‘অম্যুইং’ একটি মারমা শব্দ,যার বাংলা অর্থ ‘উত্তরাধিকার’ ! পাহাড়,বিশেষত বাংলাদেশের পার্বত্যাঞ্চল একটা অসম্ভব সুন্দর জায়গা।পাহাড়ের এই অসম্ভব সৌন্দর্য্য বাড়তি আয়োজন হিসেবে যক্ত হয়েছে এই অঞ্চলে বসবাসকারী ক্ষুদ্র এগারোটি জাতিগোষ্ঠীর জীবন-যাপন পদ্ধতি ,ইতিহাস এবং ঐতিহ্য ।কিন্তু যে প্রশ্নটা চলে আসে ,সেটি হলো-এই পাহাড়ের উত্তরাধিকারী আসলে কারা ? আপাতদৃষ্টিতে পাহাড়কে বেশ সুন্দর আর স্বাভাবিক ঠেকলেও এর ভেতরের গল্পগুলো বেশ মর্মান্তিক ।পাহাড়ে বসবাসরত এইসব পাহাড়ী মানুষ প্রতিনিয়ত কিভাবে প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করে টিকে থাকে কিংবা শাসকগোষ্ঠী এবং তাদের এজেন্টদের দ্বারা কিভাবে নানান নীতি ও আইন-কানুনের প্রয়োগের মধ্য দিয়ে তারা বহু কাল ধরে শোষিত ,বঞ্চিত কিংবা নিপড়ীত হয়ে আসছে সে গল্পগুলো সেভাবে কোথাও উঠে আসে না। ‘অম্যুইং’ উপন্যাসে একটি কাল্পনিক মারমা সমাজ এবং সংস্কৃতিকে মূল উপজীব্য ধরে একটা ‘সিরিয়াল কিলিং’ ঘটনার মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উন্মোচনের ভেতর দিয়ে পাহাড় এবং পাহাড়ে বসবাসকারী মানুষের আর্থ-সামাজিক ,রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক অবস্থা উন্মোচনের পাশাপাশি পাহাড় ডিভাইড এন্ড রুল পদ্ধতির স্বরূপ উন্মোচনের চেষ্টা করা হয়েছে । যেখানে কোনো একটা অঞ্চলে সংখ্যাধিক্য মারমা জনগোষ্ঠী মাইনাস করে অন্য সকল জাতিগোষ্ঠীকে সাথে নিয়ে শাসন পদ্ধতি কায়েম করবার চেষ্টা করা হয়েছে।
আসাদ রহমানের জন্ম ও বেড়ে ওঠা দিনাজপুরে, যেখানে কেটেছে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ষোল বছর। পড়াশোনার বাকী পর্ব সমাপ্ত হয়েছে ঢাকাতে, ঢাকা কমার্স কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নৃবিজ্ঞান বিভাগের একজন শিক্ষার্থী হিসেবে। নৃবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর অধ্যয়ন শেষ করবার পর তিনি নিজেকে একজন উন্নয়নকর্মী হিসেবে নিয়োজিত করবার পাড়াপাশি লেখালেখিতে মনোনিবেশ রেন, যার সূত্রপাত ঘটে সামহোয়্যার ইন ব্লগের হাত ধরে। 'অগ্নি সারথি' ছদ্মনামে লেখালেখি করা এই ব্লগার সর্বদা চেষ্টা করেছেন তার অর্জিত নৃবৈজ্ঞানিক জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে তার লেখনীতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কন্ঠস্বর তুলে নিয়ে আসবার। যার স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৬ সালে তিনি বাংলাদেশ হতে ডয়েচ ভেলে কর্তৃক 'বেস্ট অফ অনলাইন এক্টিভিজম' এওয়ার্ডের জন্য মনোনীত হন। লেখালেখিকে তিনি আন্দোলন হিসেবে বিবেচনা করেন এবং তিনি বিশ্বাস করেন লেখনীর মধ্য দিয়েই একদিন পৃথিবীর সকল মানুষের বিবেক জাগ্রত হবে, যে বিবেক মানুষের মধ্যে উঁচু-নিচু, ধনী-গরীব, নারী- পুরুষ সাদা-কালো সহ জাত-পাতের সকল বিভেদ খুঁচিয়ে দিয়ে একটা বৈষম্যহীন সমাজ গড়ে দেবে যেখানে মানুষ পরিচিত হবে শুধুই মানুষ হিসেবে। লেখকের পূর্ব-প্রকাশিত উপন্যাস 'নজরবন্দী' পাঠক মহলে বেশ আলোড়ন সৃষ্টিকারী একটি উপন্যাস হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল।