১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের সব পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেছিলেন। বাংলার কৃষক, শ্রমিক, মজুর থেকে শুরু করে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ছাত্র-শিক্ষক, সাধারণ মানুষ-কেউ বাদ ছিলেন না। যাঁরা যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করতে পারেননি, তাঁরাও কোনো-না-কোনোভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে এই দেশকে স্বাধীন করার মন্ত্রে উজ্জীবিত করেছিলেন; কেবল বাংলাদেশের কিছু কুলাঙ্গার ছাড়া (যারা স্বাধীনতার বিরোধী ছিল)। দেশর শহর-বন্দর থেকে শুরু করে বাংলাদেশর প্রত্যন্ত গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছিল পাকসেনাদের নির্মম অত্যাচার। তাদের অত্যাচারের জবাব দেয়ার জন্য বাংলাদেশেল প্রতিটি গ্রামে গড়ে উঠেছিল মুক্তিবাহিনী। তারই ধারাবাহিকতায় নীল ফামারী জেলার জলঢাকায় গড়ে উঠেছিল মুক্তিবাহিনী। যার একজন দক্ষ সংগঠক ছিলেন সেই সময় জলঢাকা পোস্ট অফিসের পোস্ট মাস্টার মতিয়ার রহমান (মতি মাস্টার)। মতি মাস্টার ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর একজন একনিষ্ঠ ভক্ত। তিনি দিন-রত স্বপ্ন দেখতেন স্বাধীন বাংলাদেশের। তিনি মনে-প্রাণে বিশ্বিস করতেন, পাকসেনারা যতই অত্যাচার করুক, বাংলাদেশের মানুষকে কোনোভাবেই দাবিয়ে রাখতে পাবে না- বাংলাদেশ একদিন স্বাধীন হবেই। তাই তিনি চাকরির পাশাপাশি সবসময় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন এবং জলঢাকার যুবসমাজকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করতেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের ভারতে ট্রেনিং নেয়ার জন্য অর্থ ও পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করতেন। একসময় তিনি সন্তানসম্ভব স্ত্রীকে ছেড়ে ট্রেনিং নেয়ার জন্য ভারতে যেতে মনস্থির করেন। যেদিন ভারতে যাবেন ঠিক সেদিনই স্থানীয় রাজাকার-আলবদর বাহিনীর কিছু মানুষ তাঁকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে পাকিস্তানি আর্মিদের হাতে ধরিয়ে দেয়। এরপর চলে তাঁর উপর নির্মম নির্যাতন। সেই নির্যাতনের মাঝেও তিনি স্বপ্ন দেখেন স্বাধীন বাংলাদেশের। তিনি মনে-প্রাণে বিশ্বাস করতেন, তাঁর সন্তান পাকিস্তান নামের কোনো রাষ্ট্রে জন্ম নেবে না; তাঁর সন্তান জন্ম নেবে স্বাধীন বাংলাদেশে। কিন্তু নিয়তি তাঁকে চেনে নিয়ে যায় অন্য প্রান্তে, যে প্রান্তের সীমা অসীম। ‘একজন মতি মাস্টার’ উপন্যাসের পটভূমিতে আমরা এমন একজন মুক্তিযোদ্ধাকেই দেখতে পাই, যাঁর অবদান আজও স্মরণীয় জলঢাকাবাসীর কাছে। অথচ রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি মেলেনি তাঁর কিংবা তাঁর পরিবারের।