দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বাউল সিরাজ উদ্দিন খান পাঠান বর্তমান সময়ে দেশের একজন শীর্ষস্থানীয় বাউল শিল্পী। শৈশবকাল থেকে আমি তাঁর নাম ও গানের সঙ্গে পরিচিত। আমাদের বৃহৎ ভাটি অঞ্চলের বাউলগানের আসরে কতবার তাঁর দরাজ কণ্ঠের গান শুনেছি, তা হিসাব করে বলা মুশকিল। তাঁর কিছু কিছু গানের চরণ অনেকের মতো আমারও মুখস্ত। তবে শুধু ভাটি অঞ্চল নয়, বাউলগায়ক হিসেবে তিনি এখন সারাদেশেই জনপ্রিয়। নেত্রকোনা ও আশপাশের এলাকায় তাঁর পরিচিতি ‘কানা সিরাজ’ নামে। সাংবাদিকতা পেশায় আসার পর বাউল সিরাজের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। মাঝেমধ্যে বিভিন্ন প্রয়োজনে তিনি আমার কাছে আসেন। আমি তাঁর মুখ থেকে বাউলতত্তে¡র আলোচনা শুনি। তাঁকে নিয়ে বিভিন্ন সময়ে পত্রপত্রিকায় প্রতিবেদন লিখেছি। কিন্তু দীর্ঘদিনের ইচ্ছে ছিল বৃহৎ কলেবরে কিছু একটা করার। একদিন কথা প্রসঙ্গে জানলাম, তাঁর রচিত গানের সংখ্যা ২৫। কিন্তু একটা গানও কোথাও লেখা নেই। সব মুখস্ত করে মনে রেখেছেন। এটি শোনার পর মনে হলো, গানগুলো অন্তত লিখে রাখা দরকার। তাই অনুরোধ করলাম কাউকে দিয়ে লিখে দেয়ার। তিনি তাঁর মেয়ে আল্পনাকে দিয়ে গানগুলো লেখার ব্যবস্থা করলেন। এরপর একদিন এসে গানের খাতাটা দিয়ে গেলেন আমাকে। আমি গানগুলো কম্পিউটারে কম্পোজ করে তাঁকে শোনালাম। তিনি প্রয়োজনীয় সংযোজন-বিয়োজন করলেন। আর তখনই তাঁর সংক্ষিপ্ত জীবনীসহ গানগুলো দিয়ে একটা ছোটখাটো বই করার চিন্তা মাথায় এলো। তাই আবারও সিরাজ বাউলকে নিয়ে বসলাম। টানা কয়েকদিন শুনলাম তাঁর জীবনের আদ্যোপান্ত। এভাবেই একসময় প্রস্তুত হয়ে গেল ‘বাউল সিরাজ উদ্দিন : জীবন ও গান’ শিরোনামের পাণ্ডুলিপিটি। এতে উল্লিখিত সাল, তারিখ, ঘটনার বর্ণনা ও ব্যক্তির নামগুলো সিরাজ উদ্দিন খান পাঠানের স্মৃতিচারণ থেকে নেওয়া। কোনো ভুল বা অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হলে আশা করি পাঠক ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন এবং পরবর্তী সংস্করণের জন্য পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করবেন।
Sanjoy Sarkar (Journalist) পৈত্রিক নিবাস খালিয়াজুরী উপজেলার বলরামপুর গ্রামে। বর্তমানে থাকেন নেত্রকোনা শহরের উকিলপাড়ায়। পেশায় সাংবাদিক ও উন্নয়নকর্মী। পাশাপাশি জড়িত আছেন উদীচী’র সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সঙ্গে। নিয়মিত ছড়া, শিশুতোষ গল্প ও ফিচার লেখেন। সংগ্রহ করেন লোকসাহিত্য ও লোকসংস্কৃতির বিলুপ্তপ্রায় উপাদান। প্রকাশিত বই ৬টি : নেত্রকোনার লোক-লোকান্তর (ফিচার), নেত্রকোনার লোকসাহিত্য ও সংস্কৃতি (লোকসাহিত্য), জানতো কে আর তুই যে হবি সোনামুখি সুঁই (ছড়া), ফাগুন দিনের আগুন ছড়া (ছড়া), পরী ও তার গুড্ডু (শিশুতোষ গল্প) ও রবীন্দ্রসঙ্গীতাচার্য শৈলজারঞ্জন মজুমদার (জীবনী)। ‘ছড়াছড়ি’ নামে একটি ছড়ার কাগজ সম্পাদনা করেন। পেয়েছেন বাউল রশিদ উদ্দিন পুরস্কার ২০১৭, জলসিঁড়ি সম্মাননা ২০১৭ ও এআরএফবি গ্রন্থাগার সম্মাননা-২০২০।