"ভারত যখন ভাঙলো" বইয়ের ফ্ল্যাপ থেকে নেওয়া আমরা ভারতের মুসলমানরা কুফরকে ইসলামের বন্ধু মনে করে শত শত বছরের ঐতিহাসিক সত্যকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিলাম । অতীতের ইতিহাস সাক্ষী কুফরী শাসন ব্যবস্থা সবসময় মজলুমের রক্ত থেকে জালেমের জন্য আনন্দের সামগ্রী সরবরাহ করার ব্যবস্থা করেছে । আমরা বেঈমানী, অবিশ্বস্ততা, বেইনসাফী ও বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হয়েছি। ওদিকে আমাদের দুশমনরা সবসময় অবস্থা বুঝে তাদের কর্মপদ্ধতিতে পরিবর্তন এনেছে, কিন্তু তারা তাদের আসল উদ্দেশ্য থেকে কখনাে একচুল বিচ্যুত হয়নি। এক সময় এই উপমহাদেশের দেবতারা ভারত বিভাগে রাজী ছিল না। কিন্তু যখন দেখল সাত সমুদ্র তের নদীর পারের দেবতা তাদের নৌকায় চড়ে বসেছে এবং তাদের নীতি আদর্শ গ্রহণ করেছে তখনি তারা দেশ বিভাগের নীতি মেনে নিল। সেই সাথে ভারত মাতার সমস্ত দেহে এলােমেলােভাবে ছুরি চালাতে প্রস্তুত হয়ে গেলে। আর এতেই আমরা মুসলমানরা খুশি হয়ে গেলাম যে, কোন প্রকার কুরবানী ছাড়াই আমরা পাকিস্তান পেয়ে যাবাে । আসলে দুশমনরা আমাদেরকে ধােকায় ফেলেছিল। এই সুযােগে তারা গােলা-বারুদ, সাজ সরঞ্জাম ঠিক করে নিয়েছিল এবং দিল্লী থেকে পূর্ব পাঞ্জাবের শেষ পর্যন্ত হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযােগের প্রচণ্ড বিভীষিকা সৃষ্টি করেছিল। একই সাথে র্যাডক্লিফ রােয়েদাদের খঞ্জরও আমাদের বুকে বিদ্ধ হয়েছিল। লর্ড মাউন্ট ব্যাটেন তখনাে ভাইসরয় আর পাণ্ডিত নেহেরু ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু দিল্লীসহ সারাভারত জুড়ে তখন চলছিল সহিংস দেবীর পুজারী গুণ্ডাদের রাজত্ব। এ সময় অহিংসার দেবতার প্রধান সহযােগী লর্ড মাউন্ট ব্যাটেন রাজ প্রাসাদের ছাদে দাঁড়িয়ে স্বচক্ষে খুনের তুফান প্রত্যক্ষ করছিলেন আর ইবলিস তার কানে কানে বলছিল, ‘আমি এ দুনিয়ায় বহু মানুষের রূপ ধরে এসেছি। আদমের বাগানে বহুবার আগুন লাগিয়েছি। সমরকন্দ ও বুখারায় চেংগিজ খানের রূপ ধরে নাযিল হয়েছি। বাগদাদে এসেছি হালাকু খানের বেশে। কিন্তু তুই আমার সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি।’ সহিংস দেবীর পূজারী গুণ্ডারা যখন তার হত্যাযজ্ঞ শেষ করে ফেললাে। তখনই অহিংসার দেবতা মহাত্মা সেখানে অবির্ভূত হলেন। ভারত বিভাগের সময় উপমহাদেশ জুড়ে মুসলিম নিধনের যে তাণ্ডবলীলা চলেছিল তারই লােমহর্ষক কাহিনী নিয়ে রচিত নসীম হিজাযীর অনবদ্য উপন্যাস ‘ভারত যখন ভাঙলাে’।
Nosim Hijajee শরীফ হুসাইন (ছদ্মনাম নসিম হিজাজী হিসাবে বেশি পরিচিতি, জন্ম:১৯১৪ - মৃত্যু: ২ মার্চ ১৯৯৬) হলেন একজন পাকিস্তানি উপন্যাসিক ও লেখক, যিনি লেখালেখির সময় নসিম হিজাজি ছদ্মনাম ব্যবহার করেন। বাল্য ও কৈশোর কাল গ্রামে কাটলেও তার সোনালী যৌবনটুকু দখল করে আছে ঐতিহাসিক লাহোর শহর। এখানেই তিনি লেখাপড়া করেন এবং লাহোর ইসলামীয়া কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে ডিগ্রী পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তিনি একজন উর্দু ভাষার লেখক। হিজাজী পাঞ্জাবের গুরুদাসপুর জেলার ধারওয়াল শহরের পাশের একটি গ্রাম সুজানপুরে জন্মগ্রহণ করেন। পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার পূর্বেই ১৯৪৭ সালে তার পরিবার লাহোরে বসবাস শুরু করে। তিনি তার জীবনের অধিকাংশ সময় পাকিস্তানে কাটিয়েছেন এবং ১৯৯৬ সালের ২ মার্চ তারিখে ইন্তেকাল করেন।