বেদের কল্পিত স্বর্ণযুগে অনাহারের অভিজ্ঞতা ও আতম যথেষ্টই ছিল। মঞ্চে সুক্তে তাই অন্নের এত প্রার্থনা, এত প্রশস্তি। অম্লের গন্ধযুক্ত খাদ্য যেন পাই, অন্নের। গৃহ যেন পাই।' সেই প্রার্থনা ও প্রশস্তি আজও আছে, খাদ্য নিরাপত্তার বিভিন্ন প্রকল্পের নিহিত বয়ানে। "ছিয়াত্তরের মন্বন্তর'-এ বাংলা ও বিহারে এক কোটি তিরিশ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়। 'পঞ্চাশের মন্বন্তর'-এ খুব কম হলেও, মারা যান বাংলার পঁয়তিরিশ লক্ষ প্রান্তিক হিন্দু ও মুসলমান। রাষ্ট্র ও বেনিয়াতন্ত্র এই গণহত্যার মূলে। পঞ্চাশের সমকালীন বিভিন্ন বৃত্তের মানুষের স্মৃতিচারণা, সাহিত্য ও শিল্পকর্ম, সংবাদপত্রের প্রতিবেদন, দলীয় কর্মসূচি, কমিশনের রিপোর্ট এবং পরবর্তী সময়ের গবেষণায় ধরা আছে সেদিনের ইতিহাস, মন্বন্তরের কার্যকারণ বিশ্লেষণ। কিন্তু সে-সব বিলোপের পথে। অনাহারে নিহত পূর্বজদের কথা এই সময়ে আমরা অনেকটাই ভুলে যেতে পেরেছি। সেই বিলোপ ও বিস্মরণের বিরুদ্ধে ক্ষুদ্র সামর্থ্যো দাঁড়াতে চেয়েছে এই বই। পঞ্চাশের মন্বন্তরের সত্তর বছর পর, আজ, প্রান্তজনের মৃত্যুপ্রারিত সেই বেদনার দিনগুলি খুঁড়ে খুঁড়ে জাগিয়ে তোলার কথা ভাবা গেছে আরও একটা কারণে যে, ক্ষুধা এখনও তীব্র, খাদ্যসংস্থান অপ্রতুল, অবিবেকী। কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন, 'অন্ন আলো অন্ন জ্যোতি সর্বধর্মসার/ অন্ন আদি অগ্ন অন্ত অম্লই ওভার / সে অন্নে যে বিষ দেখ কিংবা তাকে কাড়ে। ধ্বংস করো ধ্বংস করো ধ্বংস করো তারে।