ভূমিকা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে প্রবন্ধ সাহিত্যের উৎকর্ষ সাধিত হতে থাকে; বিশেষ করে চিন্তামূলক প্রবন্ধ রচনায় অনেক মনীষী ব্যক্তির আবির্ভাব ঘটে। অথচ একসময় বাংলা সাহিত্যের প্রায় সিংহভাগ জুড়ে ছিল রস সাহিত্যে। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় থেকে শুরু করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পর্যন্ত এক ধরনের ক্ষোভ এজন্যই ছিল। কিন্তু তাঁদের জীবদ্দশা থেকে শুরু করে পরবর্তীতে প্রবন্ধ সাহিত্যে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটে। এ ধারাবাহিকতায় অনেক প্রভাবশালী লেখক ইংরেজিতে লেখার চর্চা পরিহার করে বাংলায় অত্যন্ত উঁচু মানের প্রবন্ধ সাহিত্যে মনোনিবেশ করেন। আর সাহিত্যের চিরন্তন উদ্দেশ্য সৌন্দর্য সৃষ্টি ও আনন্দ দান, কিন্তু, প্রবন্ধ সাহিত্য বুদ্ধিবৃত্তির তীক্ষ্ণ চর্চা যা জ্ঞানের পরিধিকে প্রসারিত করে। অপেক্ষাকৃতভাবে পরে অর্থাৎ উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে মুসলমান লেখকগণ বাংলা সাহিত্যে আবির্ভূত হয়। আর প্রবন্ধ সাহিত্যে মুসলমান লেখকগণ অনেক পরে কলম ধরেন। কিন্তু বহুবিধ কারণে মুসলমান প্রবান্ধিকদের মধ্যে মোতাহের হোসেন চৌধুরী আলোচিত। কবিতা চর্চা দিয়ে তাঁর সাহিত্য সাধনার পথ শুরু হলেও তিনি প্রবন্ধ সাহিত্যে অনবদ্য অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হন। মুসলিম সমাজজীবন সম্বন্ধে তাঁর ধ্যানধারণাকে তিনি অতি উচ্চ........
মােতাহের হােসেন চৌধুরী (১৯০৩-১৯৫৬) জীবদ্দশায় পরিচিত মণ্ডলে এবং সাধারণ পাঠকদের মধ্যে বিশেষ শ্রদ্ধাভাজন ছিলেন। সমাজ ও রাষ্ট্রের যদি নূন্যতম আনুকূল্য পেতেন তা হলে জীবৎকালেই তাঁর দু’চারটি বই প্রকাশিত হতাে। অতীব দুঃখের বিষয় মৃত্যুকালে তার কোনাে প্রকাশিত গ্রন্থ ছিল না। সাহিত্যজীবনের নানা পর্যায়ে মােতাহের হােসেন চৌধুরী একাধিক নামে পত্রপত্রিকায় লিখেছেন, যেমন- মােতাহের হােসেন বি. এ, সৈয়দ মােতাহের হােসেন চৌধুরী বি.এ, মােতাহের হােসেন চৌধুরী এম. এ, মােতাহের হােসেন। চৌধুরী প্রভৃতি। শেষ জীবনে শুধু মােতাহের হােসেন চৌধুরীই লিখতেন। চাকরি-বাকরিসংক্রান্ত ও ব্যক্তিগত কোনাে প্রয়ােজনে তিনি তাঁর পিতৃদত্ত নাম সৈয়দ মােতাহের হােসেন চৌধুরী লিখতেন। তার পৈত্রিক বাড়ি নােয়াখালী জেলার রামগঞ্জ থানার কাঞ্চনপুর গ্রামে। পিতা সৈয়দ আবদুল মজিদ চৌধুরী ছিলেন একজন সাব-রেজিস্ট্রার। খ্রিস্টীয়-ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক যুগে এটি ছিল সম্মানজনক চাকরি । তাদের পারিবারিক সূত্র থেকে জানা যায়, ফিরােজ শাহের রাজত্বকালে শাহ সৈয়দ আহমদ তনুরী ওরফে শাহ মিরান নামে একজন সুফি সাধক ইরাক থেকে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে এই উপমহাদেশে আসেন। মােতাহের হােসেনের মাতামহ মৌলবী আশরাফ উদ্দিন আহমদের বাসভবন ছিল কুমিল্লা শহরের ‘দারােগা-বাড়ি'। এই দারােগা-বাড়িতেই মােতাহের হােসেনের জন্ম। তাঁর নিজের হাতে লেখা পুরনাে কাগজপত্র দেখে প্রবন্ধ-সমগ্রের সম্পাদক সৈয়দ আবুল মকসুদ প্রমাণ পেয়েছেন তাঁর জন্মতারিখ : ১ এপ্রিল ১৯০৩।