"চীনা ভূতের গল্প" বইটির 'শুরুর কথা' থেকে নেয়াঃ ভূত বলে আসলে যে কিছু নেই এ কথা এখন সবাই জানে। কিন্তু ভূত এক সময় ছিল। পুরােনাে সেই সব দিনে যখন সন্ধ্যের পর ঝুপ করে অন্ধকার নামতে, এখনকার মতাে ঝলমলে আলাে ছিল না, শহরের কোলাহল ছিল না, তখন মানুষের ভয় ছিল বেশি। এই ভয় পাওয়া মানুষদের আরও ভয় পাইয়ে দেয়ার জন্য ভূতের গল্প তৈরি করা হতাে, শুধু আমাদের দেশে নয়, সব দেশে, এমন কি চী দেশেও। তখনকার দিনে ভূতের ভয় ছিল, জমিদারের পেয়াদার ভয় ছিল, রাজার সেপাই বরকন্দাজের ভয় ছিল- ভয়ের আর অন্ত নেই। ছােট ছেলেমেয়েরা দুষ্টুমি করলে যেমন জুজুবুড়ির ভয় দেখানাে হয়, তেমনি বড়রাও অনেক রকম জুজুর ভয়ে সিঁটিয়ে থাকতাে। তবে আমাদের দেশের রূপকথার নায়করা যেমন চোখের পলকে ভূত-প্রেত, দত্যি-দানাের মুণ্ডুটি তলেয়ারের এক কোপে চক করে কেটে ফেলতাে, তেমনটি চীনেও পাওয়া যাবে। একদল লেখক তখন যেমন জমিদার বা রাজার হুকুম মতাে লিখতেন, মানুষকে ভূতভগবান-জমিদার সবাইকে ভয় পেতে শেখাতেন; আরেক দল লেখক ছিল যারা ভয় তাড়াবার জন্য লিখতেন। কিছুদিন আগে আমি একটা চীনা ভূতের গল্পের বই পেয়েছি। এতে আছে ভয় না পাওয়া ভূতের গল্প, দারুণ মজার। এসব গল্পের ভূতরা মানুষদের সুযােগ পেলে যদিও ভয় দেখায়, আবার মানুষের সাহস দেখলে নিজেরা ভয় পায়, কখনও লজ্জাও পায়, ভয় দেখাতে এসে উল্টো জব্দ হয়ে বাতাসে মিলিয়ে যায়। চীনের সভ্যতা যেমন পৃথিবীর ভেতর সবচেয়ে পুরােনাে, তাদের সাহিত্যও কম পুরােনাে নয়। এ বইয়ের গল্পগুলাে দেড় দু’হাজার বছরের পুরােনাে। গল্পগুলাে চীনা ভাষা থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন ইয়াঙ শিয়েন-ই এবং গ্ল্যাডিস ইয়াঙ। চীনা ভাষা যারা জানে তারা বলতে পারবে ওদের ছবির মতাে পুরােনাে দিনের গল্পের ভাষাও বেশ সাংকেতিক। গল্পগুলাে বাংলায় আমি অনুবাদ করেছি ক্ষুদে পাঠকদের জন্য, যে কারণে অনেক। স্বাধীনতা নিয়েছি। ছােটদের বােঝার জন্য অনেক জায়গায় সংলাপ কিংবা বর্ণনা বাড়াতে হয়েছে। ইংরেজিতে বইয়ের চমৎকার একটি ভূমিকা লিখেছেন সাহিত্যিক ও সমাজ বিজ্ঞানী হাে চি-ফ্যাঙ। বইটি ইংরেজিতে প্রথম বেরােয়। ১৯৬১ সালে। বড়দের জন্য লেখা বলে হাে ভূমিকা লিখেছেন বড়দের মতাে করে। ভূতের গল্পের রূপক অর্থ বের করেছেন তিনি। এ ভূমিকা ছােটদের জানার দরকার নেই। এ বই পড়ার আগে ছােটদের জানা দরকার হাজার বছর ধরে চীনের সাহসী মানুষরা ভূত-প্রেত যেমন মানে না, তেমনি ঈশ্বরকেও ভয় পায় না। এসব গল্পের মূল লেখকরা শত শত বছর আগের মানুষদের সম্পর্কে বলতে গিয়ে আমাদের এ তথ্যটিও জানিয়েছেন। সাহস ছিল বলেই চীনের মানুষরা শত শত বছর ধরে জমিদার কিংবা রাজার অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে, লড়াই করেছে। হাজার বছরের চীনা লেখক। লিখেছেন যারা ভূত আর ভগবানে বিশ্বাস করে তারা ভীরু, তাদের দিয়ে সমাজের কোনাে ভালাে। কাজ হয় না। সমাজের ভালাে করতে হলে, পুরােনাে ঘুণে ধরা পচে যাওয়া। সমাজ ভাঙতে হলে দরকার সাহসী মানুষের। এ বইয়ের গল্প ছােটদের সাহসী হতে শেখাবে।
শাহরিয়ার কবির বাংলাদেশের একজন খ্যাতিনামা লেখক, সাংবাদিক, ডকুমেন্টরী চলচ্চিত্র নির্মাতা। ১৯৫০ খ্রীস্টাব্দের ২০ নভেম্বর তিনি ফেনীতে জন্মগ্রহণ করেন। লেখক হিসাবে তার প্রধান পরিচয় তিনি একজন শিশুসাহিত্যিক। তার নির্মিত প্রামাণ্যচিত্রের মধ্যে জিহাদের প্রতিকৃতি অন্যতম।১৯৯২ সাল থেকে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বিপক্ষ শক্তির বিরূদ্ধে কাজ করে চলেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা সম্পূর্ণ করে শাহরিয়ার কবির ১৯৭২ সালে সাপ্তাহিক বিচিত্রায় সাংবাদিক হিসেবে যোগদান করেন এবং ১৯৯২ সাল পর্যন্ত নির্বাহী সম্পাদক পদে থাকেন। তিনি একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এর সাথে যুক্ত আছেন। শাহরিয়ার কবির বলেনঃ“ মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের ধ্বংস করা যায় না। বাংলাদেশে অধিকাংশ সময় নেতৃত্ব দিয়েছে ৭১’র পরাজিত শক্তি। তারা মুক্তিযুদ্ধের সব কিছু ধ্বংস করতে চেয়েছে কিন্তু পারেনি। তিনি বলেন, দেশের মানুষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায়। মহাজোট সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করেছে। আমরা বিশ্বাস করি ২০১৩ সালের মধ্যে শীর্ষ স্থানীয় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা সম্ভব হবে।