মুফতিয়ে আযম আবদুস সালাম চাটগামী রহিমাহুল্লাহ সেই মহামনীষীদের একজন ছিলেন, যারা নিজ দেশকে ছাপিয়ে জ্ঞান ও প্রজ্ঞার মাধ্যমে রাজত্ব করেছেন বিশ্বের আনাচকানাচে। করাচির বানুরিটাউনে গিয়েছিলেন হাদিস অধ্যায়নের তেষ্টা নিয়ে। এরপর আর ফেরা হয়নি দেশে। ততদিনে পাকিস্তান খুঁজে পেয়েছে একজন দক্ষ ফকিহকে। বানুরিটাউনের গ্র্যান্ড মুফতির আসনটি বোধহয় অপেক্ষা করছিলো তাঁরই জন্য, তিনি তাতে আসীন হলেন। ত্রিশটি বসন্ত কেটে গেলো। আস্থার পাত্র হয়ে উঠলেন তিনি; ছাত্র, শিক্ষক, সহকর্মী থেকে শুরু করে আপামর জনসাধারণের। শুধু পাকিস্তান নয়, গোটা বিশ্ব থেকে তাঁর কাছে আসতে থাকে জীবনঘনিষ্ঠ জিজ্ঞাসা, তিনি নির্লিপ্তকণ্ঠে বোধগম্য ভাষায় দিয়ে যান সমাধান।
এই সমাধানগুলো মানুষ চোখবুঁজে গ্রহণ করে নিতো, স্থিরতা পেতো হাজার হাজার জিজ্ঞাসু মন। বানুরিটাউনের প্রধান মুফতি তিনি। দারুল ইফতায় দৈনিক বিশ ত্রিশটা ফাতাওয়া আসে, মাসে প্রায় সাড়ে সাতশো, বছরে প্রায় নয় হাজার! এসব জিজ্ঞাসার জবাব কিছুটা তিনি লিখেন, বাকিগুলো সত্যায়িত হয় তাঁর হাতে। এভাবেই জমা হয়ে যায় লক্ষ লক্ষ জীবনঘনিষ্ঠ জিজ্ঞাসার সরল সহজ সমাধান। এই ফাতাওয়াগুলো হয়ে উঠে অমূল্য রত্ন। তাঁর নিজহাতে লেখা অমূল্য সে রত্নগুলো সংকলন হয়ে প্রকাশিত হয় 'আপ কি সুয়ালাত আওর ইনকা হল' নামে। প্রকাশের পরপরই সাড়া ফেলে আহলে ইলম থেকে নিয়ে পাকিস্তানের সাধারণ মানুষের মাঝে। বাংলা ভাষায় এর অনুবাদ করা ছিলো সময়ের দাবি, মানুষের চাহিদা। বহুল সমাদৃত প্রত্যাশিত সে বইয়ের অনূদিত গ্রন্থ হচ্ছে বক্ষ্যমাণ— হাদীসভিত্তিক ফাতাওয়া ও মাসাইল। মুফতিয়ে আযম আবদুস সালাম চাটগামী রহিমাহুল্লাহ সেই মহামনীষীদের একজন ছিলেন, যারা নিজ দেশকে ছাপিয়ে জ্ঞান ও প্রজ্ঞার মাধ্যমে রাজত্ব করেছেন বিশ্বের আনাচকানাচে। করাচির বানুরিটাউনে গিয়েছিলেন হাদিস অধ্যায়নের তেষ্টা নিয়ে। এরপর আর ফেরা হয়নি দেশে। ততদিনে পাকিস্তান খুঁজে পেয়েছে একজন দক্ষ ফকিহকে। বানুরিটাউনের গ্র্যান্ড মুফতির আসনটি বোধহয় অপেক্ষা করছিলো তাঁরই জন্য, তিনি তাতে আসীন হলেন। ত্রিশটি বসন্ত কেটে গেলো। আস্থার পাত্র হয়ে উঠলেন তিনি; ছাত্র, শিক্ষক, সহকর্মী থেকে শুরু করে আপামর জনসাধারণের। শুধু পাকিস্তান নয়, গোটা বিশ্ব থেকে তাঁর কাছে আসতে থাকে জীবনঘনিষ্ঠ জিজ্ঞাসা, তিনি নির্লিপ্তকণ্ঠে বোধগম্য ভাষায় দিয়ে যান সমাধান।
এই সমাধানগুলো মানুষ চোখবুঁজে গ্রহণ করে নিতো, স্থিরতা পেতো হাজার হাজার জিজ্ঞাসু মন। বানুরিটাউনের প্রধান মুফতি তিনি। দারুল ইফতায় দৈনিক বিশ ত্রিশটা ফাতাওয়া আসে, মাসে প্রায় সাড়ে সাতশো, বছরে প্রায় নয় হাজার! এসব জিজ্ঞাসার জবাব কিছুটা তিনি লিখেন, বাকিগুলো সত্যায়িত হয় তাঁর হাতে। এভাবেই জমা হয়ে যায় লক্ষ লক্ষ জীবনঘনিষ্ঠ জিজ্ঞাসার সরল সহজ সমাধান। এই ফাতাওয়াগুলো হয়ে উঠে অমূল্য রত্ন। তাঁর নিজহাতে লেখা অমূল্য সে রত্নগুলো সংকলন হয়ে প্রকাশিত হয় 'আপ কি সুয়ালাত আওর ইনকা হল' নামে। প্রকাশের পরপরই সাড়া ফেলে আহলে ইলম থেকে নিয়ে পাকিস্তানের সাধারণ মানুষের মাঝে। বাংলা ভাষায় এর অনুবাদ করা ছিলো সময়ের দাবি, মানুষের চাহিদা। বহুল সমাদৃত প্রত্যাশিত সে বইয়ের অনূদিত গ্রন্থ হচ্ছে বক্ষ্যমাণ— ফাতাওয়া ও মাসাইল।
