"প্রেমের কবিতা" বইটির 'কিছু কথা' অংশ থেকে নেয়াঃ পথিবীর যাবতীয় কবিতার আদিমতম প্রেরণা নারী, মাটি, প্রকৃতি। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতায় প্রেমের এই ষোলকলা পূর্ণ করেও যেন মনে হয়, সুনীল প্রেমের কবিতার প্রধান ভূমিকা নারীর এবং সেই নারীর নাম, নীরা। ‘বনলতা সেন' কিংবা ‘অরুণিমা সান্যালের' মতাে নীরা-ও কী স্মৃতিমেদুর কোন কাল্পনিক প্রেমিকার নাম? নাকি কবিতার নীরা একটু অন্যরকমের, রক্ত-মাংসের এক জীবন্ত প্রতিমা? প্রেম, প্রেমের কবিতায় নীরা এ প্রসঙ্গে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়-কে বহুবার প্রশ্ন করা হয়েছে। তিনি সর্বদা যে উত্তর দিয়েছেন, তাতে রহস্য বেড়েছে মাত্র। তাঁর উত্তর ছিল,—এ প্রশ্নের উত্তর দেবাে না।' নারীকে কেন্দ্র করে মূলতঃ একজন নারীকে কেন্দ্র করে নানা সময়ে ভিন্ন ভিন্ন মুহূর্তে যে সমস্ত প্রেমের কবিতা তিনি এ অব্দি লিখছেন, কবিতা হিসেবেও তা অসাধারণ পৃথিবীর আর কোন কবি একটি মাত্র নাম (যে প্রেমের নাম নীরা) ব্যবহার করে এত কবিতা লিখেছেন বলে জানা যায় না। সেই নীরাকে নিয়ে সমুদয় কবিতা এবং কবির আরাে আরাে প্রেমের কবিতায় বাছাই এই—“সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রেমের কবিতা” এক অসামান্য সংকলণ।
বিশ শতকের শেষাংশে জন্ম নেওয়া সব্যসাচী একজন বাঙ্গালি সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, সম্পাদক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট- এমন বহু পরিচয়ে সাহিত্যের অগণিত ক্ষেত্রে তিনি রেখেছেন তাঁর সুকুমার ছাপ। নীললোহিত, সনাতন পাঠক কিংবা কখনো নীল উপাধ্যায় ছদ্মনামে প্রকাশিত হয়েছে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর বই সমূহ। অধুনা বাংলাদেশের মাদারীপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন ৭ সেপ্টেম্বর ১৯৩৪। কিন্তু মাত্র চার বছর বয়সেই স্কুল শিক্ষক বাবার হাত ধরে সপরিবারে পাড়ি দিয়েছিলেন কলকাতায়। ১৯৫৩ সালে সাহিত্যে বিচরণ শুরু হয় কৃত্তিবাস নামের কাব্যপত্রিকার সম্পাদনার মধ্য দিয়ে। ১৯৫৮ সালে প্রকাশ পায় প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘একা এবং কয়েকজন’। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর বই মানেই পাঠকের কাছে আধুনিকতা আর রোমান্টিকতার মেলবন্ধন। তাঁর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কবিতার বই হলো ‘আমি কী রকম ভাবে বেঁচে আছি’, ‘যুগলবন্দী’ (শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে), ‘হঠাৎ নীরার জন্য’, ‘রাত্রির রঁদেভূ’ ইত্যাদি। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বই সমগ্র ‘পূর্ব-পশ্চিম’, ‘সেইসময়’ এবং ‘প্রথম আলো’ তাঁকে এপার, ওপার আর সারাবিশ্বের বাঙালির কাছে করেছে স্মরণীয়। ‘কাকাবাবু-সন্তু’ জুটির গোয়েন্দা সিরিজ শিশুসাহিত্যে তাকে এনে দিয়েছিলো অনন্য পাঠকপ্রিয়তা। তাঁরই উপন্যাস অবলম্বনে কিংবদন্তী পরিচালক সত্যজিৎ রায় পরিচালনা করেছিলেন ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ এবং ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’র মতো চলচ্চিত্র। পাঠক সমাদৃত ভ্রমণকাহিনী ‘ছবির দেশে কবিতার দেশে’ কিংবা আত্মজীবনীমূলক ‘অর্ধেক জীবন বই’তে সাহিত্যগুণে তুলে ধরেছিলেন নিজেরই জীবনের গল্প। ২০১২ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত চার দশকে তিনি পরিচিত ছিলেন জীবনানন্দ পরবর্তী পর্যায়ের অন্যতম প্রধান কবি এবং বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব হিসেবে।