জয় গোস্বামী বিশ্বাস করেন, একজন কবি যে কবিতা রচনা করেন, তা নেহাত লেখালেখা খেলা নয়। কবিতা তাঁর মাথা তোলবার, বেঁচে ওঠবার, ভালবাসবার অনন্য অবলম্বন। তিনি মানেন, স্বপ্নের মতো কবিতাতেও সমস্তই সম্ভব। তবু, কবিতার জগৎ শুধু স্বপ্নেরই জগৎ নয়। কবিতা কবির ব্যাপ্ত, বিশাল আত্মজীবনী। এক একটি কবিতা আত্মজীবনীর এক একটি পৃষ্ঠা। কবিতা সংগ্রহের এই চতুর্থ খণ্ডে ধরা রইল জয় গোস্বামীর সেই আত্মজীবনীরই একটি গুরুত্বপূর্ণ সৃষ্টিপর্ব। প্রায় ধারাবাহিকভাবে জয় তাঁর পাঠকদের উপহার দিয়ে চলেছেন একের পর এক অভিনব কাব্যগ্রন্থ। । অবচেতনের কাছে নিজেকে সমর্পণ করে একই কবিতা একাধিকবার লেখা নয়, প্রতিটি গ্রন্থেই তিনি স্বতন্ত্র জয়। বিষয়ে, ভঙ্গিতে, শব্দে, নৈঃশব্দ্যে, ছন্দে, ছন্দোহীনতায়। এই খণ্ডে সন্নিবেশিত হয়েছে আটটি কাব্যগ্রন্থ। এখানে আছে ‘জগৎবাড়ি', 'হরিণের জন্য একক’ ‘সন্তানসন্ততি’, ‘বিকেলবেলার কবিতা ও ঘাসফুলের কবি’, ‘মৌতাত মহেশ্বর’, ‘সন্ধ্যাফেরি ও অন্যান্য কবিতা’, ‘আমার শ্যামশ্রী ইচ্ছে আমার স্বাগতা ইচ্ছেগুলি’, ‘শাসকের প্রতি'। সব মিলিয়ে এই কবিতাসংগ্রহ এক সৃষ্টিমগ্ন, সাৰ্থক কবির রূপ-রূপান্তরের চলচ্ছবি।
জয় গোস্বামী ১৯৫৪ সালের ১০ নভেম্বর পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার রানাঘাটে জন্ম গ্রহণ করেন।তিনি হচ্ছেন একজন ভারতীয় কবি। তিনি বাংলা ভাষার এক আধুনিক কবি এবং উত্তর-জীবনানন্দ পর্বের অন্যতম জনপ্রিয় বাঙালি কবি হিসাবে পরিগণিত। জয় গোস্বামীর জন্ম কলকাতা শহরে। ছোটবেলায় তাঁর পরিবার রানাঘাটে চলে আসে। তখন থেকেই তাঁর স্থায়ী নিবাস সেখানে। তাঁর পিতা রাজনীতি করতেন, তাঁর হাতেই জয় গোস্বামীর কবিতা লেখার হাতে খড়ি। ছয় বছর বয়সে তাঁর পিতার মৃত্যু হয়। তাঁর মা শিক্ষকতা করে তাঁকে লালন পালন করেন। জয় গোস্বামীর প্রথাগত লেখা পড়ার পরিসমাপ্তি ঘটে একাদশ শ্রেণীতে থাকার সময়। সাময়িকী ও সাহিত্য পত্রিকায় তিনি কবিতা লিখতেন। এভাবে অনেক দিন কাটার পর দেশ পত্রিকায় তাঁর কবিতা ছাপা হয়। এর পরপরই তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। কিছুদিন পরে তাঁর প্রথম কাব্য সংকলন ক্রিসমাস ও শীতের সনেটগুচ্ছ প্রকাশিত হয়। ১৯৮৯ সালে তিনি ঘুমিয়েছ, ঝাউপাতা কাব্যগ্রন্থের জন্য আনন্দ পুরস্কার লাভ করেন। ২০০০ সালের আগস্ট মাসে তিনি পাগলী তোমার সঙ্গে কাব্য সংকলনের জন্য সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন।