প্ৰথম পৰ্ব মুখটি প্রায়ান্ধকার, সূর্য মাথার পিছনে বলে। হাঁটার ছন্দে ছন্দে দুলছে কুঞ্চিত কেশভার। দেখছিলেন অর্জুন। আজানুলম্বিত বাহু। বালক বয়সের অনুপাতে প্রশস্ত বক্ষ। কৈশোর আসছে চেহারাতে। এই প্রথম যুদ্ধে এসেছে তাঁর সঙ্গে। যুদ্ধ ছাড়া যুদ্ধবিদ্যা শেখা চলে না। সকলে কমবেশি আপত্তি করেছিল। সুভদ্রা ততটা না করলেও সবচেয়ে মুখর ছিল পাঞ্চালী। তাঁর সন্তানকে এখনই যুদ্ধে পাঠাবেন না। পাঞ্চালী ওকে গর্ভে ধরেননি। কিন্তু পাঞ্চালীর সন্তান এ-কথা সুভদ্রা বা তিনি কেউই অস্বীকার করতে পারেন না। সুভদ্রা গর্ভে ধরেছেন। কিন্তু ছেলের আদর-আহ্লাদের বড়ো জায়গা পাঞ্চালী। এবং সুভদ্রার পক্ষে সম্ভব নয় পাঞ্চালীর বিরোধ করা। অবশ্য কার পক্ষেই বা সম্ভব? মাতা কুন্তী সংসারে আছেন ঠিকই। কিন্তু সংসারের দায়-দায়িত্ব সব পাঞ্চালীর হাতে তুলে দিয়েছেন। তিনি সংসারের বিষয়ে কথা বলবেন না। হ্যাঁ, তাঁর অনুচ্চার উপস্থিতি টের পাওয়া যায়। তিনি থাকবেন, আর বোঝা যাবে না, তাও তো হয় না। দ্রৌপদী সংসারের কাজে যথাবিহিত পরামর্শ করে আসেন। এবং দ্রৌপদী যেন মাতার অন্তর্গত ভাবনাও বুঝতে পারেন। কোনটা তাঁর পছন্দ কোনটা অপছন্দ, বিনা বাক্য বিনা শ্রুতিতেও পাঞ্চালী অবগত। কখনো-সখনো অর্জুনের মনে হয় তাঁরা গর্ভস্থ সন্তান হয়েও এতটা পারেন না। পাঞ্চালী সংসারের জন্য এবং সন্তানদের জন্য যে সিদ্ধান্ত নিতে চাইবেন তার বিরোধ তিনি কেন, বাকি ভাইয়েরাও করে উঠতে পারে না। কারণ পাঞ্চালীর সন্তানদের প্রতি ভালোবাসার পরিপূর্ণতা। তবু তাঁকে কথা বলতেই হয়েছিল দ্রৌপদীর সঙ্গে এই যুদ্ধে অভিমন্যুকে আনা নিয়ে । কথা! খুবই গোলমেলে বিষয়। শব্দের পর শব্দ জুড়ে ভাব প্রকাশ। সে তবু একরকম। কিন্তু যখন শব্দ আর নৈঃশব্দ, জুড়ে যায়? বাক্য, চলে যায় হাতের বাইরে! তৃণীরের তির তাঁর হাতের বাইরে যায় না। কিন্তু এমন সময়গুলোতে বাক্য? সুভদ্রাকে নিয়ে ফেরার পর থেকে পাঞ্চালীর ক্ষতটা প্রকাশ পেয়েছে! ক্ষত? না অভিমান? নাহ্, সব সময় পার্থ নিজেও বুঝতে পারেন না। পাঞ্চালীর তুলনা পাঞ্চালীই। দাম্পত্য কলহের পাত্রী তিনি না! বহুবার সত্যভামার রুক্মিনীর সঙ্গে...