গৌতম বুদ্ধের আবির্ভাব ও তাঁর ভাবাদর্শ এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছিল গণ-চেতনায়, তার প্রকাশ ঘটেছিল প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গিতে, ব্যক্তিগত জীবনচর্চায় l পাশাপাশি বাণিজ্যের ক্রম-প্রসারণে ধনজীবী বণিক সম্প্রদায়ের প্রভাব বৃদ্ধি পাচ্ছিল সমাজে l এরই সঙ্গে শাস্ত্রচর্চার আদি অকৃত্রিম ঐতিহ্যের সঙ্গে মেধা, মুক্তচিন্তা ও উদার দৃষ্টির মেলবন্ধনে সমাজে কিছু নতুন মানুষ এসেছিলেন যাঁরা নতুন ভাবে ভাবতে ও ভাবাতে পারঙ্গম l নারীরাও ছিলেন এই তালিকায় l প্রচলিত রীতির অন্যায্য দিক নিয়ে তাঁরা প্রশ্ন তুলতেন l সমাজের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে প্রয়োজনে প্রতিবাদ করতেন l সে রকমই এক ঘটনার বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে এই আলেখ্যে l সাকেতের শ্রেষ্ঠী ধনঞ্জয়, শ্রাবস্তীর শ্রেষ্ঠী সুদত্ত ও মৃগারের অন্তঃপুরের নারীদের মনোজগতের নানা প্রশ্ন ও প্রতিবাদের তীক্ষ্ণ বাদানুবাদ ও কাটাছেঁড়ার সাহসী প্রকাশ নিয়ে এই আখ্যান l সেখানে উপাসিকা বিশাখা স্বয়ং বুদ্ধদেবকে প্রশ্ন করতেও দ্বিধা করছেন না l আবার বুদ্ধের প্রদর্শিত পথ ধরেই সমাজে নারীর অবস্থানকে তিনি বোঝার চেষ্টা করছেন l কিছু কিছু বক্তব্য যথার্থভাবে প্রকাশ করতে কখনও কখনও অতীতের দিকে দৃষ্টি দিতে হয় l টি.এস এলিয়ট একেই বলেছেন Mythic Method l অতীতের পৃষ্ঠা থেকে সেই মিথকে খুঁজে বের করে আনতে হয় l এবং এই মিথের মধ্যে থাকে নানা ডায়ামেনশন l এই আখ্যানে কিছু মৌলিক সামাজিক সমস্যাকে তুলে ধরা হয়েছে যা আজও সমান ভাবে প্রাসঙ্গিক l তাই এই আখ্যান আজও মানবমনকে সংবেদিত করবে l একই সঙ্গে এ কথাও বলার যে এই লেখার বর্ণনায় রয়েছে মহাকাব্যিক গাম্ভীর্য l ভাষাই এর বাহক l তৎসম শব্দ ও পালি ভাষার সুপ্রযুক্ত প্রয়োগ আখ্যানের সময়কালকে ধরতে সাহায্য করেছে l নারীর প্রতিবাদের মূল সুরটিও তাতে চিরন্তন রূপে বাঁধা পড়েছে l
মধুমিতা চক্রবর্তী একজন অজনপ্রিয় এবং অপরিচিত কথাশিল্পী। যদিও তাঁর লেখার ক্ষেত্র বেশ বিস্তৃত। কবিতা দিয়ে যাত্রা শুরু হলেও ছােট গল্প, নিবন্ধ, উপন্যাস- সকল ক্ষেত্রেই তার অবাধ বিচরণ। যে কোনাে লেখার মূল বিষয়বস্তু দেশপ্রেম। বিশ্বাস করেন সত্ত্বার দ্বিতীয় জন্ম হয়েছে একাত্তরে, মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে। ১৯৮৪-১৯৮৫ খ্রি:-এ পরপর দু'বার বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে মনােনীত হন। প্রথমবার প্রশাসন এবং দ্বিতীয়বার শিক্ষা ক্যাডারের জন্য। দ্বিতীয় মনােনয়ন নিয়েই পথচলা। প্রভাষক থেকে অধ্যাপক, সর্বশেষ অধ্যক্ষ ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলার ঐতিহাসিক বিদ্যাপীঠ সরকারি তােলারাম কলেজের: বর্তমানে পি আর এল-এ আছেন। একান্ত আপন পাঠক গােষ্ঠীর নিভৃত প্রশংসার সাথে সাথে অরাজনৈতিক বেগম আয়েশা ফয়েজ সাহিত্য পুরস্কার-২০১৭, তাঁকে আপুত করেছে- ধন্য করেছে। সাহিত্য চর্চার প্রেরণা-উদ্দীপনা সকল কিছু এখান থেকেই উৎসারিত। ‘নীরার নয় বছর তাঁর সপ্তম উপন্যাস।