পৃথিবীতে সবচেয়ে অভাব কিসের? অনেকে বলবে টাকা পয়সার, অনেকে বলবে সুখ—শান্তির, নিরাপত্তার কথাও বলবে অনেকে। কিন্তু ভালোবাসা হলো সেই ওষুধ যা এইসব অভাবকে দূর করে দেয়। মায়ের প্রতি সন্তানের, ভাইয়ের প্রতি বোনের, মানুষের প্রতি মানুষের, প্রকৃতি আর পশুর প্রতি মানুষের কতো রকম ভালোবাসাই না আছে। কিন্তু আমি এখানে যে ভালোবাসার কথা বলছি তার নাম নারী—পুরুষের ভালোবাসা। প্রেমও বলা যায় একে। এরমধ্যে কামগন্ধ আছে আবার নিকষিত হেমও আছে। নারী—পুরুষের যে ভালোবাসা, প্রেম, তার আকর্ষণেরও তো রয়েছে বহু রঙ রূপ। এই বইতেই আমি ক্যারল এ্যান ডাফির একটি কবিতা সংযুক্ত করেছি। এই নারী কিন্তু পৃথিবীর প্রাচীনতম নারী কবি সাফো’র মতোই সমকামী ছিলেন। যদিও তার প্রেমের কবিতা যৌনতা তাড়িত নয় বা বিশেষ লিঙ্গের প্রতি পক্ষপাত নয়। মায়া এঞ্জেলো, মার্গারেট এট্যুউড, ন্যালি সাক্স, ডরোথি পার্কার, শিম্বোরাস্কা থেকে অতি সাম্প্রতিক কালের নামকরা কবি রূপি কৌর, ল্যাঙ লিয়েভ প্রমুখ নারী কবিতার কবিতা ঠাঁই পেয়েছে এ সংকলনে। নারী এবং তার কবিতার প্রতি আমার আগ্রহ বরাবরই পুরুষ কবিদের চেয়ে বেশি। আর প্রেম ভালোবাসার প্রশ্নে পুরুষের চেয়ে নারীর দৃষ্টিভঙ্গি আমি দেখতে চাই বিশেষভাবেই। নোবেল পুরস্কার বিজয়ী একাধিক কবিও ঠাঁই পেয়েছেন এ কাব্য সংকলনে। প্রেম—ভালোবাসার ক্ষেত্রে নোবেল বিজয়ী কবিরাই বা কেন পিছিয়ে থাকবেন। পাবলো নেরুদা এদেশে কবি হিসেবে আগেই পরিচিত, তুলনায় হ্যারল্ড পিন্টার অতোটা নয় আর লুইজ গ্লু্যক এই গত বছর নোবেল পুরস্কার পেলেন। ডেরেক ওয়ালকট, চেস্লাভ মিলোস, অডেসিয়াস এলিটিস, সিমাস হিনি শুধু নোবেল বিজয়ী কবি নন, তারা আমার প্রিয় কবিও। কিন্তু আফসোসের কথা হলো ৫০ জন কবির ৫০টি কবিতা আমাকে বাছতে হয়েছে বইয়ের আকারের কথা ভেবে। নইলেই এইসব কবিদের দশ—বারোটি প্রিয় কবিতা অনুবাদ করতে পারলে আমার বিমল আনন্দই হতো। থাক, সে আনন্দ না হয় অন্য কখনো নেয়া যাবে। নিকানোর পাররা, হোর্হে লুই বোর্হেস, মাহমুদ দারবিশ প্রমুখকে ছাড়া তো কোন আধুনিক কাব্য সংকলনই আমি মানতে রাজি না। তাদেরও কবিতা যোগ হলো এইখানে। এই সংকলনের কবিতা নির্বাচন ও অনুবাদের ক্ষেত্রে আমি সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিয়েছি বৈচিত্রকে। প্রেম—ভালোবাসা যে কতো বৈচিত্রময় হতে পারে তার একটা নমুনা হয়ে থাকবে এই বই। ‘ভালোবাসা হলো ইলাস্টিক’, ‘মিনিস্কার্ট পরা এক মেয়ে বাইবেল পড়ছে আমার জানালার বাইরে’, ‘ভালোবাসা, ছোট্ট ক্যাফেটির মতো’, ‘আমার বৌকে’, ‘কমলা বালিকা’, ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি সকাল দশটায় এবং এগারোটায়...’ ইত্যাদি শিরোনামই বলে দেয় এই বইয়ের ভালোবাসার কতো বৈচিত্রই না আছে। এই বইটা পাঠকের হতে পারে। যে ভালোবাসে তারও হতে পারে। তবে সবচেয়ে বেশি করে এই বইটা আমার বউয়ের। তার একমাত্র বিবাহ বার্ষিকীতে মানে আমাদের বিয়ে বার্ষিকীতে বইটা ছাপা হলো উপহার হিসেবেই। ভালোবাসার উপহার পাঠকও উপভোগ করুক। ভালোবাসা মুম রহমান
মুম রহমান। পুরাে নাম মুহম্মদ মজিবুর রহমান। জন্ম ২৭ মার্চ, ১৯৭১ সাল। বাবা : মাে. মুসলেহ উদ্দিন। মা : তাহেরুন্নেসা। দেশে এবং দেশের বাইরে উল্লেখযােগ্য পত্র-পত্রিকায় অসংখ্য গল্প-উপন্যাস-নাটক-প্রবন্ধ-অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে। সম্প্রতি ব্যস্ত টিভি নাটক আর বিজ্ঞাপনের স্ক্রিপ্ট নিয়ে। প্রথম রচিত ও অভিনীত টিভি নাটক এক চিলতে আকাশ ১৯৮৮ সালে বিটিভিতে প্রচারিত । কাজ করেছেন মঞ্চ ও বেতারে। নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ থেকে নাট্য রচনায় এমএ । পত্র-পত্রিকা ও বিজ্ঞাপনী সংস্থায়ও কর্মরত ছিলেন । বর্তমানে ইংরেজি মাধ্যমের এক স্কুলে নাট্যশিক্ষক হিসাবে কর্মরত। সাকিরা পারভীনকে নিয়ে তৈরি করেছেন আর্ট জোন নামের সংস্থা; যেখানে নাট্যরচনা, আবৃত্তি, বনসাই তৈরির মতাে বিষয়ে ভিন্ন ধারার প্রশিক্ষণ কোর্স পরিচালনা করেন তিনি।