ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুদীর্ঘ ২৩ বছরের সংগ্রামী জীবনের প্রথম দিকের জানা-অজানা অনেক তথ্যের সন্নিবেশ প্রথম খণ্ডের চিঠিপত্রসমূহে রয়েছে। চিঠিপত্র: শেখ মুজিবুর রহমান বইটির প্রথম খণ্ড ১৯৪৮-১৯৫০ সাল পর্যন্ত চিঠিপত্রসমূহের ওপর ভিত্তি করে সংকলিত হলেও এ খণ্ডের চিঠিগুলোতে ১৯৪৭-এর দেশভাগের পূর্বেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছাত্ররাজনীতিতে সম্পৃক্ততা ও মানবদরদি মনের পরিচয় পাওয়া যায় । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের দাবির প্রতি সমর্থনের কারনে গ্রেফতার ও ছাত্রত্ব বাতিল, রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ধর্মঘট কর্মসূচি চলাকালীন গ্রেফতার, নাজিমউদ্দিন সরকারের অপশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন ও জমিদারি প্রথা বিলুপ্তকরণ ইত্যাদি-সহ বাঙালির স্বার্থরক্ষার জন্য আন্দোলন সংগ্রামের এক জীবন্ত ইতিহাস তাঁর চিঠিপত্রসমূহে ফুটে উঠেছে কারাগার জীবনের একাকিত্ব, দুঃখ-কষ্ট, কারাগার থেকেই রাজনৈতিক সহযোদ্ধাদের কাছে চিঠি পাঠানো, পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনের খোঁজ নেওয়া, সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে সংগ্রাম করার চিত্র তাঁর চিঠিপত্রে প্রকাশ পেয়েছে। একইভাবে একজন নেতাকে তাঁর পরিবার, সাধারণ মানুষ, রাজনৈতিক সহযোদ্ধা, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-স্বজন কতটুকু সম্মান করে, শ্রদ্ধা করে ও ভালোবাসে-তার এক খণ্ডচিত্র তাঁর নিকট প্রেরিত সকল চিঠিপত্রে পাওয়া যাবে। কারাগারে সাক্ষাতের জন্য তাঁর পিতা, চাচা, ভগ্নিপতি, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, আইনজীবী ও রাজনৈতিক সহযোদ্ধাগণ পুলিশ এবং কারাগার কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদনপত্র লিখেছেন; সন্নিবেশিত এই আবেদনপত্রে বঙ্গবন্ধুর জন্য আকুলতার এক সুন্দর প্রতিচ্ছবি বইটিতে পাঠকগণ খুঁজে পাবেন।
হাবিবুর রহমান ১৯৬৭ সালের ১ জানুয়ারি গোপালগঞ্জ জেলার চন্দ্রদিঘলিয়া গ্রামের আব্দুল আলী মোল্লা এবং মোসাম্মৎ রাবেয়া বেগম দম্পতির ঘরে ভোরের প্রদীপ্ত সূর্য হয়ে জন্মগ্রহণ করেন হাবিবুর রহমান । শৈশব থেকেই লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলা, শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির সঙ্গে নিবিড় নিবেদিত এক প্রাণ তিনি ৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা 3 গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে কৃতিত্বের সাথে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করে তিনি ১৭তম বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করেন । চাকুরি-জীবনে যে কর্মস্থলেই দায়িত্ব পালন করেছেন, সেখানেই রেখে এসেছেন তাঁর সৃষ্টিশীল চিন্তা-চেতনা আর ব্যতিক্রমী কর্মস্পৃহার স্বাক্ষর । পেশাগত জীবনে তাঁর অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য যেমন লাভ করেছেন প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি, তেমনই অর্জন করেছেন রাষ্ট্রীয় পুরস্কারও। হাবিবুর রহমান তিনবার বাংলাদেশ পুলিশ পদকে (বিপিএম) এবং দুবার প্রেসিডেন্ট পুলিশ পদকে (পিপিএম) ভূষিত হন। এছাড়া তিনি তিনবার ‘আইজিপি গুড সার্ভিস ব্যাজ' লাভ করেন। বর্তমানে তিনি অ্যাডিশনাল ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ পদমর্যাদায় বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট ট্যুরিস্ট পুলিশের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বহুমুখী প্রতিভা ও অসাধারণ মানবিক গুণাবলির অধিকারী হাবিবুর রহমান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালন বিশেষ করে বাংলাদেশ পুলিশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস চর্চা ও সংকলনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন এবং তা সংরক্ষণের জন্য প্রতিষ্ঠা করেছেন বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। সম্পাদনা করেছেন মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের ভূমিকা, পিতা তুমি বাংলাদেশ এবং ঠার: বেদে জনগোষ্ঠীর ভাষা গ্রন্থসমূহ। বাংলাদেশের বেদে এবং হিজড়া সম্প্রদায়ের মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ও সমাজের মূলধারায় তাদের প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে তিনি পথিকৃৎ। তাঁর অতল মানবিক গুণের ফসল পুলিশ ব্লাড ব্যাংক, যা করোনা রোগীদের প্লাজমা এবং ডেঙ্গু রোগীদের প্লাটিলেট সরবরাহ করে কোভিড-১৯ ও ডেঙ্গু চিকিৎসায় প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখেছে।