দেশজুড়ে যখন সরকারি, বেসরকারিভাবে বঙ্গবন্ধু’র জন্ম শতবর্ষে-মুজিব শতবর্ষ-উদযাপন শুরু হলো, তখন বঙ্গবন্ধু’র জন্মদিনকে ঘিরে তথা বাংলাদেশের স্থপতিকে স্মরণ করে ২০২১ সালে সরকারিভাবে জাতীয় প্যারেডগ্রাউন্ডে বিরাট এক ঐতিহাসিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। যেখানে নাটক, সংগীত, আবৃত্তি, নৃত্য, চিত্রকলা, গল্পকথন ও তথ্যচিত্র এ সবের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর জীবন, রাজনীতি ও সংগ্রাম তুলে ধরা হয়। এই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, জননত্রেী শেখ হাসিনাসহ দেশ-বিদেশের নানা পর্যায়ের গণ্য-মান্য ব্যক্তিগণ উপস্থিত ছিলেন। সেখানে আমিও ছোট্ট একটি দায়িত্ব পেয়েছিলাম। দায়িত্ব যথাযথ পালন করেছিলাম, সব কাজ, মহড়া ইত্যাদি শেষে অনুষ্ঠানও হয়েছিল। কিন্তু অকস্মাৎ আমার করোনা ‘পজিটিভের’ কারণে আমি-ই মঞ্চে উপস্থিত হতে পারিনি। অসুস্থ শরীর নিয়ে বিছানায় শুয়ে সেই অনুষ্ঠান উপভোগ করলাম আর কাত-চিত হতে হতে মাথায় এলো বঙ্গবন্ধু’র জন্ম শতবর্ষে শত আবৃত্তি করা যায় কিনা! এক দুই করে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা প্রায় ৮৫০টি কবিতা, ১০০টি ছড়া ও কিছু গানও জোগাড় হলো। এবার এই কবিতা-ছড়া-গান পড়বার পালা, তারপর বাছাই পর্ব। শেষ পর্যন্ত ১০০টি লেখার একটি সমারোহ তৈরি হলো। শিরোনামও ঠিক হলো- শত আবৃত্তিতে বঙ্গবন্ধু। বিনম্র স্বীকার-উক্তি এই যে, বাছাইগুলো একেবারে আমি আমার ব্যক্তিগত চিন্তা ও বিবেচনা নিয়ে করেছি। হয়তো নিজের অজ্ঞানতায় কোনো যোগ্য কবিতা বাদ পড়েছে অথবা শ্রদ্ধাভাজন কোনো কবি বা গুণি এ তালিকা থেকে বাদ থেকেছেন। এ জন্য ব্যক্তিগতভাবে আমি ক্ষমাপ্রার্থী।
১৯৬০ সালের ৬ই জুন গোলাম সারোয়ারের জন্ম। পৈতৃক নিবাস বিভাগীয় শহর রংপুরে। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের জল-হাওয়ায় লক্ষ্যহীনভাবে বেড়ে ওঠা যুবক। সম্মান শ্রেণিতে পড়ার সময় ১৯৭৯ সালে যাত্রাপালায় অভিনয়ের মধ্য দিয়ে সারোয়ারের নিয়মিত সাংস্কৃতিক-পাঠের প্রত্যক্ষ সূচনা হয়। এরপরে ধীরে ধীরে আবৃত্তি, পথনাটক, গণসঙ্গীত, মঞ্চনাটক, তথ্যচিত্র ও চলচ্চিত্র সব শাখাতেই কাজ করেন তিনি। কণ্ঠশীলন পরিবেশিত উল্লেখযোগ্য আবৃত্তি প্রযোজনায় অংশগ্রহণ―শিকড়ের ডানা-তাইরে নাইরে না, রথের রশি, পুরস্কার ও স্মৃতি সত্তা ভবিষ্যৎ। কণ্ঠশীলনে নির্দেশিত উল্লেখযোগ্য আবৃত্তি প্রযোজনা―ঝালাপালা, গান্ধারীর আবেদন, লালন আলেখ্য, মুক্তিযুদ্ধের কথা, সাপুড়ে, চাঁদ বণিকের পালা, নক্ষত্রের পানে চেয়ে বেদনার পানে, মুক্তিযুদ্ধের কথা অমৃত সমান ও শিক্ষাব্রতী রোকেয়া ইত্যাদি। একক আবৃত্তি অনুষ্ঠান―ঢাকায় ৪টি, চট্টগ্রামে ৩টি, আগরতলায় ২টি, শিলচরে ১টি (আসাম) ও কলকাতায় যৌথভাবে ১টি। যাত্রাপালায় অভিনয়―হাসির হাটে কান্না, নন্দরানির সংসার ও সমাজ। পথনাটকে অভিনয়―বানরের পিঠা বণ্টন, এক নবজাতক শিশু ও এবং কিন্তু, এবং পাগলের সংলাপ। মঞ্চ নাটকে অভিনয়―সভাপতি (রংপুর), পুতুল খেলা, ভৃত্যরাজক তন্ত্র, কারিগর, নানা রঙের দিন ও মরা ময়ূর। নির্দেশিত মঞ্চ নাটক―উত্তরবংশ। ডকুমেন্টারিতে আবৃত্তি-অভিনয়―শহীদ আলতাফ মাহমুদ, জহির রায়হান ও তোমারি তরে মা। চলচ্চিত্রে অভিনয়―মৃত্তিকা মায়া। গ্রন্থ প্রকাশনা― শুদ্ধ ও প্রমিত উচ্চারণের সুবর্ণ পথ, প্রমিত বাংলা উচ্চারণ অভিধান। আবৃত্তির ক্যাসেট১, আবৃত্তির সিডি৫, উচ্চারণ সিডি২ উচ্চারণ প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ―কণ্ঠশীলনসহ বাংলাদেশের প্রায় পঞ্চাশটি আবৃত্তি সংগঠনে, চারুনীড়ম থিয়েটারসহ বেশ কিছু নাটকের দলে। সরকারি প্রতিষ্ঠান, টেলিভিশন চ্যানেল ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে উচ্চারণ বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান। সাংগঠনিক কাজের দায়িত্বও পালন করে চলেছেন সারোয়ার― কণ্ঠশীলন সভাপতি, প্রশিক্ষক, নির্দেশক ও প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। চারুনীড়ম সহসভাপতি, প্রশিক্ষক ও সদস্য। ছায়ানট সাধারণ পর্ষদ সদস্য। বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য। কল্যাণপরম্পরা (ওয়াহিদুল হক) সভাপতি।