উপন্যাস সাহিত্যের আদি অন্যতম প্রধান শাখা। ধারণা করা হয়, যখন পৃথিবীর কোনো অক্ষর জ্ঞান ছিলো না, তখনও মানুষের ভাবনায় উচ্চারণে নানামুখী জীবনের অব্যক্ত গল্প ভাবনা থাকতো । কবিতার মতো উপন্যাস খুব একটা ঋতু বদল করেনি। তবে আধুনিক উপন্যাসের ধরণ খানিকটা বদলেছে বলা চলে । কারণ আগে উপন্যাসের বিষয়বস্তু এবং সব গুলো চরিত্র গল্পাকারে এক সাথে লিখা হতো। তবে আগের ধারাকে ঠিক রেখে এখন আধুনিক লেখকরা সিনেমাটিক ওয়েতে প্রতিটি চরিত্রকে ভাগ ভাগ করে সাজিয়ে থাকেন পুরো গল্পটায়। ‘কাগজের পুরুষ' কাব্য-উপন্যাসটিও ঠিক তেমনভাবেই লিখা। এতে এমন কিছু চিত্র তুলে ধরা হয়েছে বর্তমান সমসাময়িক বিষয়কে ঘিরে যার ৮০ শতাংশই সত্য। একজন যৌন কর্মীর জীবনকে তিন ভাগে তুলে এনেছেন লেখিকা এখানে। শতভাগ সত্যতা ফুটিয়ে তুলতে লেখিকা নিজে পতিতালয়ে দুই দিন এক রাত থেকেছেন সেই সব নারীদের মাঝে । সমাজ পতিতা বা প্রস্টিটিউট তাদের বলে যারা শুধু তিন বেলা পরিবারের কিছু মানুষকে ভাতের গন্ধ দেয়ায় এই পেশা বেছে নেন। কিন্তু সত্যিকারের কর্পোরেট প্রস্টিটিউট আমাদের সকলের আশেপাশে শতশত । যাঁরা মেধাকে ব্যবহার না করে শর্টকাটে উপরে উঠতে শরীরকে পূঁজি করে। তিন বেলা শুধু মোটা চালের তিন থালা ভাতের গন্ধ নেয়ায় দিন তিনশো থেকে পাঁচশ টাকায় যারা সম্ভ্রম বিলায় তারা প্রস্টিটিউট নয় । এই সমাজ তাদের নামের আগে এই শব্দ জুড়ে দিয়েছে। কারণ যে মানুষটার এই ২০২২ সালে এসেও দিন পাঁচশ টাকা হলে ৪/৫ জনের একটা পরিবার দিব্যি খেয়ে পরে হাসিমুখে বাঁচে। সমাজের বিত্তবানরা তাদের দিকে ফিরেও তাকায় না। কিন্তু দিব্যি-এক ঘণ্টা-এক রাতের বিনোদনের জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা তাদের পেছনে খরচ করে যারা সন্ধ্যা নামার সাথে সাথেই কালো গ্লাসের গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পরেন শহরের নামি দামী পয়সাওয়ালাদের ঝাড় বাতি হতে। যতদিন সমাজ থেকে এই ঝাড় বাতির মিছিল দূরীকরণ না হবে ততদিন এই সমাজ অর্ধ বিকলাঙ্গই রয়ে যাবে। প্রস্টিটিউট নাম বহনকারী একজন নারীর জীবন ঠিক কতটা নিখুঁত পরিচ্ছন্ন কঠিন হতে পারে তা নিজ চোখে অবলোকন না করলে বোঝানো যাবে না। যে দেশে এক কেজি সরু চালের দাম ৯০ টাকা থেকে ১০০ টাকা। সেই দেশে এখনো ৭০-৮০ টাকার বিনিময়ে পতিতালয়ে একজন নারীর শরীর পাওয়া যায়। এই লজ্জা কার?