পটভূমি ১৯৪৭ সালের দেশবিভাগ ভারত বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক। আবহমানকাল থেকে চলে আসা বাঙালি জীবনে কে কোন ধর্মের মানুষ– সে প্রশ্ন কখনো আসেনি। কিন্তু দেশবিভাগের কিছুকাল পূর্বে হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে সংঘটিত দাঙ্গা শাশ্বত গ্রামবাংলার সনাতনী সম্প্রীতির চিত্র ভেঙে খান খান করে দেয়। পশ্চিম বাংলার সংখ্যালঘু অনেক মুসলমান প্রাণভয়ে দলে দলে পালিয়ে আসে পূর্ব বাংলায়। এপার বাংলার ঢাকা, নোয়াখালীসহ কিছু এলাকায় ক্ষুদ্র পরিসরে হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা হলেও গোটা পূর্ব বাংলায় তেমন দাঙ্গা হয়নি। তারপরও আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে এ দেশের অনেক হিন্দু পরিবার ভারতে পাড়ি জমায়। তখনকার সমাজচিত্রের ওপর উল্লেখযোগ্য কাজ করেছেন অধ্যাপক হাসান আজিজুল হক। সে সময়ের ঘটনা নিয়ে হাসান আজিজুল হকের লেখা হৃদয়স্পর্শী কিছু বই আমি পড়েছি। আমি বাংলা সাহিত্যের ছাত্র নই। এ বিষয়ে অন্য কারো কালজয়ী কোনো লেখা আছে কি না আমার জানা নেই। বাংলার ইতিহাসের আরেকটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ। সেই ধর্মভিত্তিক বিভাজন থেকে আবার অসাম্প্রদায়িক সমাজ ব্যবস্থায় ফিরে আসা। কিন্তু ব্যাপারটা এত সহজ নয়। এর পিছনে আছে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর সঙ্গীদের বিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ১৯৬৯ সালের গণ অভ্যুত্থান, ১৯৭০ সালের জাতীয় নির্বাচন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের ভয়াল রাত্রি। আছে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ, ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তদান এবং দুই লক্ষ নির্যাতিতা মা-বোনের করুণ কাহিনি। এসব নিয়ে অনেক লেখা আছে। লেখাগুলো সেই অগ্নিঝরা দিনের স্মৃতি চিরজাগরূক রাখবে মানুষের মনে। ২০২০ সালে কোভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাব পৃথিবীর ইতিহাসে আরেকটি মাইলফলক। থমকে গেছে গোটা পৃথিবী। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। এ ধরনের দুঃসময়েও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানোর দৃঢ় প্রত্যয় অনুসরণীয় হতে পারে। বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় ৮ মার্চ, ২০২০। এই মহামারির প্রাদুর্ভাব থেকে দেশের জনগণকে রক্ষার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ২৩ মার্চ থেকে দেশব্যাপী লকডাউন ঘোষণা করা হয়। গৃহবন্দি হতে হয় আমাদের। জাতীয় এই মহাদুর্যোগে শুধু শুধু গৃহবন্দি না থেকে কলমযোদ্ধা হিসেবে করোনাযোদ্ধাদের পাশাপাশি থাকার মানসিকতা নিয়েই লকডাউন বিষয়ে আমার লেখালেখি শুরু। করোনাকালের সূচনা থেকে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, অর্থনীতি, ধর্মসহ বিভিন্ন বিষয়ে করোনার প্রভাব নিয়ে সেসব দিনে আমার লেখাগুলোর সংকলিত বই ‘লকডাউনে আমার মা’। কথাসাহিত্যিক ড. আফরোজা পারভীন বইটির ওপর একটি পর্যালোচনা লিখে আমাকে ধন্য করেছেন। মোবারক হোসেন লিটন বইটির প্রচ্ছদ এঁকেছেন। তাঁকে অভিনন্দন। বইটির পাণ্ডুলিপি সংরক্ষণে তরুণ প্রজন্মের লেখক মিকসেতু মিঠু আমাকে আন্তরিক সহযোগিতা দিয়েছেন; তাঁকে ধন্যবাদ। বইটি প্রকাশের জন্য ‘ইছামতি প্রকাশনী’র প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। ‘লকডাউনে আমার মা’ করোনাকালের ইতিহাসকে কতটুকু ধরে রাখবে, বা বইটি ইতিহাসের পাতায় স্থান পাবে কি না তা সময় বলে দেবে। তবে এ বিষয়ে বর্তমান পাঠকগণের মূল্যায়ন অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বইটির ওপর যেকোনো পরামর্শ সাদরে গৃহীত হবে। বিনীত রাশেদুল ইসলাম লেখক ইস্কাটন, ঢাকা, ২০ জানুয়ারি, ২০২১ খ্রি.