নিঃসন্দেহে বঙ্গবন্ধুর বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন ও দর্শনের সবচেয়ে উপেক্ষিত দিকটির ওপর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ এটি। কেন গুরুত্বপূর্ণ? গুরুত্বপূর্ণ এ কারণে যে, বঙ্গবন্ধু সারাজীবন ধরে জীবনপণ করে যে স্বপ্নের পিছু ধাওয়া করেছেন তারই বাস্তবরূপ ছিল দ্বিতীয় বিপ্লব। প্রথম বিপ্লব তাঁকে জাতির পিতার অনন্য আসনে অধিষ্ঠিত করেছে। সেখানেই তিনি থেমে যেতে পারতেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু থামেননি। তাঁর স্বপ্নই তাঁকে থামতে দেয়নি। কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের রূপরেখা হিসেবে তিনি দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। তখনই সবচেয়ে কঠিন আঘাতটি আসে তাঁর ওপর। যা ছিল পাকিস্তানি দানবদেরও কল্পনাতীত... বাঙালির ইতিহাসের ভয়াবহতম সেই বর্বরতাটিই ঘটিয়ে ফেলে তাদের এদেশীয় অনুচররা। প্রশ্ন হলো, ঘাতকদের কেন এত আক্রোশ? কোন স্বার্থে আঘাত লেগেছিল তাদের? অভাবনীয় যে পিতৃঘাতী নারীঘাতী শিশুঘাতী এমন একটি বর্বরতা সংঘটিত হওয়ার প্রায় অর্ধশতাব্দী পরেও সেই সব প্রশ্নের উত্তর সন্ধানের যথোচিত চেষ্টা হয়নি বললেই চলে। বরং, এমনকি তাঁর ভক্ত-অনুরকরাও অদ্ভুত এক অস্বস্তি নিয়ে বরাবরই দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচির সঙ্গে সপরিবারে জাতির পিতাকে হত্যার অনিবার্য যোগসূত্রটিকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। করছেন। এ গ্রন্থটিতে প্রথমবারের মতো কোনো প্রকার জড়তা ছাড়াই সম্ভাব্য সকল দৃষ্টিকোণ থেকে সরাসরি অনুসন্ধানী আলো ফেলা হয়েছে বাঙালির ইতিহাসের অস্বস্তিকর সেই অন্ধকারে। উত্তর খোঁজা হয়েছে দ্বিতীয় বিপ্লব সম্পর্কিত উক্ত-অনুক্ত সকল প্রশ্নের। বস্তুত পঁচাত্তর ট্র্যাজেডিপূর্ব ও পরবর্তী সময়ে সমাজ পরিবর্তনে বঙ্গবন্ধুর দর্শন ও দ্বিতীয় বিপ্লব নিয়ে লেখা সেরা লেখকদের সেরা রচনাগুলোর একটি সুনির্বাচিত ও সুবিন্যস্ত সংকলন এটি। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ও রাজনৈতিক দর্শন নিয়ে যারা কাজ করবেন তাদের জন্য তো বটেই, এমনকি বঙ্গবন্ধুকে যারা বুঝতে চান তাঁর সমগ্রতা নিয়ে তাদেরও অবশ্যপাঠ্য এ গ্রন্থটি।
মিনার মনসুরের লেখালেখির শুরু সত্তরের দ্বিতীয়ার্ধে। মূলত কবি। জন্ম ২০ জুলাই ১৯৬০ সালে চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার বরলিয়া গ্রামে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগ থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে কৃতিত্বের সঙ্গে বিএ (সম্মান) এবং এমএ পাস করেছেন যথাক্রমে ১৯৮৩ ও ১৯৮৪ সালে। বর্তমানে দৈনিক ইত্তেফাকের সহকারী সম্পাদক হিসেবে কর্মরত। প্রকাশিত গ্রন্থ কবিতা: ‘এই অবরুদ্ধ মানচিত্রে’ (১৯৮৩); ‘অনন্তের দিনরাত্রি’ (১৯৮৬); ‘অবিনশ্বর মানুষ’ (১৯৮৯); ‘আমার আকাশ’ (১৯৯১); ‘জলের অতিথি’ (১৯৯৪); ‘কবিতাসংগ্রহ’ (২০০১) এবং ‘মা এখন থেমে যাওয়া নদী’ (২০১২); ‘মিনার মনসুরের দ্রোহের কবিতা’ (২০১৩)। ছড়া: ‘হেলাফেলার ছড়া’ (১৯৮৯)। গবেষণা: ‘হাসান হাফিজুর রহমান: বিমুখ প্রান্তরে নিঃসঙ্গ বাতিঘর’, (বাংলা একাডেমী, ১৯৯৯) এবং ‘ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত: জীবন ও কর্ম’, (বাংলা একাডেমী, ২০১২)। প্রবন্ধ: ‘শোষণমুক্তির লড়াইয়ে মধ্যবিত্তের ভূমিকা’, (১৯৮৭) এবং ‘কবি ও কবিতার সংগ্রাম’ (২০১৩)। জীবনী: ‘ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত’, (বাংলা একাডেমী, ১৯৯৭)। সম্পাদিত গ্রন্থ ‘শেখ মুজিব একটি লাল গোলাপ’ (প্রথম প্রকাশ: ১৯৭৯)। ‘শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্মারকগ্রন্থ’ (১৯৯৪); ‘শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের আত্মকথা’ (১৯৯৫); ‘মুক্তিযুদ্ধের উপেক্ষিত বীর যোদ্ধারা’ (২০০৮) এবং ‘বাংলাদেশের সমাজ, রাজনীতি ও উন্নয়ন: বিশিষ্টজনের ভাবনা’ (২০১০)।