কবিতা কবির একান্ত আশ্রয়। কবিতা কবির আশ্রমও বটে। প্রেমে-অপ্রেমে, কামে- ক্রোধে, দেশ-দেশহীনতায়, নির্জনে অথবা জনারণ্যে কবিতা কবির ব্যক্তিঅনুভবকে নৈর্ব্যক্তিকতায় উন্নীত করে। সেভাবেই হেলাল চৌধুরীর কবিতার শরীর তৈরি হয়েছে। শুধু ব্যক্তিমানবের চিন্তার ব্যাপ্তি নিয়ে নয়, পুরাণ-মিথের সং¯পর্শে তা পুরো জীবনকেও ছুঁতে চেয়েছে। আরাধ্য সুন্দরকে নয়; বরং বিদঘুটে অন্ধকারে সুন্দরকে গোগ্রাসে গিলে খাবার বাসনায় কবির কবিতা কখনও কখনও আগ্রাসী হয়ে উঠেছে। কবির দর্শনভাবনায় ইতিহাস ও পুরাণ হাত ধরাধরি করে হেঁটেছে--যদিও তাঁর কবিতার ঠিকানা নদী-মেখলা আর পাহাড় ঘেরা প্রিয় স্বদেশ। এই সাকিনের রূপক উপমায় মূলত বিচ্ছিন্ন-বিপন্ন মানবিক সত্তাই কথা বলেছে হেলাল চৌধুরীর কবিতায়। নিসর্গ-কবিতায় এসেছে মানবিক অনুভূতিরই বিবিধ প্রকাশের বাসনায়। কবিতাযাপনের দীর্ঘ ইতিহাস কবিকে নিমগ্ন এক বিচ্ছিন্নতায় লুকিয়ে রাখে কি? হেলালপাঠ-বঞ্চিত পাঠকের অনুভব হয়তো তা-ই বলবে। তবে কি জনমভর দাইদালুসের বিপুল বিলাপ অসমাপ্তই থেকে যায়? তারই উত্তর খুঁজতে পাঠককে সচেষ্ট করবে হেলাল চৌধুরীর কাব্য দাইদালুসের বিলাপ, ঘুণে কাটা মানুষেরই বিলাপ হয়ে।
হেলাল চৌধুরীর জন্ম ১৭ সেপ্টেম্বর ১৯৭০, বাবার কর্মস্থল সিলেটের বিশ্বনাথে। পৈতৃক নিবাস সিলেটের জৈন্তাপুরে। বাবা আতাউর রহমান চৌধুরী, মা ফাতেমা বেগম চৌধুরী। পাঁচ ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি সপ্তম। জীবনসঙ্গী আফসানা বেগম চৌধুরী। একমাত্র সন্তান আরিহা আইভি চৌধুরী ফ্লরিন। হেলাল চৌধুরী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাঙলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর। শিক্ষকতা করছেন জনতা কলেজ মইনপুর, ছাতক, সুনামগঞ্জে। বসবাস সিলেটনগরে। সম্পাদনা করছেন সাহিত্যের ছোটোকাগজ ফিনিক। প্রকাশিত কবিতার বই ইলার শিসে ভাঙে ঘুম (নভেম্বর, ২০২২)।