধে ঔৎসুক্য জাগায়। বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জনের পরে বাংলা একাডেমি, ঢাকা থেকে ‘রোকেয়া রচনাবলী’ প্রকাশিত হয়। তাঁর শতবর্ষে ভারতে রোকেয়া স্মরণ শুধু গৌরী আইয়ুবের আনন্দবাজার রবিবাসরে প্রকাশিত লেখা। গৌরী আইয়ুবের সুরাহা সম্প্রীতি রোকেয়া চর্চায় গুরুত্ব দিতে থাকে। পশ্চিম বাংলায় স্নাতক স্তরে বাংলায় সংক্ষিপ্ত রোকেয়া রচনা পাঠ্য হয়। শান্তিময় রায়, অমলেন্দু দে’র নেতৃত্বে রোকেয়া সমাধির সন্ধান মেলে। সৈয়দ মনসুর হবিবুল্লাহর পরামর্শে ইতিহাস সচেতন পৌরপ্রধান সুনীল পাল নথি পরীক্ষা করে সেখানে স্মৃতিফলক স্থাপন করেন। এখানে নিত্যবছর রোকেয়া দিবস পালন হতে সারা বছর ভারতে স্কুলে রোকেয়া পাঠ্য হন। তাঁর নামে প্রথম স্কুল হয় সল্টলেক, কলকাতা বেগম রোকেয়া স্মৃতি সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়। প্রধান শিক্ষিকা সুমিত্রা সেনগুপ্ত শিক্ষাব্রতী রোকেয়া শুভচেতনার নিরন্তর প্রেরণা এই বোধে ভারতে প্রথম রোকেয়ার আবক্ষ মূর্তি স্কুলে স্থাপন করেন। বিদ্যাসাগর দ্বিশত জন্মবর্ষে সারা পূর্ব ভারতে ও বাংলাদেশে দুই শিক্ষাবিদ একসাথে আলোচিত হতে অনেক নতুন তথ্য উদ্ভাসিত হচ্ছে। রোকেয়া গবেষক প্রাণতোষ বন্দ্যোপাধ্যায়, সমন্বয়-সাধক, রোকেয়া ইন্সটিটিউট অব ভ্যালু এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ, কলকাতা, ভারত।
Title
রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন শিক্ষা, সমাজদর্শন ও প্রাসঙ্গিক ভাবনা
১৯৬০ সালের ৬ই জুন গোলাম সারোয়ারের জন্ম। পৈতৃক নিবাস বিভাগীয় শহর রংপুরে। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের জল-হাওয়ায় লক্ষ্যহীনভাবে বেড়ে ওঠা যুবক। সম্মান শ্রেণিতে পড়ার সময় ১৯৭৯ সালে যাত্রাপালায় অভিনয়ের মধ্য দিয়ে সারোয়ারের নিয়মিত সাংস্কৃতিক-পাঠের প্রত্যক্ষ সূচনা হয়। এরপরে ধীরে ধীরে আবৃত্তি, পথনাটক, গণসঙ্গীত, মঞ্চনাটক, তথ্যচিত্র ও চলচ্চিত্র সব শাখাতেই কাজ করেন তিনি। কণ্ঠশীলন পরিবেশিত উল্লেখযোগ্য আবৃত্তি প্রযোজনায় অংশগ্রহণ―শিকড়ের ডানা-তাইরে নাইরে না, রথের রশি, পুরস্কার ও স্মৃতি সত্তা ভবিষ্যৎ। কণ্ঠশীলনে নির্দেশিত উল্লেখযোগ্য আবৃত্তি প্রযোজনা―ঝালাপালা, গান্ধারীর আবেদন, লালন আলেখ্য, মুক্তিযুদ্ধের কথা, সাপুড়ে, চাঁদ বণিকের পালা, নক্ষত্রের পানে চেয়ে বেদনার পানে, মুক্তিযুদ্ধের কথা অমৃত সমান ও শিক্ষাব্রতী রোকেয়া ইত্যাদি। একক আবৃত্তি অনুষ্ঠান―ঢাকায় ৪টি, চট্টগ্রামে ৩টি, আগরতলায় ২টি, শিলচরে ১টি (আসাম) ও কলকাতায় যৌথভাবে ১টি। যাত্রাপালায় অভিনয়―হাসির হাটে কান্না, নন্দরানির সংসার ও সমাজ। পথনাটকে অভিনয়―বানরের পিঠা বণ্টন, এক নবজাতক শিশু ও এবং কিন্তু, এবং পাগলের সংলাপ। মঞ্চ নাটকে অভিনয়―সভাপতি (রংপুর), পুতুল খেলা, ভৃত্যরাজক তন্ত্র, কারিগর, নানা রঙের দিন ও মরা ময়ূর। নির্দেশিত মঞ্চ নাটক―উত্তরবংশ। ডকুমেন্টারিতে আবৃত্তি-অভিনয়―শহীদ আলতাফ মাহমুদ, জহির রায়হান ও তোমারি তরে মা। চলচ্চিত্রে অভিনয়―মৃত্তিকা মায়া। গ্রন্থ প্রকাশনা― শুদ্ধ ও প্রমিত উচ্চারণের সুবর্ণ পথ, প্রমিত বাংলা উচ্চারণ অভিধান। আবৃত্তির ক্যাসেট১, আবৃত্তির সিডি৫, উচ্চারণ সিডি২ উচ্চারণ প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ―কণ্ঠশীলনসহ বাংলাদেশের প্রায় পঞ্চাশটি আবৃত্তি সংগঠনে, চারুনীড়ম থিয়েটারসহ বেশ কিছু নাটকের দলে। সরকারি প্রতিষ্ঠান, টেলিভিশন চ্যানেল ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে উচ্চারণ বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান। সাংগঠনিক কাজের দায়িত্বও পালন করে চলেছেন সারোয়ার― কণ্ঠশীলন সভাপতি, প্রশিক্ষক, নির্দেশক ও প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। চারুনীড়ম সহসভাপতি, প্রশিক্ষক ও সদস্য। ছায়ানট সাধারণ পর্ষদ সদস্য। বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য। কল্যাণপরম্পরা (ওয়াহিদুল হক) সভাপতি।