বই সম্পর্কে কিছু কথা : কতজন-ই তো বলে—আমি তাহাজ্জুদে উঠতে পারি না; তাহাজ্জুদে মন ফিরাতে পারি না। ফজরে উঠতে পারি না; জামাতের সাথে নামাজ আদায় করতে পারি না। যাকাত দিতে পারি না। সময়ে অসময়ে মিথ্যার আশ্রয় নিই। গীবত থেকে নিজের জিহ্বাকে সংযত রাখতে পারি না। পরনিন্দা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে পারি না। বেগানা নারী থেকে নজর ফেরাতে পারি না। ভালো কিছু করতে গেলেই যেন, ভিতর থেকে এক ধরনের বাধা আসে। মনে হয় সৎ কাজ থেকে দূরে রাখতে, কেউ আমাকে শেকলবন্দি করেছে। মনে হয়—আমার আর নেক আমলের মধ্যে কেউ একজন দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমি এক-পা দু-পা করে সৎ কাজের উদ্দেশ্যে এগিয়ে যাই! অথচ মনে হয়, পেছন থেকে কেউ আমার পা ধরে টানছে। ভেতর থেকে কেউ একজন তাকে সাহায্য করছে। ভেতর থেকে ক্রমাগতভাবে বাধা-বিপত্তি আসছে। অনেকেই বলে—আমি অশ্লীল-খারাপ কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখতে চাই! হারাম থেকে বেঁচে থাকতে চাই। গীবত ও পরনিন্দা থেকে নিজের জবানকে হেফাজত রাখতে চাই। নারীর ছলনা থেকে মুক্ত থাকতে চাই। নানান অপকর্ম থেকে মুক্ত থাকতে চাই। কিন্তু, যখনই এগুলো থেকে পরিপূর্ণভাবে সরে আসতে চাই, তখনই মনে হয়—কেউ একজন আমাকে জোর করে এগুলোর মধ্যে নিক্ষেপ করছে। মনে হয় কেউ একজন পেছন থেকে তাড়াচ্ছে। ভেতর থেকে বারবার ফুসলিয়ে দিচ্ছে। বারবার মনে হয়—তার কাছে আমি পরাজিত। তার গোলামিতে সিদ্ধহস্ত। আমি জানতে চাই, কে সে? কে আমাকে এভাবে ঘোরাচ্ছে? কে আমার কাছ থেকে জান্নাতের চাবি কেড়ে নিয়ে, জাহান্নামের তালা খুলছে? সে তো আর কেউ নয়; সে তো শয়তানের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, লাগামহীন নফস। নফসের ধোঁকায় পড়ে আমরা কতশত গোনাহ করছি, তার কোন হিসেব নেই। নিভু নিভু প্রদীপ থেকে আলো গ্রহণ করতে গিয়েও, বঞ্চিত হতে হয়েছে বহুবার। যখনই কোন নেক কাজ করতে যাই, তখনই সেখানে নফসের বাধা আসে। যখনই অশ্লীলতা থেকে দূরে সরে থাকতে চাই, তখনই নফসের প্ররোচনা শুরু হয়ে যায়। মোটকথা, আমরা যত গোনাহ-ই করছি, বেশিরভাগ নফসের ধোঁকায় পড়েই করছি। শুধু তাই নয়—আজ-ই ফার্স্ট, আজ-ই লাস্ট— নফসের এই প্রধান ধোঁকা আমাদের যে কত ক্ষতি করছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। বক্ষমান বইটি সম্পূর্ণ নফসের ওপর লিখিত। নফস কী? লাগামহীন নফসের দ্বারা আমরা কীভাবে প্রভাবিত? এর দ্বারা আমরা কতটা ক্ষতিগ্রস্ত? এর দ্বারা আমাদের কী কী ক্ষতি হচ্ছে? কোন গোনাহ কার দ্বারা হচ্ছে? কে সবচে' বড় শত্রু? নফসের ব্যাধি কী কী? নফস নিয়ন্ত্রণ করবো কীভাবে? নফস নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে আমরা কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হবো, ইত্যাদি আরো কিছু বিষয় নিয়ে এই বইয়ে তাত্ত্বিক আলোচনা করা হয়েছে, আলহামুলিল্লাহ। যাহোক, গোনাহ থেকে বিরত থাকতে, আর নেক কাজে অগ্রসর হতে সর্বপ্রথম আমাদের নফসের বিরুদ্ধে বিজয় অর্জন করতে হবে। নিজের মধ্যে লাগামহীন নফস পুষে কখনো গোনাহ থেকে বিরত থাকা যাবে না। মনে রাখবেন, নফস ঠিক তো সব ঠিক। তাই, সর্বপ্রথম আমাদের নফসের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। আর এই লড়াইয়ে বক্ষমান বইটি আপনার আমার জন্য খুবই উপকারী হবে, ইন শা আল্লাহ।
মাহমুদ বিন নূর। উদীয়মান তরুণ আলেম। বর্তমান সময়ের সম্ভাবনাময়ী দা'ঈ। মননশীল এবং সৃজনশীল প্রতিভাধর এই লেখক জন্মগ্রহণ করেন হবিগঞ্জ জেলার জালালাবাদ গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে। পড়াশোনা শেষ করেন কওমি মাদ্রাসা থেকে।
লেখালেখির যাত্রা শুরু হয়—'প্রত্যাবর্তনের প্রতিশ্রুতি' বই দিয়ে। অতঃপর, আমাদের এই ঠুনকো জীবনে যে সকল ভুল-ভ্রান্তি হয়ে থাকে, সেগুলো সমাধানের লক্ষ্যে লেখক প্রকাশ করেন তার দ্বিতীয় গ্রন্থ, 'দর্পণ'। সর্বশেষ প্রকাশিত হয়, পাঠকপ্রিয় বই-' নফসের বিরুদ্ধে লড়াই'। এছাড়াও তার সম্পাদিত 'আতশকাচে দেখা বাদশাহ হারুনুর রশিদ' ও 'পরিশুদ্ধ ক্বলব' নামক দু'টি বই-ও রয়েছে। ভ্রান্তির বেড়াজালে আটকে পড়া এই দিকভ্রান্ত মুসলিম উম্মাহ'র হাতে আলোর মশাল তুলে দিতে লেখকের অনবরত আপ্রাণ এই ক্ষুদ্র প্রয়াস।