কাব্যপ্রেম এবং তারুণ্যের প্রেমাবেগ বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইংরেজ কবি টেড হিউজ ও মার্কিন কবি সিলভিয়া প্লাথকে যুগলবন্দী করেছিল। কেমব্রিজে তাঁদের বাসাটি ’ভালোবাসার বাসা’ নামে পরিচিতি পেয়েছিল। কিন্তু দাম্পত্যজীবনের ছয় বছর না যেতেই তাঁদের ভালোবাসায় চিড় ধরে। সিলভিয়া প্লাথ গ্যাসের চুলোতে মাথা রেখে আত্মহত্যা করেন। রেখে যান দুটো দুগ্ধপোষ্য শিশু। হিউজ ও প্লাথের পরিচয় ১৯৫৬ সালের ২৫ ফ্রেব্রুয়ারি, বিয়ে সাড়ে তিন মাস পর ১৬ জুন, সম্পর্কের ভাঙন ১৯৬১ সালের মাঝামাঝি কবি আসিয়া উইভিলের সঙ্গে হিউজের পরকীয়ার জের ধরে, প্লাথের আত্মহত্যা ১৯৬৩ সালের ১১ ফ্রেব্রুয়ারি এবং শিশু শুরাসহ আসিয়ার আত্মহত্যা ১৯৬৯ সালের ২৩ মার্চ। ট্র্যাজেডির মঞ্চের মতো আহত মানুষের গোঙানি এবং লাশে পরিপূর্ণ প্লাথ-হিউজের জীবন কাহিনী। সিলভিয়া প্লাথের আত্মহত্যার পর সাহিত্যাঙ্গনে শোকের ছায়া নেমেছিল। সবচেয়ে ভয়ংকর পরিস্থিতি ছিলো নারী অধিকার আন্দোলনকারীদের নিন্দা। সেই নিন্দার প্রবল ঝড় প্লাথ-হিউজের মেয়ের শত প্রতিবাদ সত্ত্বেও থামেনি। যুক্তরাষ্ট্রের নারী মুক্তি আন্দোলন কর্মীরা সংঘবদ্ধভাবে টেড হিউজের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেছিল। তারা রাতারাতি তরুণ কবি টেড হিউজকে খল নায়কে এবং সিলভিয়া প্লাথকে নির্যাতিত নারীর প্রতীকে পরিণত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাদের শ্লোগান ছিল - ওয়েডলক ইজ ডেডলক। টেড কোনো সাহিত্য অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করলে নারী অধিকার কর্মীরা দলবেঁধে উপস্থিত হতেন। সমস্বরে ধ্বনি তুলতেন - খুনি, খুনি এবং তাঁর দিকে থুথু ছিটাতো। তাদের আন্দোলন এতই প্রবল ছিল যে, সত্যমিথ্যা যাচাইয়ের কোনো সুযোগ ছিল না তাতে। টেড হিউজ ও তাঁর শিশুদের জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। অনেকটা বিয়োগান্তক নাটকের নায়কের মতো সকল অপমানের জ্বালা সহ্য করা ছাড়া হিউজের সামনে কোনো পথও খোলা ছিল না। তিনি লোকচক্ষুর অন্তরালে প্রকৃতির কাছে আশ্রয় নিয়েছিলেন দুই শিশুকে বুকে আগলে রেখে। শুধু একবার বলেছিলেন, ”শীঘ্র কিংবা অনেক বিলম্বে হলেও যারা সত্যকে জানতে আগ্রহী তাদের কাছে সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে”। মৃত্যুর বছর না বলা কথার ঝাঁপি খোলেন ’বার্থডে লেটারস’ কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের মাধ্যমে । ’লাস্ট লেটার’ শিরোনামে একটি কবিতা বৃটিশ লাইব্রেরিতে রেখে গিয়েছিলেন যা তাঁর মৃত্যুর এক যুগ পরে পাঠকের কাছে প্রকাশ করা হয়েছে। ’কবির যুগলবন্দী’ বইতে টেড হিউজ ও সিলভিয়া প্লাথের পরিচয়, প্রেম, প্রেমের মৃত্যু, প্লাথের আত্মহনন, শিশু শুরাকে সঙ্গে নিয়ে আসিয়ার আত্মহত্যা, সিলভিয়া প্লাথের আশৈশব একাধিক প্রেম, প্রেমে বঞ্চনা, সৃজনশীলতা, বিষণœতা, নয় বছর বয়স থেকে আত্মহত্যার চেষ্টা, শোকাহত ভক্তকূল, টেড হিউজের বিরুদ্ধে নারী অধিকার আন্দোলনকারীদের সুসংবদ্ধ নিন্দা ও আক্রমণ, নীরব কবি হিউজের দুর্বিসহ জীবন, আপন প্রতিভায় ফিনিক্স পাখির মতো জেগে ওঠে সাহিত্যগগনে এলিয়ট, অডেন, লারকিনের কাতারে অবস্থান গ্রহণ, রাজকবির