১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা পূর্ববাংলার জন-মানুষের জন্যে ছিল এক পূর্ণ ঐতিহাসিক মুহূর্ত যা উত্তরকালের ইতিহাসের গতি অনেকটাই বদলে নিয়েছিল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন স্বল্প সংখ্যক বিভাগের একটি ছিল ইতিহাস বিভাগ। কালের পরিক্রমায় উভয়েই পূর্ণ করেছে তাদের শতবার্ষিক অভিযা্ত্রা। এই সুবর্ণ মুহূর্তটির স্মারক হিসেবে ইতিহাস বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রকাশিত হলো শতবর্ষে ইতিহাস বিভাগ: অতীতের আলোয় বর্তমান ও ভবিষ্যৎ শীর্ষক গ্রন্থটি যেখানে বিভাগের শতবছরব্যাপী বিবর্তন, বর্তমানের চালচিত্র ও ভবিষ্যতের একটি সম্ভাব্য রূপরেখা উপস্থাপন করা হয়েছে।
এতে সুবিন্যস্ত পরিসরে গভীর অনুধ্যায়ী গবেষণার মাধ্যমে বিভাগের একাডেমিক কার্যক্রমের বিশ্লেষণের পাশাপাশি এ অঞ্চলের রাজনৈতিক-অর্থনীতি (Political Economy) তথা সামগ্রিক জীবনধারায় বিভাগের অবদানসহ এর নারী শিক্ষার্থীর যাত্রাপথ, সহশিক্ষাক্রমিক কার্যক্রম ও অ্যালামনাইদের সম্পর্কেও আলোকপাত করা হয়েছে। ঐতিহাসিক বিবরণীর সাথে ক্ষেত্রবিশেষে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে কিছু সুপারিশমালা যা বিভাগের ভবিষ্যৎ কার্যধারা নির্ধারণে রাখতে পারে সহায়ক ভূমিকা।
গ্রন্থটি সর্বমোট ১১টি অধ্যায়ে বিভক্ত যেখানে লিখেছেন পনেরোজন বর্তমান শিক্ষক এবং বিভাগের পাঁচজন অ্যালামনাস। অধ্যায়গুলোকে থিম অনুযায়ী তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হল- প্রথম ভাগ: পরিচিতি ও জাতি গঠনে ইতিহাস বিভাগ; দ্বিতীয় ভাগ: পাঠক্রম ও গবেষণাঃ তৃতীয় ভাগে রয়েছে বৃহত্তর ভুবন: সহশিক্ষাক্রমিক কার্যক্রম ও অ্যালামনাইদের কার্যক্রম।
পরিশিষ্টে সংযুক্ত করা হয়েছে বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ ও গবেষকদের সাক্ষাৎকার, বিভাগে সম্পন্ন এমফিল ও পিএইচডির তালিকা ইতিহাস বিভাগে বিভিন্ন সময়ে ও উপলক্ষে প্রদত্ত গুণীজনদের বক্তৃতার তালিকা বিভাগের সভাপতি, বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক, শিক্ষকমগুলি, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত তথ্য, ইতিহাস বিভাগ কর্তৃক পরিচালিত বৃত্তি ও ফান্ডসমূহের তালিকা এবং আছে অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের কথাও।
আশা করা যায়, ইতিহাস বিভাগের শতবর্ষব্যাপী বিবর্তনের ইতিহাস ও ভবিষ্যৎ ভাবনা লিপিবদ্ধ করার এই প্রয়াস বিশেষজ্ঞ মহল ও সাধারণ পাঠকের প্রত্যাশা কিছুটা হলেও মেটাতে সক্ষম হবে। আগ্রহী পাঠক এখানে অতীতের ইতিহাস, বর্তমানের ইতিহাস, এমনকি ভবিষ্যতের ইতিহাস (History of Future)-এর দিকচিহ্নও খুঁজে পেতে পারেন ।
আশফাক হােসেন জন্ম ৩১ ডিসেম্বর ১৯৬৯, মৌলভীবাজার শহরে। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়াশােনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব নটিংহামে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে এমফিল পর্যায়ে গবেষণার বিষয় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ । লন্ডনের ব্রিটিশ লাইব্রেরি ও স্কটল্যান্ডের জেমস্ ফিলে আর্কাইভসে সংরক্ষিত মূল দলিলপত্রের ভিত্তিতে যুক্তরাজ্যের নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ঔপনিবেশিক বিশ্বায়ন বিষয়ে পিএইচডি সম্পন্ন করেছেন। ২০০৭ সালে যুক্তরাজ্যের সিসিপি প্রেস থেকে প্রকাশিত স্টাডিজ ইন পােস্ট কালচার কনফ্লিক্ট জার্নালে তাঁর প্রবন্ধ মুদ্রিত হয়েছে। গবেষণার জন্য ইউজিসির রাষ্ট্রপতি স্বর্ণপদক’ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রদত্ত বিচারপতি ইব্রাহীম স্বর্ণপদক’ পেয়েছেন। প্রকাশিত গ্রন্থ আটটি, গবেষণা প্রবন্ধের সংখ্যা শতাধিক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. হােসেন বর্তমানে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ (ডেপুটেশন)।