না দ্বৈতবাদ , না অদ্বৈতবাদ গ্রন্থে আছে জরুরী কিন্তু কম আলোচিত বিষয়াবলীর প্রাধান্য। যেমন ওয়াহদাতুল ওজুদ আসলে কী? দ্বৈতবাদ-অদ্বৈতবাদের সাথে তার মিল কোথায় আর কোথায় অমিল? এ নিয়ে ইসলামী জ্ঞানজগতে তর্কগুলো কী ও কেমন? বইটির প্রধান আলোচ্য হয়ে উঠেছে খোদাতত্ত্ব ও আস্তিকতা। এতে আছে জ্ঞানতত্ত্ব এবং প্রাচ্য-প্রতীচ্যের দার্শনিক পরিক্রমার বিশেষ দিকের উপর অন্তরঙ্গ জরিপ। এতে হাজির হয়েছেন ইবনে আরাবি থেকে নিয়ে ইসমাইল রাজী, এরিস্টটল থেকে নিয়ে স্পিনোজা, নিউটন থেকে নিয়ে শোপেনহাওয়ার, ইবনে রুশদ থেকে নিয়ে আলীয়া আলী, গাযালী থেকে নিয়ে ডেকার্তে ...। দার্শনিক যুক্তি তর্কের মুখর মজমা হয়ে উঠেছে এ বইয়ের পৃষ্ঠাগুলো। প্রতিটি রচনায় শুনতে পাবেন যৌক্তিক ও প্রমাণিক বিচার-বিশ্লেষণের শেষে সত্য-সুন্দরের বিজয় উল্লাস। প্রাচীন দার্শনিক পিরহো ও সংশয়বাদ, কৌটিল্য ও তাঁর অর্থশাস্ত্রের মতো প্রসঙ্গ যেমন এখানে আলোচিত, তেমনি রয়েছে সাম্প্রতিক সারকেডিয়ান রিদম বা দেহঘড়ির সলোকসন্ধান। গুরুতর চিন্তাশীল রচনার পাশাপাশি নিত্যকার আলোচিত নানা প্রসঙ্গ বইটিতে উপস্থিত। সমাজ-সংস্কৃতি, অর্থনীতি , রাজনীতি, পরিবেশ, ধর্মীয় কর্তব্য ইত্যাদির মতো বিষয় বইটিকে দিয়েছে স্বাদের স্বাতন্ত্র। কারণ প্রতিটি বিষয়েই মুসা আল হাফিজের বিশ্লেষণ ও দেখার চোখ অসাধারণ। বইটি শেষ হয়েছে বাংলা কবিতায় সুফিবাদের প্রভাবের উপর সুদীর্ঘ আলোকপাতের পরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতায় সুফিপ্রভাবের উপর অন্তর্ভেদী দৃষ্টিদানের মধ্য দিয়ে । এর আগে পাঠককে জানিয়ে দেওয়া হয় মানুষ ও মানবতার সঙ্কটে বুদ্ধিজীবীর ভূমিকা কী এবং বুদ্ধিজীবী কখন ও কীভাবে দায়িত্বশীল হয়ে উঠেন আর কখন ও কীভাবে হন আত্মবিক্রিত! এ বইয়ে দুই মলাটের ভেতরে জ্ঞান ও চিন্তার বিচিত্র এক ভূবন অপেক্ষা করছে পাঠকের জন্য! মুসা আল হাফিজের প্রধান পরিচয় কবি ও চিন্তক । ১৯৮৪-এর ৫ই অক্টোবর সিলেটের বিশ্বনাথে তাঁর জন্ম। ধর্মতত্ত্বে বিশেষজ্ঞ। লেখাপড়া করেন ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় ধারায়। তাকমিল ফিল হাদীস সমাপন করে তাফসীরে সম্পন্ন করেন উচ্চতর কোর্স। ইতোমধ্যে লিখেছেন পঞ্চাশ-এর অধিক বই। প্রতিষ্ঠা করেছেন সেন্টার ফর ইসলামিক থট অ্যান্ড স্টাডিজ, ঢাকা। তিনি ইসলামিক হিস্ট্রি অ্যান্ড কালচার অলিম্পিয়াড বাংলাদেশ-এর চেয়ারম্যান এবং শিক্ষা, সেবা ও মানব