জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে দেশপ্রেমের অগ্নিমন্ত্রে উজ্জীবিত জাতি ‘জয় বাংলা’ জাদুমন্ত্র বুকে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, মাতৃমুক্তির এ মহাযুদ্ধে বাংলার ছাত্র-যুবা কে কার আগে শহিদ হবে যেন সেই প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছে। নয় মাস ব্যাপ্ত মানবেতিহাসের অন্যতম রক্তক্ষয়ী এ যুদ্ধে ত্রিশ লাখ তাজা প্রাণ আর চার লাখ মা-বোনের ত্যাগের বিনিময়ে বাঙালির বিজয় অর্জিত হয়। যাঁর ডাকে ’৭১ সালে ৩০ লাখ বাঙালি ‘জয় বাংলা’, ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ বলে হাসিমুখে জীবন উৎসর্গ করেছেন- মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় ’৭৫-এর ১৫ই আগস্ট তাঁকেই সপরিবারে হত্যা করে এদেশেরই কিছু কুসন্তান। দেশীয়-আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রে ঘটা এ নির্মম হত্যাযজ্ঞের আকস্মিকতায় বাংলাদেশের মানুষ গভীর শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়ে। বইটির লেখক অবসরপ্রাপ্ত সচিব মোহাম্মদ মুসা (মুসা সাদিক) ১৯৭২ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত (জেনারেল জিয়ার ১৯৭৭ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত সময় ব্যতীত) ১২ বছরে বঙ্গভবনে ৬ জন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন। সে সুযোগে ভিন্ন ভিন্ন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় সফরে অনেক দেশের রাষ্ট্রনায়কের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালের আগে-পরে দায়িত্বপালনকারী ২৯ জন প্রাতঃস্মরণীয় প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ও বিশ্ববরেণ্য নেতা মহামানব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি যে পরম গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন- তাঁদের থেকে আট জন বিশ্বনেতার আলাপ-আলোচনায় উঠে আসা শ্রদ্ধার্ঘ্য- বিশ্ব নেতাদের দৃষ্টিতে বঙ্গবন্ধু।
মুসা সাদিক মুক্তিযুদ্ধকালে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের ওয়ার করেসপনডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ‘রণাঙ্গন ঘুরে এলাম’ এবং ‘মুক্তাঞ্চল ঘুরে এলাম’ শিরোনামে প্রচারিত দুটি কথিকা তিনি স্বকণ্ঠে প্রচার করতেন। কথিকা দুটি সপ্তাহে কয়েকবার প্রচার হতো। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অবস্থান ও গতিবিধির ওপর তাঁর সরবরাহকৃত গোয়েন্দা তথ্য মুক্তিবাহিনী এবং ভারতীয় মিত্রবাহিনীর রণ-কৌশল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর দুঃসাহসিক অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ লিখেছেন ‘... মুক্তিযুদ্ধে সামরিক ও বেসামরিক ক্ষেত্রে জনাব মুসার অপরিসীম অবদান এবং বীর যোদ্ধা ক্যাপ্টেন হুদা যেভাবে পাকসেনাদের গোলাবৃষ্টির মধ্যে নিজের জীবনের নিরাপত্তা উপেক্ষা করে মুসার জীবন বাঁচিয়েছেন, সে জন্য তাঁদের উভয় জনের নাম ইতিহাসে লিপিবদ্ধ করার জন্য এবং তাঁদের কাছে জাতির ঋণ স্বীকার করার জন্য মুক্তিযুদ্ধের সরকারের পক্ষে আমি এখানে স্বাক্ষর করলাম।’ স্বাক্ষর : তাজউদ্দীন আহমদ, তারিখ : ২১.০৩.১৯৭২। তাজউদ্দীন আহমদ-প্রদত্ত এই স্বীকৃতির পর বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে তিনি ‘জীবন্ত শহিদ’ হিসেবে খ্যাত হয়ে ওঠেন। যৌবনের শুরুতে সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করা মুক্তিযোদ্ধা লেখক মুসা সাদিক বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সচিবালয়ে ভিন্ন-ভিন্ন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ১২ বছর দায়িত্ব পালন করেছেন। অবসরের পূর্বে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সচিব পদে নিয়োজিত ছিলেন। সাহিত্য ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র মুসা সাদিকের প্রকৃত নাম মোহাম্মদ মুসা। তিনি ১৯৫১ সালের ৩০শে অক্টোবর সাতক্ষীরা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। অবসরোত্তর জীবনে লেখালেখি ছাড়াও সামাজিক-রাজনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িত আছেন।