সম্মান অর্জন, বৃটিশ সরকারের অসংখ্য সর্বোচ্চ সম্মান ও পুরস্কার প্রাপ্তি, গৌরবময় অন্ত্যেষ্ট্যিক্রিয়া এবং মৃত্যু পরবর্তী সময়ে তাঁকে নিয়ে সাহিত্যবোদ্ধাদের কর্মকা- ইত্যাদি রয়েছে। তা ছাড়া দাম্পত্যজীবনের বহু মাত্রিক ঘটনার মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ, সামাজিক ও মানবিক সম্পর্কের বিভিন্ন দিক এই বইতে প্রতিভাত হয়েছে। টেড হিউজের আট দিনের বাংলাদেশ সফরের সংক্ষিপ্ত কাহিনীও এতে রয়েছে।
লিয়াকত খানের জন্ম ও প্রাথমিক শিক্ষা সন্দ্বীপের মগধরা গ্রামে। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের পড়ালেখা করেছেন ঢাকায়, যুক্তরাষ্ট্রে, যুক্তরাজ্যে এবং অস্ট্রেলিয়ায়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্য পড়ার সময় সৃজনশীল লেখালেখির প্রতিআগ্রহী হয়ে উঠেন। মূলত শিশুদের মধ্যে দেশপ্রেম এবং পরিবেশ বিষয়ক সচেতনতা জাগিয়ে তোলার লক্ষ্যে লেখালেখি করেথাকেন। প্রকাশিত শিশুতোষ গ্রন্থের সংখ্যা সাত। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস বিষয়ক একটি বই ইংরেজিতেঅনুবাদ করেছেন The Liberation Struggle of Bangladesh (New Delhi and Dhaka: 1999) শিরোনামে। বইটির মূললেখক ড. মোহাম্মদ হাননান। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র বিষয়ক অনূদিত শিশুতোষ বইয়ের সংখ্যা চার। বইগুলোর মূল লেখক টেডহিউজ। একটি বই গ্রিক উপখ্যান অবলম্বনে বীরপুত্রদের স্বর্ণলোম উদ্ধারের কাহিনী নিয়ে রচিত। বিগত ৩৩ বছর ধরে টেডহিউজ ও সিলভিয়া প্লাথের জীবন ও সাহিত্যকর্ম নিয়ে গবেষণা করছেন। তাঁর লেখা Ted Hughes in Bangladesh: A Memoir (2022) এবং কবির যুগলবন্দী: টেড হিউজ ও সিলভিয়া প্লাথ (২০২৩) পাঠক মহলে সমাদৃত। Ted Hughes in Bangladesh বইটি বিলেতের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের টেড হিউজ গবেষক ও ইংরেজির শিক্ষকদেরকাছে বিশেষভাবে সমাদৃত হয়েছে। লিয়াকত খান কর্মজীবনের শুরুতে ১৯৮৪ সালে ঢাকার মতিঝিলে অবস্থিত টিএন্ডটি কলেজ-এর প্রভাষক ছিলেন। একইবছরের বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বিসিএস তথ্য ক্যাডারে যোগদান করেন। তথ্য ক্যাডারের পেশাগত সুযোগে দেশেরইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি নিয়ে ব্যাপক গবেষণার সুযোগ লাভ করেন। পত্রপত্রিকার সম্পাদনা, প্রামাণ্যচিত্র নির্মান, চলচ্চিত্রেরসেন্সর এবং মিডিয়া ব্যবস্থাপনার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন। সরকারি চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অবসরগ্রহণের সময় ছিলেনমহাপরিচালক, চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর। দেশের তিনটি শীর্ষ স্থানীয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সিইও/বিভাগীয় প্রধানহিসেবে প্রায় ১২ বছর কাজ করেছেন। বর্তমানে বাংলাদেশের শিশুদের জন্য বিশ্বের শ্রেষ্ঠ শিশুতোষ বইগুলো থেকে প্রতিবছর কমপক্ষে একটি করে বই অনুবাদের কাজ হাতে নিয়েছেন। তিনি ৪০টিরও বেশি দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থান পরিদর্শন করেছেন।উল্লেখযোগ্য প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ১০।