উন্নয়নমূলক বিভিন্ন প্রয়াসে সম্পৃক্ত। সাহিত্যে তাঁর বিচরণের ক্ষেত্র বহুমাত্রিক। রাজনীতি, দর্শন, প্রাচ্যবাদ, সমাজতত্ত্ব, ইতিহাস, ধর্মতত্ত্ব, কবিতা, ছড়া, সাহিত্য সমালোচনা, অনুবাদ ইত্যাদি পথে তিনি নিজেকে পাঠকের সামনে হাজির করেছেন। অতীত-বর্তমানের সেতু রচনা করে তিনি ভবিষ্যতের না-দেখা প্রচ্ছদকে উন্মোচন করে চলেন আপন রচনায়। মানবিক দায়বোধ , মানবসত্তায় সুষম বিকাশ, ঐতিহ্য ও আদর্শনিষ্ঠা সহকারে প্রগতিশীলতা তাঁর রচনার মধ্যে কথা বলে। তাঁর রচনা মানুষ ও মানুষের পৃথিবীকে অধিকতর আলোকময় করার অন্তর্দৃষ্টিময় চিন্তাভাষ্য । সুফীঘরাণার এই জ্ঞানসাধক ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত এবং দুই সন্তানের জনক। মেয়ে বারা বাসসামা, ছেলে মুসান্না আলবাব।
কবি, গবেষক ও আলেম মুসা আল হাফিজ। ১৯৮৪ সালের ৫ অক্টোবর সিলেট জেলার বিশ্বনাথ উপজেলার রামপাশা ইউনিয়নের মাখর-গাঁও গ্রামে তাঁর জন্ম। ১৯৯৫ সালে, ১১ বছর বয়সে কুরআন মজিদের হিফজ সম্পন্ন করেন। ২০০৭ সালে কৃতীত্বের সাথে তাকমিল ফিল হাদীস (মাস্টার্স সমমান) সম্পন্ন করেন। জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ তরুণ আলেম প্রতিভা-২০০৮ এ সম্মানীত হন। ২০০৯ সালে কর্মজীবনের শুরু ঐতিহ্যবাহী বিশ্বনাথ জামেয়া মাদানিয়ায় শিক্ষকতা এবং মাসিক আল ফারুকের উপদেষ্টা সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণের মধ্য দিয়ে। ২০১৬ সালে উচ্চতর ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জামেয়াতুল খায়র আল ইসলামীয়া সিলেটে বিভাগীয় প্রধান হিসেবে যোগদান করেন। ২০১৯ সালে ঢাকায়, যাত্রাবাড়ীতে প্রতিষ্ঠা করেন ইসলামী দা‘ওয়াহ ও গবেষণা কেন্দ্র মা‘হাদুল ফিকরি ওয়াদদিরাসাতিল ইসলামিয়া। বর্তমানে ইসলামিক হিস্ট্রি অ্যান্ড কালচার অলিম্পিয়াড বাংলাদেশের চেয়ারম্যানের দায়িত্বপালন করছেন। ২০১১ সালে হয় তার কবিতা নিয়ে প্রকাশিত হয় কবি-সমালোচক মুকুল চৌধুরীর সনাক্তধর্মী আলোচনা ‘মুসা আল হাফিজ: কবিতার নতুন কণ্ঠস্বর’। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. রিজাউল ইসলাম তার সাহিত্যকর্ম নিয়ে লিখেন গবেষণাগ্রন্থ- মুসা আল হাফিজের মননবিশ্ব (২০১৮)। তরুণ কবি এম আসাদ চৌধুরীর সম্পাদনায় ২০১৯ সালে প্রকাশিত হয় তার সাহিত্যকর্ম নিয়ে বিশজন আলোচকের পর্যালোচনাগ্রন্থ ‘মননের কবি, বৈদগ্ধের দৃষ্টিতে’। বিভিন্ন বিষয়ে তিনি ৫০টির অধিক বই লিখেছেন।