মুসলমানদের বিরুদ্ধে অগণিত শয়তান কাজ করে। প্রত্যেক শয়তানের কাজ এবং দায়িত্ব পৃথক পৃথক। তার মুকাবেলায় আল্লাহ তাআলা মুসলমানদের নিরাপত্তার জন্য তাঁর ফেরেশতাগণের মাধ্যমে রহমানি বলয় প্রতিষ্ঠা করে রেখেছেন। কিন্তু এই রহমানি নিরাপত্তা নেহায়তই স্পর্শকাতর বিষয়। তার স্পর্শকাতরতার অনুমান নামাজি ব্যক্তির সামনে দিয়ে অতিক্রম না করার হুকুম থেকে করা যেতে পারে। নামাজি নামাজ পড়ছেন। তার সামনে দিয়ে যদি কেউ চলে যায়, তাহলে নামাজের কী ক্ষতি হবে? নামাজি তো আগের মতোই নামাজ পড়ছে। অথচ হাদিসে নামাজির সামনে দিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে কত কঠোর নিষেধাজ্ঞা এসেছে। এই রুহানি নিরাপত্তা পাক-পবিত্রতা, সত্য-সততা, এখলাস-একনিষ্টতা এবং আল্লাহর সাথে সম্পর্কের ওপর প্রতিষ্ঠিত। যখনই এই সম্পর্ক দুর্বল হয়ে পড়বে, তখন মুসলমানের রহমানি প্রতিরক্ষাব্যবস্থাও দুর্বল হয়ে পড়বে। ইসলামের দুশমনরা আমাদের এই রহমানি নিরাপত্তাকে গভীরতার সাথে পর্যবেক্ষণ করেছে। তারা জানে মুসলমানদেরকে আল্লাহর রহমত থেকে দূরে সরানোর জন্য কোন কোন বিষয় থেকে বিরত রাখতে হবে এবং কোন কোন বিষয়ে লিপ্ত রাখতে হবে। আল্লাহর এই দুশমনরা রুহানি নিরাপত্তায় এমন ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে যে, রহমতের জায়গাগুলোও তাদের শয়তানি হস্তক্ষেপ থেকে নিরাপদ নয়। সাধারণ ব্যবহারিক জিনিসগুলোও নষ্ট করে মুসলমানের সামনে উপস্থিত করছে। নতুন শিক্ষা, সাইন্স, টেকনোলজি এবং সভ্যতার মধ্যেও তাদের বিষাক্ত ছোবল স্পষ্ট পরীলক্ষিত হচ্ছে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে রহমানি বলয়ের সাথে সম্পৃক্ত সবগুলো বিষয়ে আগাম সতর্ক করেছেন। কোন আমল করে, কোন কথা থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে আমরা শয়তান, জিন এবং জাদু থেকে নিজেদের প্রতিরক্ষা করতে পারি। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- لَا تَدْخُلُ الْمَلَائِكَةُ بَيْتًا فِيْهِ كَلْبٌ وَلَا صُوْرَةٌ. অর্থ : ওই ঘরে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না, যার মধ্যে কুকুর অথবা কোনো প্রাণীর ছবি আছে। মুসতাদরাকে হাকিমের বর্ণনায় জুনুবী (নাপাক ব্যক্তি) লোকের কথাও উল্লেখ আছে। আর আবু দাউদ শরিফের বর্ণনায় ঘন্টির কথাও উল্লেখ আছে। হাদিসে বর্ণিত এই রহমানি নিরাপত্তা বলয় দেখুন এবং বর্তমান মুসলমানদের ঘরের অবস্থা দেখুন। ছবি দিয়ে তো আগেই ঘর ভর্তি ছিলো, আর এখন কুকুর এবং শুকরের কার্টুন ঘরগুলো এমনভাবে দখল করেছে যে, শিশুরা তো কোলে নিয়েই ঘুরে বেড়ায়। হিন্দুদের মতো ঘরের দরজায় ঘন্টি ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে। এটা সেই ঘন্টি, যেটি ছাদ থেকে ঝুলিয়ে দেয়া হয় এবং হাতে বাজানো হয়, কলিং বেল নয়। যাতে কোনো ফেরেশতা যদি দরজায় এসেও যায়, তাহলে সে দূর থেকেই পালায়। সুতরাং আমাদের প্রিয় নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন আমরা নিজেদের, শিশুদের এবং আমাদের ঘরকে কীভাবে জাদু, জিন এবং শয়তান থেকে রক্ষা করব। যে কোনো কাজ শুরু করার সময়, ঘরে প্রবেশের সময়, সকাল-সন্ধ্যায় অথবা সফরে বের হওয়ার সময় মাসনুন দুআসমূহ শিখিয়েছেন, যাতে রহমানি প্রতিরক্ষা বলয় শক্তিশালী থাকে। রাতে ঘুমানোর দুআ, বাথরুমে প্রবেশের দুআ, বাজারে প্রবেশের দুআ সবগুলোই হাদিসের কিতাবসমূহে মজুদ রয়েছে। আপনি হাদিসে বর্ণিত দুআগুলোতেই ফিকির করুন, তাহলে আপনিই জানতে পারবেন শয়তান কোন কোন জায়গায় থাকে এবং তাদের থেকে কীভাবে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতে হয়।