"বাবার ছায়ায় বেড়ে ওঠা" বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ নব্বইয়ের গণআন্দোলনে স্বৈরশাহীর পতনের পর আনন্দিত হয়ে ভেবেছিলাম, এবার আমরা চিরকালের জন্য গণতন্ত্র পেয়ে গেছি। কিন্তু কথিত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কিছুদিন পরই দেখা গেল, বণিকরা হয়ে উঠলেন রাজনীতিক এবং রাজনীতিকরা বণিক। জনগণের পোড়া-কপাল আর জোড়া লাগল না, বরং একনায়কতন্ত্রের বদলে এল দলতন্ত্র ও বণিকতন্ত্র। কারণ যারা দীর্ঘকাল মাঠে-ঘাটে জনগণের পাশে থেকে জননেতা হয়ে উঠেছিলেন, তাঁরা ধীরে ধীরে দৃশ্যের বাইরে চলে গেলেন এবং ধনবান বণিকরা অর্থবলে ক্ষমতাকাঠামোর কেন্দ্রে চলে এলেন। গত তিন দশকের ‘গণতান্ত্রিক’ রাজনীতির চেহারা-চরিত্রে কোনো বদল হয়নি, বরং বণিকতন্ত্রই রাষ্ট্রের মূল চালিকাশক্তিতে পরিণত হয়েছে, যাদের দৃষ্টি গণমানুষের চেয়ে নিজেদের পকেটের দিকেই। এই বাস্তবতায়, কোনো রাজনীতিককে যখন দেখি পারিবারিক ঐতিহ্যের পরম্পরায় গণসংলগ্ন থেকে রাজনীতির মাঠে আসছেন, তা তিনি যে দল বা মতের অনুসারীই হোন না কেন, একটু ভরসা বোধ করি। কারণ গণতান্ত্রিক রাজনীতির প্রধান শর্ত জনগণের সঙ্গে দায়বদ্ধতা এবং তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও সুখ-দুঃখের সঙ্গে নাড়ির যোগ থাকা। এটিই তাদের প্রাসাদ-রাজনীতি থেকে পৃথক ও বলদর্পী হওয়া থেকে রক্ষা করে। কারণ তারা জানেন, শেষ পর্যন্ত জনতার কাছেই ফিরে যেতে হবে। অন্যদিকে এ রাজনীতির ব্যবহারিক শিক্ষাও আসে মাটি ও মানুষের কাছ থেকেই। সাবেক সাংসদ ডা. দেওয়ান সালাউদ্দিন বাবুর সুলিখিত বাবার ছায়ার বেড়ে ওঠা বইটি পড়তে গিয়ে সে-কথাই বারবার অন্তরে বাজছিল। তাঁর পিতা দেওয়ান ইদ্রিস সাভারের মতো জায়গায় টানা ৪৫ বছর ছিলেন জনপ্রিয় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান এবং একবার সংসদ সদস্য। তাই নিয়তি তাঁকেও রাজনীতির পথে নিয়ে এসেছে এবং তিনিও পিতার মতোই সাহসী ও সজ্জন। ফলে রাজনীতি তাঁর কাছে গণদায়িত্ব। অন্যদিকে তিনি একই সঙ্গে সমাজ সাহিত্য ইতিহাসের নিবিড় পাঠক, পর্যবেক্ষক ও লেখক। ফলে এই লেখায় বাবাকে কেন্দ্র রেখে বিগত প্রায় এক শতাব্দীর বিশেষভাবে স্থানীয় এবং কখনো কখনো জাতীয় ইতিহাসের নানা উপকরণ এবং নিজের হয়ে ওঠার বর্ণনা দিয়েছেন সহৃদয় ভাষায়। গণরাজনীতিতে আগ্রহী সবার জন্যেই এ বই থেকে বহু কিছু জানা-শেখা-বোঝার আছে বলে এই অধম মনে করি। সৈকত হাবিব কবি ও সাংবাদিক