১৮৮০ খ্রিস্টাব্দে নানিবাড়ি থেকে পালিয়ে যান গোর্কি। শুরু হয় তাঁর সংগ্রামী জীবন। বেঁচে থাকার জন্য সেই কিশোর বয়স থেকেই গোর্কি কাজ করেছেন মুচির দোকানে, রুটির দোকানে ও কারখানায়, বিস্কুট ফ্যাক্টরিতে, চাকরি করেছেন মুদি দোকানের বাঁধা মজুর হিসেবে, মানুষের বাগানে কাজ করেছেন মালি হিসেবে, স্টিমারের হেঁসেলে করেছেন বয়-বেয়ারাগিরি, জেলেদের মাছের আড়তে পাহারাদার, তাদের নৌকায় গুণ টানার কাজ, রেলস্টেশনে দারোয়ানগিরি। অনেক পরে, যখন তিনি লেখক হিসেবে খ্যাতির তুঙ্গে, সেই সময় আন্তন চেখভকে এক চিঠিতে গোর্কি লিখেছিলেন, "দশ বছর বয়স থেকে আমাকে নিজের রাস্তা বেছে নিয়ে চলতে হয়েছে। লেখাপড়া যে শিখব, তার জন্য কোনো পয়সাকড়ি ছিল না। আমি কেবল জীবন আর কাজ গলাধঃকরণ করেছি। এর বাইরে আর কিছুই করতে পারিনি আর জীবন তার কিল-চড়-ঘুষি মেরে আমাকে তাতিয়ে রেখেছে।" এমন অমানুষিক পরিশ্রম এবং অমানবিক জীবনযাপনের মধ্যেও নিজেকে ভেঙে পড়তে দেননি তিনি। এসবের মধ্যেই চালিয়ে গেছেন পড়ার কাজ। তাঁর প্রতিদিনের কাজের সময় ছিল অনেক দীর্ঘ। যেমন স্টিমারের রান্নাঘরে তাঁকে কাজ করতে হতো সকাল ছয়টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত। কিন্তু এখানেও তাঁর বই পড়ার বিরাম ঘটেনি। সৌভাগ্যক্রমে সেই স্টিমারের বাবুর্চি নিজেও ছিল গ্রন্থপ্রেমী।
(মার্চ ২৮, ১৮৬৮ – জুন ১৮, ১৯৩৬) বিখ্যাত রুশ সাহিত্যক। তিনি নিজেই তার সাহিত্যক ছদ্মনাম হেসেবে বেছে নেন 'গোর্কি' অর্থাৎ 'তেতো' নামকে। তার অনেক বিখ্যাত রচনার মধ্যে মা একটি কালজয়ী উপন্যাস। প্রথম জীবন মাক্সিম গোর্কি নিঞ্জি নভগরদ এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ৯ বছর বয়সে পিতৃমাতৃহীন হন। ১৮৮০ সালে মাত্র ১২ বছর বয়সে তিনি তার দাদীমাকে খুঁজতে গৃহ ত্যাগ করেন। ১৮৮৭ সালে তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। পরবর্তীতে তিনি বাড়ি থেকে বের হয়ে যান এবং দীর্ঘ ৫ বছর ধরে পায়ে হেঁটে সমগ্র রাশিয়া ভ্রমন করেন। তিনি ১৮ জুন ১৯৩৬ (৬৮ বছর) সালে মৃত্যু বরণ করেন।