ঢাকা ভার্সিটি থেকে পড়াশোনা শেষ করে মেসবাড়িতেই আস্তানা হিমেলের। শত চেষ্টা করেও একটা চাকরি জোগাড় করা সম্ভব হয় না তার। ভালোবাসে দীপা নামের এক আর্মি অফিসারের একমাত্র কন্যাকে। ঢাকা শহরে আপনজন বলতে একমাত্র মহসিনা খালা ছাড়া কেউ নেই। মহসিনা খালা দিন-রাত সন্দেহ করে তার স্বামী ফেরদৌসকে। খালার এক ছেলে শুভ আর এক মেয়ে স্মৃতি।
হিমেল তার খালাতো ভাই শুভর কাছে দেবতাতুল্য। হিমেল তার কাছে আদর্শ। হিমেলকে অনুসরণ করার চেষ্টা করে শুভ। শুভর ধারণা, হিমেলের অনেক ক্ষমতা। হিমেল যা বলে তা-ই হয়ে যায়। সেই ছোটবেলায় মা-বাবার মৃত্যুর পর চাচা-চাচির কাছেই মানুষ হয় হিমেল। ছোটবেলার বন্ধু ওয়াদুদ হিমেলের ওপর সবসময় নির্ভর করে। বড়লোক বাবার বোকাসোকা ছেলে ওয়াদুদ। বিয়ে করেছে রাত্রি নামের এক ধনাঢ্য পরিবারের কন্যাকে।
হিমেলের মাঝে কিছু ব্যাপার আছে, যা অন্য সবার মাঝে নেই। মতিন মেসবাড়ির কাজের বুয়ার সাথে মেস মেম্বার আমিন সাহেব এবং মেস মালিকের সম্পর্ক নিয়ে প্রায় সময়ই মেসে ঝামেলা হয়; যা নিয়ে হিমেলকে প্রায়ই মেসে বিচারকার্য পরিচালনা করতে হয়। এক রাতে হিমেল এক অদ্ভুত স্বপ্ন দেখে। স্বপ্নের মাঝেই হলুদ পাঞ্জাবি পরা কোঁকড়া চুলের ফর্সা যুবক তার ঘরে আসে। সে জানায়, ‘আজ থেকে আমি তোমার সাথেই থাকব। এখন থেকে আমার অসম্পূর্ণ কাজগুলো আমি তোমার মাঝ দিয়েই প্রকাশ করব। আজ থেকে তুমি হিমেল নও, তুমি হিমু। আমি তোমার সাথে আজ থেকে ছায়া হয়েই থাকব। তোমার প্রতিটি কাজে, প্রতিটি বিপদে আমি তোমার সাথে সাথেই থাকব। শুধু আমি একা নই, তোমাকে সাহায্য করার জন্য আরো দুজন আছে। ওরা তোমার খুব কাছের দুজন। অসম্ভব রকমের ভালোবাসে তোমাকে। হিমেল ঘুম থেকে উঠে ঘামতে থাকে। আর ঠিক তখনই ফজরের আজান দেয়। ফজরের আজান দেয়ার সময়ের স্বপ্ন কখনো মিথ্যে হয় না।
তার পর থেকে হিমেলের আচার-আচরণে পরিবর্তন আসতে শুরু করে। হিমেল আর হিমেলের ভেতর বাস করা হিমু দুজনে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। হিমেলের মাঝেই দেখা যায় হিমুর ছায়া।
এমনই এক রোমাঞ্চকর কাহিনি নিয়ে আবর্ত হয়েছে হুমায়ুন কবীর হিমুর নবম উপন্যাস ‘হিমুর ছায়া’।