জাহাঙ্গীর আলম জাহান রচিত ৫১তম বই 'তুমার লাগি পেটটা পুড়ে' কিশোরগঞ্জের আঞ্চলিক ভাষায় রচিত একটি ব্যঞ্জনাধর্মী মৌলিক কাব্যগ্রন্থ। বইটির প্রতিটি কবিতা আঞ্চলিক ভাষায় রচিত এবং কবিতাগুলো অন্ত্যমিলে রচিত হওয়ায় পাঠকের মনে একটি অসাধারণ ধ্বনিময়তা তৈরি হয়। এককালের পূর্ব ময়মনসিংহ নামে খ্যাত আজকের কিশোরগঞ্জ জেলা লোকজ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সমৃদ্ধ একটি উর্বর জনপদ। ড. দীনেশ চন্দ্র সেন সংকলিত 'মৈমনসিংহ গীতিকা' ও ' পূর্ববঙ্গ গীতিকা'র অধিকাংশ পালা ও উপাখ্যান এ অঞ্চল থেকেই সংগৃহিত। এ জেলার ভাষা দেশের অন্যান্য অঞ্চলের ভাষার মতো দুর্বোধ্য ও উচ্চারণ-অযোগ্য নয়। এখানকার আঞ্চলিক বাগভঙ্গির মধ্যে কোনো কৃত্রিমতা বা দুর্বোধ্যতা নেই। দেশের যে কোনো অঞ্চলের মানুষ এ জেলার ভাষা সহজেই বুঝতে পারেন। ভাষার বৈচিত্র্য ও মাধুর্য পাঠককে অন্য রকম ভালো লাগায় আচ্ছন্ন করে। কিশোরগঞ্জের আঞ্চলিক ভাষার অনেক শব্দ আমরা মৈমনসিংহ গীতিকায় দেখতে পাই। যেমন- আশ্বিপশ্বিপ্রতিবেশি, আউজাত আড়ালে ইত্যাদি। জাহাঙ্গীর আলম জাহান বৈচিত্র্যপূর্ণ সে সকল আঞ্চলিক শব্দ ও বাগভঙ্গি দিয়ে তার এ বইয়ের প্রতিটি কবিতাকে বাঙ্ময় করে তুলেছেন। যেমন- বইয়ের শিরোনামে রচিত কবিতার দুটি লাইন এ রকম- "তুমার লাগি পেটটা পুড়ে কইলজা খালি জ্বলে/এইতা কথা আছিন নাতো বাঁশবাগানের তলে।" অথবা- জাকাত দেওয়ার নামে একশ্রেণির নব্য ধনী ব্যক্তি দরিদ্রদের মধ্যে জাকাত বিতরণের ছবি তুলে নিজের বড়ত্ব জাহিরের যে চেষ্টাটি করেন, তার প্রতি বিদ্রূপাত্মক শ্লেষ মিশ্রিত এ বইয়ের অন্য একটি কবিতা এ রকম- "জাকাত দিবাইন ভালা কথা ফডু তুলুইন ক্যারে/ মান্সের লগে বড়লুহি গপ্পো মারতাইন জ্যারে?/চিনছি চিনছি আফনেরারে নাই চিননের বাহি/ কিদ্দা অইছুইন টেহার মালিক হেই খবরও রাহি।" এই বইটি পাঠ করলে কিশোরগঞ্জের অনেক মৌলিক আঞ্চলিক শব্দ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে। প্রতিটি কবিতার পেছনে আঞ্চলিক শব্দের প্রমিত রূপটিও তুলে ধরা হয়েছে। ভাষা নিয়ে যারা গবেষণা করেন তাদের জন্যও বইটি উপকারে আসবে বলে মনে করি।