বাংলা মানেই গ্রামবাংলা-সবুজ-শ্যামল ফসলের ক্ষেত, ছায়া ঘেরা বনানী, নদী-নালা, খাল-বিল, দিগন্তছোঁয়া আকাশ আর আঁকাবাঁকা মেঠোপথ। বাংলা মানেই ষড়ঋতুর দেশ। বাংলা মায়ের এই প্রকৃতিই তার সন্তানকে করে তোলে প্রাণবন্ত, উদার, প্রশান্ত-আবার জন্ম দেয় রুষে ওঠার শক্তি, ঝড়ের মতো সবকিছু উড়িয়ে নেওয়ার ক্ষিপ্রতা। তাই বাঙালি যেমন ভালোবাসতে জানে তেমনি ভয়ানক শক্তি নিয়ে ছোবল দিতেও জানে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ তার প্রমাণ। রোষে উঠেছিল বাঙালি অন্যায়-অবিচার আর শোষণের বিরুদ্ধে, বৈশাখী ঝড়ের প্রচণ্ডতায় উড়িয়ে দিয়েছিল হায়েনার দলকে। আর বাংলার এই দামাল শক্তির প্রতীক হয়ে যেন জন্ম নিয়েছিলেন আজীবন সংগ্রামী সিংহপুরুষ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। একটি অঙ্গুলি হেলনে জাগিয়ে তুলেছিলেন বাংলার আপামর জনগণকে। বাংলার আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা, বাংলার কৃষক, শ্রমিক-মজুর, ছাত্র-জনতা সবাই সেই মহাপুরুষের ডাকে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল শত্রুর মোকাবিলায়। ছিনিয়ে এনেছিল লাল-সবুজ একটি পতাকা, একটি দেশ-বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুকে ঘিরে, মুক্তিযুদ্ধকে ঘিরে যে মহাকাব্য এ দেশে রচিত হয়েছে সেই মহাকাব্যের একটি প্রতিচ্ছবি যেমন ফুটে উঠেছে মনিরুজ্জামান বাদলের কবিতামালায় তেমনি ফুটে উঠেছে বাংলার শাশ্বত রূপ, বাংলা মায়ের আদর মাখানো গন্ধ। আবহমান বাংলা মায়ের ছবি, ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে একাত্তরের যুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বাঙালির স্বপ্ন, এরপর মহাকাব্যের ট্র্যাজিক চরিত্রের মতোই মহানায়কের করুণ অন্তর্ধান, স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা, আবারও বাংলাকে একটি শ্মশানে পরিণত করার অপচেষ্টা--এসব কিছু নিয়েই মনিরুজ্জামান বাদলের অন্তর ধোয়া জলের ধারা--‘একাত্তর, একটি মহাকাব্য'--একটি সফল সুন্দর সৃষ্টি।