মুফতি আবদুস সালাম চাটগামী ১৯৪৩ সালে দক্ষিণ চট্টগ্রামের আনোয়ারা থানার নলদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫৮ সালে গ্রামে প্রাথমিক পড়াশোনা শেষ করে বাবুনগর মাদরাসায় ভর্তি হন। তারপর ১৯৬৭ সালে চট্টগ্রামের জিরি মাদরাসায় থেকে দাওরায়ে হাদীস সম্পন্ন করেন। ১৯৬৭ সালে বাংলাদেশের প্রথম মুহাদ্দিস আল্লামা আবদুল ওয়াদুদ (রহ.)-এর নির্দেশনাক্রমে তিনি পাকিস্তানের জামিয়াতুল উলুম আল-ইসলামিয়া আল্লামা মুহাম্মদ ইউসুফ বানুরী টাউন করাচিতে ভর্তি হন এবং তৎকালীন মুহাদ্দিস আল্লামা মুহাম্মদ ইউসুফ বানুরী (রহ.)-এর তত্ত্বাবধানে প্রথম বছর তিনি উ”চতর হাদীসশাস্ত্র নিয়ে পড়াশোনা করেন এবং পরের বছর ইফতা বিভাগের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী হিসেবে তিনি আল-ফিকহুল ইসলামী নিয়ে পড়াশোনা করেন। হাদীস ও ইফতা বিভাগের শিক্ষা সমাপ্তির পর জামিয়াতুল উলুম আল-ইসলামিয়া আল্লামা মুহাম্মদ ইউসুফ বানুরী টাউনে মুফতি হিসেবে নিয়োগ পান। পরে তিনি এ প্রতিষ্ঠানের প্রধান মুফতির পদ লাভ করেন এবং দীর্ঘ তিন দশক দায়িত্ব পালন করেন। এ প্রতিষ্ঠানের ইফতা বিভাগে প্রতি বছর ৯ হাজারের বেশি ফতওয়া জমা হত। সেই হিসেবে এ দীর্ঘ সময় তিনি তিন লাখের বেশি লিখিত ফতওয়া সম্পাদনা করেন, যা ওই প্রতিষ্ঠানের ইতিহাসে অনন্য নজির স্থাপন করে। এছাড়াও করাচির ঐতিহ্যবাহী আহমদ উসমানী জামে মসজিদের খতীব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০০ সালে মুফতি আবদুস সালাম চাটগামী ইসলামি শিক্ষা প্রসারে নিজ দেশে ফিরে আসেন। করাচির বানুরী টাউন থেকে চলে এলেও প্রতিষ্ঠানে অন্য কাউকে প্রধান মুফতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। বরং দেশে ফিরেও বিশেষ সম্মাননা হিসেবে মুফতি আবদুস সালাম চাটগামী করাচির উক্ত মাদরাসায় প্রধান মুফতি পদে ছিলেন। এরপর দারুল উলুম হাটহাজারীর পরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফী (রহ.)-এর আহ্বানে ২০০১ সালে দারুল উলুম হাটহাজারীয় প্রধান মুফতি হিসেবে যোগদান করেন। আল্লামা শাহ আহমদ শফী (রহ.)-এর মৃত্যুর পর পরিচালনা পরিষদের প্রধান হন তিনি। তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনাবলির মধ্যে রয়েছে, জাওয়াহিরুল ফাতওয়া, আপ কা সুওয়াল আওর উন কা জওয়াব: আহাদীস কী রৌশনী মেঁ (উর্দু), ইসলামী মায়িশাত কে বুনয়াদী উসূল (উর্দু), মুরাওয়াজা ইসলামী ব্যাংকারী (উর্দু), ইসলাম ও আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে মানব-অঙ্গের ক্রয়-বিক্রয় (বাংলায় অনূদিত), দিলজাগানো সুরভী মলফুযাতে বোয়ালভী (রহ.) ও করোনাকালীন সমস্যা ও তার শরয়ী বিধান ইত্যাদি। ২৯ মুহাররম ১৪৪৩ মোতাবেক ৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ (বুধবার) সকাল সাড়ে ১১ টায় দারুল উলুম হাটহাজারীর পরিচালনা কমিটির পরামর্শ সভায় তাঁকে পরিচালক ঘোষণার অল্পসময়ের মধ্যে আল্লাহর ডাকে সাড়া দেন।