মুসলিমদের জ্ঞানচর্চার ইতিহাসে পৃথিবীশ্রেষ্ঠ গ্রন্থের তালিকায় রয়েছে ইমাম তহাবির 'আক্বীদাহ ত্বহাবিয়্যাহ'। আর আকিদার বই হিসেবে এর মর্যাদা ও গ্রহণযোগ্যতা সকল ধারা ও ঘরানার ইসলামপ্রিয় মানুষের কাছে সকল সময়েই শীর্ষে। যুগে যুগে এ বই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আকিদার মুখপাত্র হয়ে মানুষকে সন্ধান দিয়েছে সঠিক আকিদার। ইসলামের ইতিহাসের প্রায় প্রতিটি যুগেই রচিত হয়েছে এর ব্যাখ্যাগ্রন্থ। সকল মত ও ঘরানার মানুষই নিজেদেরকে সম্পৃক্ত করেছেন এ কাজে। এতে মানুষের মাঝে আকিদার পরিশুদ্ধ রূপ যেমন ফুটে উঠেছে, তেমনি কখনো কোথাও রয়ে গেছে প্রান্তিকতাও; মত বা ঘরানার প্রভাব। যুগের সচেতন আলেমগণ সেগুলো নিয়েও কথা বলেছেন, তুলে এনেছেন আকিদার খাঁটি তত্ত্ব ও মর্ম। 'আক্বীদাহ ত্বহাবিয়্যাহ'র মূলানুগ অনুবাদের পাশাপাশি সালাফ ও খালাফের ব্যাখ্যার আলোকে আকিদা বোঝাপড়ার সুদীর্ঘ এক টাইমলাইন সাজিয়েছেন বিজ্ঞ আলেম ও পণ্ডিত উসতাদ মীযান হারুন। তুলে ধরেছেন আকিদায় আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের মাসলাক ও মানহাজ। একজন মুসলিমের যাপিত জীবনের সামগ্রিক ধর্মীয় বিশ্বাসের মর্মে থাকতে হবে কোন মূলনীতি, তা তিনি দেখিয়েছেন 'আক্বীদাহ ত্বহাবিয়্যাহ : সালাফ ও খালাফের ব্যাখ্যার আলোকে' গ্রন্থে।
তাহাবী ৮৪৩ খ্রিস্টাব্দে/২২৯ হিজরিতে উত্তর মিশরের তাহা গ্রামে এক ধনী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পড়াশোনা তার মামা ইসমাঈল ইবনে ইয়াহিয়া আল-মুজানির সাথে শুরু করেন, যিনি ছিলেন শাফিঈ মাযহাবের শীর্ষস্থানীয় একজন আলেম। ৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে/২৪৯হিজরীতে, তাহাবী ২০ বছর বয়সে শাফিই মাযহাব ত্যাগ করেন এবং ব্যক্তিগত কারণে হানাফি মাযহাব গ্রহণ করেন। তার হানাফী মাযহাবে স্থানান্তরের কারণ নিয়ে অনেক বর্ণনা রয়েছে, তবে অধিক সম্ভাব্য কারণ ছিল মনে হয়, তার কাছে আবু হানিফাকে শাফিঈর থেকে বেশি বুদ্ধিদীপ্ত লেগেছিল। তাহাবী পরে মিশরে হানাফীদের প্রধান আহমেদ ইবনে আবী ইমরান মুসার অধীনে পড়াশোনা করেন, যিনি নিজে আবু হানিফার দুই প্রাথমিক শিক্ষার্থী আবু ইউসুফ এবং মুহাম্মদ আল-শায়বানির অধীনে পড়াশোনা করেছিলেন। তাহাবী পরবর্তী সময়ে ৮৮২ খ্রী/২৬৮ হিজরীতে হানাফি আইন বিষয়ে আরও পড়াশোনা করার জন্য সিরিয়ায় যান এবং দামেস্কের প্রধান হাকিম কাজী আবু হাজ্জিম আবদুল হামিদ বিন জাফরের শিষ্য হন। তাহাবী হানাফী আইনশাস্ত্র ছাড়াও হাদীসের উপর এক অসাধারণ জ্ঞান অর্জন করেছিলেন। ফলস্বরূপ তাঁর গবেষণা অনেক আলেমকে আকৃষ্ট করে যারা পরে তাঁর হাদীস সম্পর্কিত রচনা নিয়ে আরো গবেষণা করেন। এর মধ্যে খুরাসানের জহিরীদের প্রধান আল-দাউদি এবং হাদীস বর্ণানাকারীদের জীবনী সংক্রান্ত অভিধানের জন্য আল-তাবারানী সুপরিচিত ছিলেন। হানাফী ফকীহরা তো বটেই, তাহাবির গ্রন্থ কিতাব মাআনী আল-আতহার এবং তাঁর আকীদা সম্পর্কিত বইয়ের জন্য বেশিরভাগ সুন্নি পন্ডিতের মধ্যে বিশিষ্ট স্থান অর্জন করেছে।