‘আনন্দ সুদূর অমানিশা দুঃখের জলে ভেজা। বর্ষার বৃষ্টি ঝরা সন্ধ্যা নিদ্রাহীন রাতের কল্পনা।’ সামসুদ্দোহা কী অসাধারণ কাব্যকলা। পড়লে বিস্মিত হতে হয়। সাহিত্য মানসলোকের অভিব্যাক্তি। প্রত্যেক মানুষের মনের মধ্যেই সাহিত্যের আকুতি থাকে। অনেকে তা প্রকাশ করতে পারেন না, কেউ কেউ তা করতে পারেন। ভাষার শৈলী, বিদগ্ধতার গুণে সেই মানসলোকের কথা ভাস্বর হয়ে ওঠে। সাহিত্যিক তার মনের কথা এভাবে বলেন যা সকলের মনের কথা হয়ে ওঠে। এটাই সাহিত্যিকের অপার্থিব গুণ। সামসুদ্দোহা তার মনের কথা কবিতা, গল্প ও বিভিন্ন রচনায় পরহিতৈষনায় অভিব্যক্ত করেছেন। সামসুদ্দোহা তার কৈশরেই সাহিত্য সাধনায় মন দিয়েছিলেন। স্কুল কলেজের ছাত্র অবস্থায় লেখালেখি করেছেন। পরবর্তী সময়ে সামাজিক অবস্থা তার মনে নাড়া দেয়। সমাজের দরিদ্র-বঞ্চিত মানুষের দুঃখ দুদর্শা তাকে পীড়িত করে। এই নিপীড়িত মানুষের মুক্তির আকাঙ্খায় তিনি রাজনীতির সাথে যুক্ত হয়ে যান। যোগদেন ছাত্র ইউনিয়নে। কলেজ পর্যায়ে এসে রাজনীতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে নীলফামারী কলেজের ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। তখন থেকেই দেশের গণতান্ত্রিক এবং সাম্যবাদী ধারায় আন্দোলন সংগ্রামে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত হন। এক পর্যায়ে চলে আসেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে বাংলা সাহিত্যে ভর্তি হলেও সাহিত্য চর্চায় তিনি তখন মনোনিবেশ করতে পারেননি। আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্যেই তার সময় অতিবাহিত হয়। সামসুদ্দোহা ছিলেন গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল আন্দোলনের নিবেদিত রাজনৈতিক নেতা। উনসত্তরের গণঅভুত্থানের অন্যতম নায়কও ছিলেন তিনি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের একজন বিশিষ্ট সংগঠক সামসুদ্দোহা স্বাধীনতার পর দেশ গড়ার এবং সাম্যবাদ নির্মাণের লক্ষ্যে কমিউনিস্ট পার্টির সার্বক্ষণিক নেতা হিসেবে নিরলস কাজ করে গেছেন। সাহিত্য পাঠের প্রতি একনিষ্ঠ হলেও সামাজিক বাস্তবতায় লেখা তেমন হয়ে ওঠেনি। এক সময় সক্রিয় রাজনীতি থেকে বিরত হয়ে তিনি রাজনৈতিক চিন্তা-ভাবনা এবং সাহিত্য ভাবনায় মনোনিবেশ করেন। রচনা করতে থাকেন একের পর এর কবিতা-গল্প-মননশীল প্রবন্ধ। ইতিপূর্বে তার চারটি বই ইতিহাসের অল্প কথা, মুক্ত আকাশে উড়ন্ত ভাবনা, ত্রিধারা, করোনা কাব্য প্রকাশিত হয়েছে। বর্তমান বইটিও কবিতা ও প্রবন্ধে সমৃদ্ধ হয়ে প্রকাশিত হচ্ছে। এ বইয়ের কবিতা এবং প্রবন্ধগুলোতে সামাজিক বাস্তবতা এবং সুদূরপ্রসারী দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ আছে। আশাকরি বইটি পাঠকপ্রিয় হয়ে উঠবে।