মাইসিনির রাজা আগামেমননের কন্যা এলেকত্রা। পিতার মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের পর রাজপ্রাসাদে প্রায়-বন্দি এক রাজকন্যা সে। পিতা আগামেমনন ট্রয়যুদ্ধের প্রধান গ্রিক সেনাপতি এবং মাইসিনির রাজা; যুদ্ধে সফল অভিযান শেষে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করামাত্র স্ত্রী ক্লিতেমনেন্দ্রা ও তার প্রেমিক এজিসথাসের ষড়যন্ত্রে নির্মমভাবে নিহত হন। তাঁর নির্বাসিত শিশুপুত্র ওরেন্তিস সাবালক হয়ে মাইসিনি ফিরে আসে এবং পিতৃহত্যার উপযুক্ত প্রতিশোধ গ্রহণ করে। ওডেসী মহাকাব্যের এই বহুল প্রচলিত মিথকে খ্রিষ্টপূর্ব পঞ্চম শতকের নাট্যকার সোফোক্লিস বয়ান করেছেন আগামেমনন-কন্যা এলেকত্রার দৃষ্টিকোণ থেকে। এলেকত্রা রাজপ্রাসাদেই থাকে, কিন্তু জীবন কাটায় অসহনীয় যন্ত্রণায়। পিতার খুনি এজিসথাসের সঙ্গে মায়ের শয্যাযাপন, একমাত্র ভাইয়ের নির্বাসন আর তার জন্য অপেক্ষা, বোন ক্রিসোথেমিসের দোদুল্যমানতা, মায়ের নিপীড়ন-নির্যাতন, আত্মদহন আর আহাজারিতে দিন কাটে তার। মাইসিনি প্রাসাদে তার মায়ের সকল অপরাধের সাক্ষী এলেকত্রা। কখনোই পিতৃশোক কাটিয়ে উঠতে পারে না সে, মায়ের ভর্ৎসনা আর এজিসথাসের হুমকি উপেক্ষা করে প্রতিবাদমুখর বিলাপ চালিয়ে যায়। তার দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে একদিন নির্বাসিত ওরেন্তিস দেশে ফিরে আসে ছদ্মবেশে, সুকৌশলে পিতৃহত্যার রক্তাক্ত প্রতিশোধ নেয়। এলেকত্রার গভীর যন্ত্রণা রূপান্তরিত হয় ভয়ংকর হিংস্রতায়। তার আচরণে ন্যায়-প্রতিষ্ঠার প্রয়াস ছাপিয়ে মূর্ত হয় এক বন্য উন্মত্ততা। খ্রিষ্টপূর্ব প্রথম শতকের বিখ্যাত রোমান রাষ্ট্রনায়ক ও লেখক সিসেরো এলেকত্রাকে মাস্টারপিস অভিহিত করেছেন। আধুনিককালের সমালোচকবৃন্দও একে উৎকৃষ্ট ট্র্যাজেডির মর্যাদা দিয়েছেন। কিংস কলেজ, লন্ডনের হেলেনিক গ্রিক ইতিহাস ও সাহিত্যের নন্দিত অধ্যাপক এডিথ হল মনে করেন, চরম নিপীড়ন ও নিষ্ঠুরতার শিকার এলেকত্রা মনোবৈকল্যের তীর-ঘেঁষা এক আপসহীন তরুণী যার বীরত্বের দাপট পশ্চিমা রঙ্গমঞ্চে নজিরবিহীন।