ভূমিকা বাংলাদেশের বিশিষ্ট কবি ও কথাসাহিত্যিক আনোয়ার হোসেন বাদল চিকিৎসার জন্যে কিছুদিন আগে দক্ষিণ ভারতের ভেলোর শহরে গিয়েছিলেন। সাথে ছিলেন তার আজীবন সহযাত্রী, সহযোদ্ধা আমাদের প্রিয় সুলতানা ভাবী। বাদল ভাই ভাবীর সাথে নানান জায়গার ছবি তুলছেন আর তাৎক্ষণিক অভিজ্ঞতা লিখে পোস্ট দিচ্ছেন। আমিও মজা করে কমেন্ট করে যাচ্ছি সেইসব পোস্টে। প্রথমদিকে সাদামাটা পোস্ট ভেবেই গভীরে তেমন ঢোকার চেষ্টা করিনি। কিন্তু সময় যতোই যেতে থাকে পোস্টগুলো আমাকে চুম্বকের মতো টানতে থাকে। একসময়ে অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে বাদল ভাইয়ের ভ্রমণবৃত্তান্তের অপেক্ষায় থাকি, কখন তিনি পোস্ট দিবেন, কখন সেই আখ্যানগুলো পড়বো। অবস্থা যখন এমন পর্যায়ে একদিন বলেই ফেললাম যে লেখাগুলোকে মলাটবদ্ধ করলে একটি ভালো বই হতে পারে। উপযাচক হয়ে এটাও বললাম যে যদি কখনো লেখাগুলো মলাটবদ্ধ হয় আমিই লিখবো এর মুখবন্ধ। বলেতো দিয়েছি কিন্তু তখন কি আর জানতাম যে এই গুরুদায়িত্ব আমার ঘাড়েই চাপবে! সেদিন হঠাৎই বাদল ভাইয়ের ফোন, ‘কমরেড, ভারতে কয়েকদিন নামের বইটি আসছে আগামী বইমেলায়। ভূমিকা কিন্তু আপনাকেই লিখতে হবে।’ আমিতো সপ্তম আসমান থেকে পড়লাম একেবারে জমিতে। যাইহোক, সচরাচর ভ্রমণকাহিনী বলতে আমরা যা বুঝি আনোয়ার হোসেন বাদল এর ‘ভারতে কয়েকদিন’ সে অর্থে কিন্তু কোনো ভ্রমণকাহিনী নয়। বরং এটি হচ্ছে সাদা চোখে দেখা সাদামাটা অভিজ্ঞতার এক নির্মোহ বিবরণ, কিছু জানা কথা, কিছু অজানা তথ্যের প্রকাশ। বইটি এমন সহজ-সরল ভাষায় লিখিত যে—পড়ার সময় মনে হতে পারে পাঠক বই পড়ছেন না বরং লেখকের সাথে সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ভারতের নানান শহর। নিজের চোখেই পাঠক দেখছেন ভারতের ইতিহাস-ঐতিহ্য, স্থাপনা আর বিচিত্র প্রকৃতি। আলোচ্য বইটিতে পাঠকের পরিচয় ঘটবে ভারতের ঐতিহাসিক শহর কোলকাতা, তৃতীয় বৃহত্তম শহর দক্ষিণ ভারতের চেন্নাই আর ভেলোরের ইতিহাস-ঐতিহ্য, শিল্পসংস্কৃতি ও স্থাপত্যকর্মের সাথে। বইটি বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এক অমরকীর্তি হিসেবে স্বীকৃত হবে বলে আমার বিশ্বাস।
কবি ও উপন্যাসিক আনোয়ার হোসেন বাদল, দখিন জনপদের পায়রা তীরবর্তী পটুয়াখালীর রাজগঞ্জ গ্রামের মানুষ। গ্রামটি অনেক আগেই নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। কবির বাপজান জয়নাল আবেদীন মুন্সী স্থানীয় একটি মসজিদের ইমাম ছিলেন মা হালিমা খাতুন পরহেজগার একজন বিদুষী মহিলা। লেখনীর মধ্যে বরাবরই উঠে এসেছে ভূমিহীন প্রান্তিক মানুষের কথা, লেখক নিজেও তাদেরই একজন। সমাজতান্ত্রিক ভাবাদর্শে বড় হয়েছেন সঙ্গত কারণেই ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার এবং সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে এক জীবনের লড়াই। সামরিক, বেসামরিক নানাবিধ পেশায় কাজ করে বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা কুড়িয়েছেন লেখক যা তাঁর লেখায় দৃশ্যমান। নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়া ভূমিহীন এ মানুষটির আর্থিক টানাপোড়েন কোনোদিনই পিছু ছাড়েনি, তবু এই দৈন্যতাকে তিনি খোদার আশীর্বাদ হিসেবে নিয়েই মাথা উঁচু করে পথ চলেছেন।