‘‘...একটি ভালো গল্প-আমার বিবেচনায়, একটি আট হাত বিশিষ্ট অক্টোপাসের মতো। এর ছয়টি হাত আঁকড়ে ধরে আমাদের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়সহ পাঁচটি শারিরিক ইন্দ্রিয়; তখন আমরা গল্পটিকে সম্মুখে অভিনীত হতে দেখি, শুনতে পাই তার চরিত্রদের আলাপচারিতা, ঘ্রাণ পাই তার দৃশ্যাবলীর,স্পর্শ করে উঠি ঘটনার এবড়োথেবড়ো বাঁকগুলো, শব্দপাঠের একটি বিচিত্র স্বাদের আমেজ লেগে থাকে জিহ্বায়, এবং ঘটনাপরম্পরায় ডুবতে ডুবতে ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়টি সজাগ হয়ে ওঠে-লেখক শেষ দৃশ্য অংকন করার আগেই কী হতে পারে তার উদ্দিষ্ট নির্বাণ-সেটি আন্দাজ করার এক অসর্তক প্রতিযোগীতায় নেমে পড়ি নিজেদের অজান্তেই। কিন্তু এত গেল ছয় হাতের হিসেব। অক্টোপাসই যদি, তবে বাকি দুটো হাত? বাকি দুটো হাত, যতক্ষণ সেই গল্পটি আমরা পড়ি, পরম মমতায় আদরের হাত বোলাতে থাকে আমাদের মাথায়, চুলে বিলি কাটতে কাটতে গুনগুন করে আবৃত্তি করে: গল্পের ওপারে কে?/ কে গল্পের ওপারে?/ আমি নই তো?/ অস্থি-মজ্জা-মাংস নিয়ে বিব্রত যে, গল্পের এপারে?...” উপরের উদ্ধৃতিটি ছোটগল্প বিষয়ে সাগর রহমানের একান্ত ভাবনা। কতিপয় দাঁড়কাকের সুইসাইড নোট ও অন্যান্য আরো ছয়টি গল্পের এই বিশেষ সংকলনে সাগর রহমান যেন নিজের গল্পভাবনাটিরই মূর্তায়ন ঘটিয়েছেন। প্রায় চেনা চরিত্র ও প্রতিবেশের অকস্মাৎ এবং অপ্রত্যাশিত ঘটনা পরম্পরা ও মোচড় এই লেখকের গল্প বয়নের অনন্য বৈশিষ্ট্য। নিজস্ব ভাষা ও শৈলীতে নির্মিত এ সংকলনের প্রতিটি গল্পই তাই দাবি করে স্বতন্ত্র সত্তার, নিজস্ব ঔজ্জ্বল্যে উদ্ভাসিত হয়ে কেড়ে নিতে চায় অখণ্ড মনোযোগের। গল্পগুলো বাংলা ছোটগল্পের জগতে বিশিষ্ট সংযোজনা হয়ে রইবে, এ আমাদের জোর বিশ্বাস।