প্রান্তিক মানুষের স্বপ্ন হারানোর এক বিয়োগাত্মক গল্প ‘বিবর্ণ পাণ্ডুলিপি’। একাত্তরের পরাজিত শক্তির উত্থান এবং আমাদের সামগ্রিক অবক্ষয়ের সূত্রপাতও এই সময়ে শুরু হয়, যার বাস্তব চিত্র উঠে এসেছে এ উপন্যাসে। স্বাধীনতার অব্যবহিত পর আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছিল দুর্বৃত্তায়ন। একাত্তরের পরাজিত শক্তির উত্থান এবং আমাদের সামগ্রিক অবক্ষয়ের সূত্রপাত হয়, যার বাস্তব চিত্র উঠে এসেছে এ উপন্যাসে। উপন্যাসের ঘটনাকাল আশির দশক, স্থান- উত্তরবঙ্গের সীমান্ত অঞ্চল। রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে সীমান্তনির্ভর সাধারণ মানুষের স্বপ্ন-সাধ, আশা-আকাক্সক্ষা দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতি এবং পেশিশক্তির অপব্যবহার এ উপন্যাসের মূল উপজীব্য। মানুষের সুকোমল বৃত্তি এবং পবিত্র চাওয়া-পাওয়া অপশক্তির কাছে কী নিষ্ঠুরভাবে পরাজিত হতে পারে, এক সময়ের সীমান্তরক্ষী লেখক তা আশ্চর্য মুন্সিয়ানা দিয়ে উঠিয়ে এনেছেন। লেখক নিজে তার যৌবনের প্রথমে একযুগ সময় ধরে সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সে-সময়ে লেখকের চারপাশে ঘটে যাওয়া গল্পকেই উপন্যাসে রূপ দিয়েছেন। ফলে ‘বিবর্ণ পাণ্ডুলিপি’ উপন্যাসের পটভূমি খুবই নান্দনিক আর বাস্তবসম্মত হয়ে উঠেছে। গল্পে উঠে এসেছে সীমান্তে বসবাসকারী প্রান্তিক মানুষের জীবনের চালচিত্র, শিল্প-সংস্কৃতি, প্রেম-বিরহ আর দেশপ্রেমিক চৌকস সীমান্ত সৈনিকদের নীতি-আদর্শের প্রামাণ্য চিত্র। লেখকের বাপজানের গল্প, নাটুয়া প্রণয়, অনার্য জীবন, কৃষ্ণপক্ষের আলো, দৃষ্টিপাত ও দ্বিতীয় গোলক উপন্যাসগুলোর মতো ‘বিবর্ণ পাণ্ডুলিপি’ একটি সুখপাঠ্য ও কালোত্তীর্ণ সাহিত্যকর্ম হিসেবে পাঠক হৃদয়ে ঠাঁই করে নেবে বলে মনে করি। উপন্যাসটি সকলের ভালো লাগবে বলে আমার বিশ্বাস। সবার ভালো লাগলে লেখক ও প্রকাশকের শ্রম সার্থক হবে। সৈয়দ মাজহারুল পারভেজ বহুমাত্রিক লেখক
কবি ও উপন্যাসিক আনোয়ার হোসেন বাদল, দখিন জনপদের পায়রা তীরবর্তী পটুয়াখালীর রাজগঞ্জ গ্রামের মানুষ। গ্রামটি অনেক আগেই নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। কবির বাপজান জয়নাল আবেদীন মুন্সী স্থানীয় একটি মসজিদের ইমাম ছিলেন মা হালিমা খাতুন পরহেজগার একজন বিদুষী মহিলা। লেখনীর মধ্যে বরাবরই উঠে এসেছে ভূমিহীন প্রান্তিক মানুষের কথা, লেখক নিজেও তাদেরই একজন। সমাজতান্ত্রিক ভাবাদর্শে বড় হয়েছেন সঙ্গত কারণেই ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার এবং সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে এক জীবনের লড়াই। সামরিক, বেসামরিক নানাবিধ পেশায় কাজ করে বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা কুড়িয়েছেন লেখক যা তাঁর লেখায় দৃশ্যমান। নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়া ভূমিহীন এ মানুষটির আর্থিক টানাপোড়েন কোনোদিনই পিছু ছাড়েনি, তবু এই দৈন্যতাকে তিনি খোদার আশীর্বাদ হিসেবে নিয়েই মাথা উঁচু করে পথ চলেছেন।