সানাউল হক দোলন, ঢাকা ভার্সিটি থেকে মাস্টার্স পাস করা একজন যুবক। নীলফামারী জেলার জলঢাকা উপজেলায় তার গ্রামের বাড়ি। বর্তমান ঠিকানা ঢাকার মিরপুর ১৪ নাম্বারের শান্তি নীড় নামক মেস বাড়ি। একটা চাকরির জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাওয়ার পরও তার চাকরি হচ্ছে না। অবশ্য দোলন যে টাইপের মানুষ, এই টাইপের মানুষদের সাধারণত চাকরি পাওয়াটা ব নিজের খরচ চালিয়ে যাওয়ার জন্য সে একটি টিউশনি করায় এক বড়লােক বাবার আদরের দুলালী সুমাইয়াকে। টিউশনি করানাের পাশাপাশি সে একজন কবি। তার লেখা কয়েকটি কাব্যগ্রন্থও ইতােমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। দোলন সাহেব মানুষ হিসেবে পরােপকারী। নিজের যতই সমস্যা হউক না কেন অন্যের উপকারে সে কখনাে পিছুপা হয়। তাই তাে বিয়ের বয়স পেরিয়ে যাওয়ার পরেও যখন শান্তি নীড় মেস বাড়ির মালিক সাহাদাত ভাইয়ের বিয়ে হতে না দেখে তার বিয়ে করানাের দায়িত্বটা তার কাঁধেই তুলে নেয় দোলন। বন্ধু পাভেলের। পছন্দের মেয়ে শর্মির বাবা যখন কোনােভাবেই পাভেলের সাথে তার। মেয়ের বিয়ে দিবে না, সেই সমস্যা সমাধানের দায়িত্বটিও দোলন তার কাঁধে তুলে নেয়। তার একমাত্র খালু সুমন সাহেব হঠাৎ করে কথা বলা বন্ধ করে দেয়ার পর খালার অনুরােধে খালুকে কথা বলানাের দায়িত্বটাও তাকে নিতে হয়। খালাতাে বােন স্মৃতি যে তাকে অসম্ভব রকম ভালােবাসে তা সে বেশ বুঝতে পারে। কিন্তু স্মৃতির ভালােবাসা স্মৃতির মনের মাঝেই থেকে। যায়। তা আর দোলনকে প্রকাশ করা হয় না। কারণ স্মৃতিকে দোলন সে সুযােগ দেয় না। দেওয়ার কথাও না। কারণ দোলনের হৃদয়মন। জুড়ে আছে লাভলী। এতাে দায়িত্ব পালনের মাঝে কখন যে তার ভালােবাসার মানুষ লাভলীর অন্যত্র বিয়ে হয়ে যায় সেদিকে তার খেয়াল থাকে না। একটি চাকরি না পাওয়ায় লাভলীর মা মিসেস পাপড়ি কোনােভাবেই ভবঘুরে এক কবি'র কাছে তার মেয়ের বিয়ে হবে এটা কোনােভাবেই মেনে নিতে পারেন। যদিও লাভলীর বাবা সেলিম সাহেব মেয়ের পক্ষে অবস্থান নিয়েও শেষ পর্যন্ত তার স্ত্রীর যুক্তির কাছে হার মানেন। একটি চাকরির কাছে, অর্থের কাছে, সময়ের কাছে হেরে যায় কবি সানাউল হক দোলনের ভালােবাসা। লাভলী তার বুকের মাঝে দোলনের ভালােবাসাকে চাপা দিয়ে মায়ের পছন্দ করা ছেলেকেই জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নেয়। এমনই এক গল্প নিয়ে রচিত হয়েছে হুমায়ুন কবির হিমু’র ষষ্ঠ উপন্যাস কবি'।